| বুধবার, ০৩ জুন ২০২০
কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, এই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ‘শান্তিপূর্ণ, টেকসই এবং কার্যকর পদক্ষেপে’ পরিণত হতে পারে। ‘সত্যিকার সুযোগ’ আনতে এই মুহূর্তকে ‘সত্যিকার টার্নিং পয়েন্টে’ পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি। সোমবার (১ জুন) অনলাইন প্রকাশনার প্লাটফর্ম মিডিয়াম-এ প্রকাশিত এক ব্লগ পোস্টে বিক্ষোভে সহিংস আচরণকারীদের নিন্দা জানান মার্কিন ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
‘আশা ও পরিবর্তনের’ অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৮ সালে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন বারাক ওবামা। দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও মার্কিন সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত বর্ণবাদী বৈষম্য থেকে দেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হননি প্রেসিডেন্ট ওবামা। তবে শেকড়ের আফ্রিকান চৈতন্য থেকে বিচ্যুতও হননি কখনও। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লসটনের কৃষ্ণাঙ্গ গির্জায় শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারীর হামলার পর মার্কিন কৌতুকাভিনেতা মার্ক ম্যারনের জনপ্রিয় শো ‘ডব্লিউটিএফ’তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা মন্তব্য করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনও বর্ণবাদের অভিশাপমুক্ত হতে পারেনি। এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বর্ণবাদ এখনও দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে।’ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিজের বিদায়ী ভাষণে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য যে তিনটি হুমকির কথা তিনি বলেন, তার একটি বর্ণবাদ। অপর দুটি অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভক্তি।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিস শহরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে নতুন আশা দেখতে পাওয়ার কথা জানান সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ব্লগ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ (বিক্ষোভে) অংশগ্রহণকারী শান্তিপূর্ণ, সাহসী, দায়িত্বশীল এবং উৎসাহব্যঞ্জক। তারা আমাদের শ্রদ্ধা এবং সমর্থনের দাবিদার, নিন্দার নয়।’ ব্লগ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘অন্যদিকে সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র একটি অংশ যারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় অংশ নিচ্ছেন, তা সে সত্যিকার ক্ষোভ থেকে হোক কিংবা নিছক সুবিধাবাদের কারণে হোক তারা নিরীহ মানুষদের ঝুঁকিতে ফেলছেন।’
বারাক ওবামা জোর দিয়ে বলেন বিক্ষোভের জেরে এমন নীতি তৈরি হতে পারে যাতে করে জর্জ ফ্লয়েডের মতো আরও মৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে। তিনি লেখেন, ‘আমি শুনেছি কেউ কেউ বলছেন, আমাদের অপরাধ বিচার ব্যবস্থায় বর্ণবাদী বৈষম্যের পুনরাবৃত্ত সমস্যায় প্রমাণিত হয় যে কেবলমাত্র বিক্ষোভ এবং সরাসরি ব্যবস্থা নিয়েই এর বদল আনা সম্ভব আর ভোট এবং নির্বাচনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কেবল সময়ের অপচয়। আমি এর সঙ্গে আর ভিন্নমত পোষণ করতে পারছি না।’ ওবামা লেখেন, ‘তারপরেও নির্দিষ্ট আইন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চায় আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হয়- আর গণতন্ত্রে তা কেবলমাত্র সম্ভব আমাদের দাবির প্রতি দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচনের মাধ্যমে।’
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে মন্তব্য করে ওবামা লেখেন, ‘যদি সামনে এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখতে পারি, ন্যায্য ক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপে পরিণত করতে পারি তাহলে এই মুহূর্ত আমাদের জাতীয় সর্বোচ্চ মতাদর্শকে টিকিয়ে রাখার সত্যিকার টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হতে পারে।’
Posted ১১:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh