শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বিশেষ সম্পাদকীয়

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জাতির বাতিঘর

  |   বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জাতির বাতিঘর

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে নবজাগরণের সৃষ্টি করেছে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। তারা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার হরণ ও নিপীড়ন নির্যাতন করে বেশি দিন দাবিয়ে রাখা যায় না। স্বৈরশাসক যতো শক্তিশালীই হোক না কেন কাঁপিয়ে দেয়া যায় তার ভীত। দেশের রাজনীতিকরা যা পারেননি শিক্ষার্থীরা তা পেরেছেন। ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আত্মোৎসর্গ করে প্রমাণ করেছেন তাদের দেশপ্রেম। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন -সংগ্রাম এখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে যারা এতোদিন ছিলেন হতাশায় এবং অন্ধকারে, তাদেরকে আজ বাতিঘরের সন্ধান দিয়েছেন তারা।

কোচিং করে তাদেরকে এ আন্দোলনের সবক দেয়নি কেউ। কাঁটার মুখ যেমন চুখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয়না। শিক্ষার্থীরা তেমনি বিবেকের তাড়নায় প্রস্তুত করেছেন নিজেদেরকে। সুদূর প্রসারী একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত ভীতি অনেকদিন ধরেই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাদের আকাশসম স্বপ্ন ও আকাঙ্খাকে। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা, কথা বলা, চিন্তার বিকাশ ঘটানোর সব কপাট রুদ্ধ করে দিয়ে জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা সময় মতো আঁচ করতে পেরেছেন তারা। মুক্তিযুদ্ধের পরের ততৃীয় প্রজন্মকে রাজাকার বলে গালি দেয়ার মতো ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে বুমেরাং।

শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদায় ভীষনভাবে আঘাত করেছে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ শব্দটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালা ও স্বাধীনতা বিরোধী বয়ানকারীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন নির্ভিক সন্তানেরা। জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র শিক্ষার্থীরা রুখে দিয়েছেন সঠিক সময়ে। অসাম্যের বিস্তারবোধ, ন্যায় ও সত্যের সংগ্রামে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন। ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে নজিরবিহিন সাহসী আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। নির্ভিক, নির্মোহ ও স্বত:স্ফূর্ত এ সংগ্রামে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পাশাপাশি থেকে অংশ নিয়েছে মিছিলে। বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দিয়ে শহীদ হয়েছেন আবু সাঈদ।

ভারতীয় উপমহাদেশে শতাব্দীকালে নজির নেই এমন আন্দোলন, সংগ্রাম ও প্রাণহানির। পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলন, ‘৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন ও ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে মোট শহীদের সংখ্যা ১০৬ জন। অপরদিকে বাংলাদেশে এবারের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে প্রাথমিক হিসেবেই খুন হয়েছেন প্রায় তিন’শ।

আহত হয়েছেন প্রায় দশ হাজার। সহস্রাধিক মানুষ চিরতরে হারাতে চলেছেন তাদের দৃষ্টি শক্তি। কেটে ফেলা হয়েছে অনেকের হাত-পা। ব্লক রেড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। কয়েক লক্ষ নাগরিককে করা হয়েছে মামলার আসামী। কোল্ড স্টোরেজের বস্তার মতো মানুষকে ঠেসে দেয়া হচ্ছে কারাগারে। গুলিতে আহতদেরকে পুলিশের সাজোয়া যান থেকে গার্বেজ ব্যাগের মতো ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে রাস্তায়। আকাশে উড়েছে হেলিকপ্টার, ছুঁড়েছে গুলি ও কাঁদনে গ্যাস। রাজপথে রক্তের বন্যা, বারুদের গন্ধ, সন্তানহারা মায়ের আহাজারি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে একাত্তুরের ভয়াবহতা। আন্দোলন দমনে শেষ অস্ত্র ব্যবহার করেছে সরকার। রাস্তায় নামিয়েছে সেনাবাহিনী।

জারি করেছে কারফিউ। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদেরকে আটকে রেখেছে পুলিশ। অনেকের উপর চালিয়েছে নির্মম অত্যাচার। যারা এতোগুলো প্রাণ কেড়ে নিলো-তারাই আবার জারি করেছে শোক প্রকাশের ফরমান। জাতির সাথে কি ভয়ানক তামাশা, প্রহসন, প্রতারণা। এতো কিছুর পরও কমেনি জনরোষ, নিভছে না দ্রোহের অনল।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন মোড় নিয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। এই আন্দোলন এখন আর সীমিত নেই শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষক-অভিভাবক সহ রাষ্ট্রের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ খুনের বিচারের দাবিতে নেমে এসেছে রাস্তায় । সেখানেও প্রশ্্ন উঠেছে কার নিকট বিচার চাইবে? যারা খুন করেছে তারা কিভাবে খুনের বিচার করবে? দিন শেষে সব দাবি এসে পরিণত হয়েছে এক দাবিতে- “সরকারের নিঃশর্ত পদত্যাগ”। সমাজের সব মানুষ আজ আন্দোলনের মোহনায় মিলিত হয়েছে। সৃষ্টি করেছে একটি স্্েরাতধারা।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র আজ বড় বেশী কলুষিত। রাষ্ট্র নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার পরিবর্তে কেড়ে নিয়েছে প্রাণ। এ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও শোধন প্রয়োজন। সন্তানদের স্বপ্ন-আশা-আকাংখা ও নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য দেশ ও প্রবাসে যে যেখানেই থাকিনা কেন দাঁড়াতে হবে তাদের পাশে। মানবিক মর্যাদা, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে হতে হবে অবতীর্ন। নিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বৈষম্যের অবসান ঘটানোর শপথ।

Posted ৩:৪৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1760 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.