শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য সৃষ্টিতে যাকাত

জাফর আহমাদ   |   বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য সৃষ্টিতে যাকাত

রমযানে যাকাত হিসাব করুন এবং রমযানেই তা পরিশোধ করুন। আরবী সালের গত রমযানের এক তারিখ থেকে শা’বানের তিরিশ তারিখকে আর্থিক বৎসর ধরে যাকাত গণনা করুন এবং রমযানের এক তারিখে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করুন। তাহলে আল্লাহর গরীব বান্দারা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে রোযা রাখতে পারবে। আর আপনিও হতে পারেন বিশাল বরকতের অধিকারী।একটি ফরয ৭০গুণ হলে, যাকাত ফরয ইবাদাত বিধায় তাও ৭০গুণ বৃদ্ধি করে আপনার আমল নামায় জমা হতে পারে। অনেকে ঈদের জন্য অপেক্ষা করেন, যাতে যাকাতের টাকায় ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পারেন। কিন্তু প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে রমযানের রোযাগুলো যাতে স্বাচ্ছন্দে পালন করতে পারে, তাই রমযানের শুরুতেই তা পরিশোধ করা প্রয়োজন।
আল কুরআনে নামাযের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত। কুরআন মাজীদে নামাযের মত প্রায় সমান সংখ্যক আয়াতে যাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাকাত ইসলামের একটি শক্তিশালী স্তম্ভ ও ইসলামী রাষ্ট্রের রাজস্বের প্রধান উৎস। আল কুরআন থেকে জানা যায় যে, নামাযের পর যাকাতই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ স্তম্ভ।
প্রকৃতপক্ষে সম্পদের মুল মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তাঁরই একান্ত দয়ায় মাটি, মেঘ-বৃষ্টি,পানি, আলো, বাতাস ও সুর্য প্রভৃতির মাধ্যমে এ সম্পদ আমি পেয়েছি। এমন কি আমার যে যোগ্যতার কথা বলা হয়, তাও আল্লাহরই দান। কাজেই আসমানী এ দানের জন্য সম্পদের একাংশ যাকাতের জন্য স্থিরিকৃত থাকা উচিৎ। তাছাড়া সমাজের কিছু লোক উচ্চতর যোগ্যতা ও সৌভাগ্যক্রমে নিজেদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ করে থাকে, পক্ষান্তরে কিছু লোকের সম্পদ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে অথবা অনেকেতাদের প্রয়োজনটুকুই মেটাতে পারে না। ইসলামী রাষ্ট্র এ দুয়ের জবপড়হপরষরধঃরড়হ বা সমন্বয় সাধনের জন্য যাকাত ব্যবস্থাকে আমাদের ওপর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল বলেন:-”তারা যদি কুফর ও শিরক থেকে তাওবা করে খাঁটিভাবে ঈমান আনে এবং নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই হিসাবে গণ্য হবে।”(সুরা তাওবা-১১)
ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টির জন্য যাকাত একমাত্র উপযুক্ত হাতিয়ার। ভ্রাতৃত্বের এ প্রবল টানে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদ বন্টন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যাকাত হবে এ সমাজে বিরাজমান ব্যাপক পার্থক্য হ্রাসের একটি কার্যকরী প্রতিষ্ঠান। এ সমাজের অধিবাসীরা হবে একাধারে নৈতিক, কল্যাণকামী এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন পরস্পরের বন্ধু।যেমন:-আল কুরআনের ঘোষনা ”ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বন্ধু। এদের পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।” সুরা-তাওবা-৭১)
একদিকে ইসলামী রাষ্ট্রের অধিবাসীরা যেমন যাকাত দিতে বাধ্য থাকবেন, অন্যদিকে ইসলামী রাষ্ট্র অবশ্যই যাকাত সংগ্রহে বাধ্য থাকবেন। ইসলামী সরকারের চারটি মৌলিক কাজের মধ্যে যাকাত আদায় একটি গুরুত্বপুর্ণ মৌলিক কাজ। আল্লাহ তা’আলা বলেন:”আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে; আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত।” (সুরা আল হাজ্জ ঃ ৪১) যাকাত আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন:“তাদের ধন-সম্পদ থেকে সাদকা গ্রহণ করে তাদেরকে পরিশোধিত ও পরিচ্ছন্ন করো এবং তাদেরকে (নেকীর কাজে) এগিয়ে দাও , তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো। তোমার দু’আ তাদের শান্তনার কারণ হবে। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।”(সুরা তওবা ঃ ১০৩) যাকাত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে নিদিষ্ট হারে আদায় করে আল-কুরআনেরই নির্দেশিত খাতসমুহে বন্টন করতে হবে। ইহার জন্য নামায ও রোযার মতই নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ও সময়সুচী রয়েছে। ইহা রাষ্ট্রের খেয়াল খুশিমত বন্টন করতে পারবেন না।যাকাত ব্যয়ে বা বন্টনের ব্যাপারে আল কুরআনের ঘোষনা হচ্ছে: “যাকাত তো পাওনা হলো দরিদ্র ও অভাবীগণের, যে সকল কর্মচারীর উপর আদায়ের ভার আছে তাদের, যাদের মন (সত্যের প্রতি) সম্প্রতি অনুরাগী হয়েছে, গোলামদের মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্থদের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্যে। এটি আল্লাহর তরফ থেকে ফরয এবং আল্লাহ সব জানেন এবং সব বুঝেন।”(সুরা আত তাওবা-৬০)
মনে রাখা প্রয়োজন, যাকাত কোন দান বা কারো অনুগ্রহ নহে। যাকাত প্রদান ফরয যা বাধ্যতামুলক অবশ্য পালনীয়। একে সাধারণ করের মত মনে করাও মারাত্বক ভুল। নামায রোযার মতই এটা ইসলামের প্রান বা জীবনীশক্তি। যেনতেন ভাবে নামায হলো মোনাফিকের নামায। আর যারা মোনাফেক তারাই যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকে। সুতরাং আমরা তাহলে বলতে পারি যিনি প্রকৃত নামাযী তিনি (সাহেবে মাল হলে) অবশ্যই যাকাত দিবেন। অন্যথায় তার নামায হবে মোনাফিকের নামায। আল্লাহ তা’আলা বলেন:-”আল্লাহর পথে তাদের দান শুধু এ জন্যই কবুল করা যায় না যে, মুলত আল্লাহ এবং রাসুলের প্রতি তাদের ঈমান নাই; নামাযের জন্য তারা আসে বটে, কিন্তু মনক্ষুন্ন হয়ে; আর টাকা পয়সাও তারা দান করে, কিন্তু বড়ই বিরক্তি সহকারে।”(সুরা তাওবা-৫৪) আল্লাহ আরো বলেন ”এই আরাব (মুনাফিকদের) অনেকেই আল্লাহর রাস্তায় কিছু খরচ করলেও তা করে একান্তভাবে ঠেকে-যেন জরিমানা আদায় করছে।”(সুরা তাওবা-৯৮) যাকাতের প্রতি অবহেলার অর্থ হলো ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করা এবং একে ধ্বংস করা। আর এর অবশ্যাম্ভাবী ফল হবে এইযে, এ সমাজ যেহেতু মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে তাই তদস্থলে অন্য জাতি এসে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে। এ বিশাল ক্ষতি ও ধ্বংসের উপলব্ধি করেই ঈমান থাকা ও নামায পড়া সত্বেও যাকাত অস্বীকারীদের বিরুদ্ধে খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাঃ যুদ্ধের ঘোষনা দিয়েছিলেন।

এ প্রসংগে আল্লাহ রাব্বুল বলেন:-”জেনে রাখ, তোমরা এতদুর খারাপ হয়ে গিয়েছো যে, তোমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় কিছু খরচ করতে বললে তোমরা সেই জন্যে মোটেই প্রস্তুত হও না বরং তোমাদের অনেকেই তখন কৃপনতা করতে থাকে। অথচ যে ব্যক্তি এসব কাজে কৃপনতা করে সেই কৃপনতায় তার নিজেরই ক্ষতি হয়। মুলত আল্লাহ একমাত্র ধনশালী আর তোমরা সকলেই দরিদ্র-তারই মুখাপেক্ষী। আল্লাহর রাস্তায় যদি তোমরা আদৌ অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত না হও তবে এ অপরাধের অনিবার্য ফলস্বরূপ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের স্থানে এক ভিন্ন জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তারা নিশ্চই তোমাদের মত কৃপণ হবে না।”(সুরা মুহাম্মাদ-৩৮)
বর্তমানে আমাদের সমাজে যাকাতের প্রতি যে অবহেলা দেখা যায়, তা দেখে মনে হয় যাকাত একটা দান খয়রাত মাত্র। খেয়াল খুশি ও দয়া দাক্ষিণ্যের ব্যাপার। দয়া পরবশ হয়ে যাকে মনে চায়, তাকে প্রদান করলাম। আবার যারা সামান্য দিতে আগ্রহ বোধ করেন তাদের মধ্যেও সাধারণ করের মত একটি ফাকিঁর মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আল কুরআনের নির্দেশনার আলোকে বলতে চাই যে, যাকাত কোন দয়া-দাক্ষিণ্যে বা দান-খয়রাতির ব্যাপার নয়। বরং এটি একটি অধিকার। আল্লাহ তা’আলা বলেন:-”এবং তার ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিত জনের অধিকার রয়েছে।”(সুরা জারিয়াত-১৯)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:- ”তুমি কি সে ব্যক্তির কথা ভেবে দেখেছ যে শেষ বিচারের দিনটিকে অস্বীকার করে, এ তো সে ব্যক্তি, যে নিরীহ ইয়াতীমকে গলা ধাক্কা দেয়, মিসকীনদের খানা দিতে যে কখনো উৎসাহ দেয়না।” (সুরা মাউন-১-৭) দু’টি আয়াত থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, যাকাত প্রকৃতপক্ষে দাতার সম্পদ নহে বরং এটা বঞ্চিত ও মিসকিনেরই হক। দাতা কেবল তার হক আদায়ের দায়িত্বটুকু পালন করলেন। এমন কি এটা তার কোন কৃতিত্বও নহে। আর এটি দায়িত্বানুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তিরাই কেবল বুঝতে পারে। অবশ্য বুঝতে পারাটাও আল্লাহর একটি বিশেষ রহমত।
কোথাও প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সরকার না থাকলেও নামায এবং রোযা যেমনি ভাবে তার সকল আহকাম ও আরকান সহ আমরা পালন করে থাকি, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রেও আমাদেরকে এর সকল নিয়ম কানুনের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। অন্যথায় নামাযের আহকাম ও আরকান ছুটে গেলে যেমন নামায নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি নিজের খেয়াল খুশি মত যাকাত প্রদান করা হলে তাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আর একটি বিষয় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে তা হলো ”লোক দেখানো যাকাত” যা আমাদের দেশের একটি কু-সংস্কৃতির রূপ ধারণ করেছে তা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এটা সুনাম সূখ্যাতি ও বাহবা কুড়ানোর বিষয় নয়। এ সম্পর্কে আল কুরআনে আল্লাহর ধমকি শুনুন:“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দানকে অন্যের ওপরে নিজের অনুগ্রহ প্রচার করে বা কাউকে কষ্ট দিয়ে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করে দিও না, যে শুধু অন্যকে দেখাবার জন্য কিংবা সুনাম কিনার জন্য অর্থ ব্যয় করে অথচ সে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঃ একটি মসৃণ পাথরখন্ডের ওপর মাটির আস্তর জমেছিল। প্রবল বর্ষণের ফলে সমস্ত মাটি ধুয়ে গেলো। এখন সেখানে রয়ে গেল শুধু পরিস্কার পাথরখন্ডটি। এ সমস্ত লোকেরা দান-খয়রাত করে যে নেকী অর্জন করে বলে মনে তার কিছুই তার কাছে আসে না। আর আল্লাহ কাফেরদের সোজা পথ দেখান না।”(সুরা বাকারা-২৬৪)আলাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে আল কুরআনের আলোকে নামায ও রোযার মতই যাকাতকে যথাযোগ্য মর্যাদা দানের তাওফিক দান করুন। আমীন।


advertisement

Posted ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(683 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.