বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০
দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন তার রানিংমেট হিসেবে কামাল হ্যারিসের নাম ঘোষণা করার পর বাইডেনের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কামালা হ্যারিস একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা, ইমিগ্র্যান্ট মা-বাবার সন্তান। উঠে এসেছেন তৃণমূল রাজনীতি থেকে। ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর নির্বাচিত হয়ে সবাইকে চমকে দেন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজ প্রার্থীতার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রথমেই দলীয় প্রাইমারী থেকে ছিটকে পড়েন। গত বুধবার জো বাইডেন কামালাকে তার রানিং মেট করার কথা ঘোষণা করেন। কামালাকে বাইডেন তার রানিংমেট হিসেবে ঘোষণা করার পর অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভেবেছিলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাকে রানিংমেট করার কারণে বাইডেনের জনপ্রিয়তায় হয়ত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। একাধিক সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা আরও জোরালো ভাবে সমর্থন করছেন বাইডেনকে। প্রায় সবগুলো সংস্থার জরিপে “বাইডেন-হ্যারিস” জুটি “ট্রাম্প-পেন্স” জুটির চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ১০পার্সেন্ট পয়েন্টের ব্যবধানে। চরম দক্ষিণপন্থী ও রিপাবলিকানদেও গোড়া সমর্থক বলে পরিচিত ফক্স নিউজ চ্যানেলের জরিপেও “বাইডেন-হ্যারিস” জুটি ৭ পার্সেন্ট পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
সিএনএনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হ্যারি এনটেন এক বিশ্লেষনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গত ৮০ বছরে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্যে যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছেন তাদের মাঝে ট্রাম্পের অবস্থা অতিমাত্রায় শোচনীয়।
প্রত্যেকটি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে ডেমক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ১০ পার্সেন্টের ব্যবধানে। এসব জরিপগুলো থেকে ভোটারদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিলে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টটেটিভ পদে কোন দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিবেন? হাইজের জরিপেও দেখা যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীরা ৮ পার্সেন্ট পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। কামালা হ্যারিসকে জো বাইডেন রানিং মেট হিসেবে ঘোষণা করার পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কামালাকে অতি নোংরা ভাষায় আক্রমন করেন। যেটা হিতে বিপরীত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য। সিনেট নির্বাচনেও রিপাবলিকান প্রার্থীরা রয়েছেন মহা আতঙ্কে। অনেক রাজনৈতিক বোদ্ধা বলছেন সিনেটেও এবার রিপাবলিকানরা সংস্থা গরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছে। সেখানে ১৯৮৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোন নির্বাচনে সিনেটর ম্যাককনেল কখনও হারেননি। কিন্তু এবার নির্বাচনে সেখানে সম্ভবত হারতে যাচ্ছেন সিনেটর ম্যাককনেল। জরিপে দেখা যাচ্ছে কেন্টাকিতে সিনেটে মেজরিটি লিডার ম্যাককনেল তার ডেমক্র্যাট দলীয় চ্যালেঞ্জার এমি ম্যাকগান্টের চেয়ে ৫ পার্সেন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন। এই সমীক্ষাটি প্রকাশ করেছে পলিটিকো।
কামালাকে রানিং মেট ঘোষণা করার পরপরই ফ্লোরিডায় ঘটেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। যেমনটা অতীতে কখনও হয়নি। ফ্লোরিডা হচ্ছে একটি ব্যাটল গ্রাউন্ড স্টেট। এই ব্যাটল গ্রাউন্ড স্টেট ফেøারিডা ছাড়া অতীতে কোন রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা ফ্লোরিডাতে জয়ী না হয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার। কামালাকে রানিংমেট ঘোষণা করার সাথে সাথে সাউথ ফ্লোরিডার জ্যামাইকান কমিউনিটি বিদ্যু গতিতে একত্রিত হয়ে হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠলেন, উল্লাসে রাস্তায় নেমে আসলেন, শুরু করলেন নৃত্য। এ প্রসঙ্গে ফ্লোরিডা স্টেট কংগ্রেসওম্যান আনিতা আম্প্রয় বলেন, সবাই যেন নতুন করে শক্তি ফিরে পেল-একসাথে সবধরণের কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা রাস্তায় নেমে এলো, সবাই যেন আনন্দ জোয়ারে সাঁতার কাটছেন। তিনি বলেন, আগষ্ট মাস, সাউথ ফ্লোরিডায় তাপমাত্রা ছিলো ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট, এত উত্তপ্ত আবহাওয়া হর্ষধ্বনি দেয়া যায়না। তারপর লোকজন তাই করল। আনিতা বলেন, আপনি কি জানেন লোকজনকে থামানো যাচ্ছে না। এছাড়া হেইশিয়ান কমিউনিটি, বাহামাস, ত্রিনিদাদ, গায়েনা ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কমিউনিটিতে বহে যাচ্ছে আনন্দ জোয়ার। সাউথ ফ্লোরিডায় বাইডেনের একজন প্রধান উপদেষ্টা কারেন এন্ড্রি একজন আমেরিকান হেইশিয়ান। কারেন বলেন, কামালাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আমাদের শক্তি ও সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকাংশে। কারেন এন্ড্রি বলেন, কামালার নাম ঘোষণা করার পরপরই জ্যামাইকান আমেরিকানদের একের পর এক ফোন কলে আমার কান জ্বালাপালা। তিনি বলেন, একই সাথে আমি টেলিফোন পেয়েছি হেইশিয়ান, ত্রিনিদাদ বারবাডোস এবং বাহামা কমিউনিটি থেকে।
এডি এডওয়ার্ড হচ্ছেন ক্যারাবিয়ান রিডিমস রেডিও হোস্ট। তিনি বলেন, কামালা হ্যারিস ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের জন্যে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফেøারিডা ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর জুলি স্লিথ বলেন, ২০১৮ সালে তার নিজস্ব সমীক্ষায় দেখা গেছে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে ১ লক্ষ ১৫ হাজার হেইশিয়ান ভোটার জন্মগ্রহণ করেছে হেইতিতে। এই ভোটগুলো ডেমক্র্যাট প্রার্থীর বাক্সে ঢুকবে। এছাড়া ৯১ হাজার রয়েছে জ্যামাইকান আমেরিকানদের ভোট। দ্যা ননপ্রফিট মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের আনুমানিক হিসেবে কমপক্ষে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার জ্যামাইকান রয়েছে ফ্লোরিডায়। একই সাথে ৫ লক্ষ ২৮ হাজার হেইশিয়ান আমেরিকান, ৫৬ হাজার ত্রিনিদাদীয়ান, ৭ হাজার বারবাডিয়ান রয়েছে ফ্লোরিডায়। এই ভোটগুলোর বেশীর ভাগ নিয়ে নিয়ে যাবে “বাইডেন-হ্যারিস” জুটি।
এছাড়া গত সপ্তাহে বাইডেন তার রানিংমেটের নাম ঘোষণার একদিন পর এবিসি নিউজ ও আই পিওএস জরিপে দেখা যাচ্ছে ৪৭ পার্সেন্ট ভোটার বলেছেন রানিংমেট হিসেবে কামালা চমৎকার বা ভাল হবেন। মাত্র ২৯ পার্সেন্ট বলেছেন খুব ভাল হবে না। পলিটিকো ও মনিং কনসাল্টের জরিপে বলা হয়েছে ৫১ পার্সেন্ট ভোটার বলেছেন রানিংমেট হিসেবে কামালা চমৎকার। এছাড়া গত সোমবার সিএনএন প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, এ মুহূর্তে ৫১পার্সেন্ট রেজিস্টার্ড ভোটার বলেছেন তারা বাইডেনকে ভোট দিবেন এবং ৪২ পার্সেন্ট ভোটার বলেছেন তারা ট্রাম্পকে ভোট দিবেন। সিএনএন সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে।
Posted ৭:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh