বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
নিউইয়র্ক সিটির প্রায় এক লক্ষ ভোটারের কাছে ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট পাঠানো হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন নির্বাচন পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর ফলে প্যানডেমিক সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরিচালনায় সিটির সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভোটার ডাকযোগে ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট প্রেরণের ঘটনা ঘটেছে মূলত ব্রুকলিন এলাকায়, যেখানে ভোটাররা তাদের কাছে পাঠানো ব্যালটে এবং যে খামে ব্যালট পাঠানো হয়েছে তাতে ভোটারের নাম ও ঠিকানায় ও যে খামে ভরে ব্যালট নির্বাচন অফিসে ফেরত পাঠানো হয়ে সেই খামেও অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিওর নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার নেই, তিনি নির্বাচন বোর্ডের ব্যর্থতাকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমি জানি না যে আমাদেরকে নির্বাচন বোর্ডের এ ধরনের কাজ আর কতো দেখতে হবে এবং কতোবার আমাদেরকে বিস্মিত হতে হবে।
অনুপস্থিত ভোটারদের কাছে ডাকযোগে প্রেরিত ব্যালটের নির্ভুলতা সম্পর্কে প্রেসিডেনন্ট ট্রাম্প চ্যালেঞ্জ করার পর এ ধরনের একটি ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর নিউইয়র্কের ব্যালট পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। তার মতে নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনসের অব্যবস্থাপনার ইতিহাস দীর্ঘ। বোর্ডের এক্সিউটিভ ডাইরেক্টর মাইকেল রায়ান ব্যালটে ত্রুটির জন্য মুদ্রণ ঠিকাদার রচেষ্টার ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রিন্টিং কোম্পানি ফোনিক্স গ্রাফিক্সকে দোষারূপ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির উপর ব্রুকলিন ও কুইন্সের ভোটারদের কাছে ডাকযোগে ব্যালট প্রেরণের ঠিকাদারী ন্যস্ত ছিল।
রায়ান বলেন, যেহেতু ব্যালটে মুদ্রণ প্রমাদ ঘটিয়েছে ঠিকাদারী কোম্পানি, অতএব তাদেরকেই নিজ ব্যয়ে পুনরায় ব্যালট মুদ্রণ করে নতুন ব্যালট সংশ্লিষ্ট ভোটারদের কাছে পাঠাতে হবে। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে বিভ্রান্ত না হন এবং বোর্ড অফ ইলেকশনসের উপর আস্থা না হারান সেজন্য সখর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন বোর্ড কর্মকর্তাারা যেসব ভোটার ত্রুটিযুক্ত ব্যালট পেয়েছেন তাদেরকে ইমেইল পাঠানোর জন্য বা হটলাইনে কল করে অভিযোগ জানাতে বলছেন। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ করছেন যে তারা তাদের ঠিকানায় ব্যালট পেয়েছেন, কিন্তু প্রাপকের নাম ভিন্ন, যে নামে ওই ঠিকানায় কেউ বাস করেন না। হটলাইনে অভিযোগ জানাতে গিয়ে তারা ধরতে পারছেন না। ব্রুকলিনের বুশউইকের বাসিন্দা মেরিলি রসো বলেন তিনি হটলাইনে ফোন করতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তার আগে আরো আশিজন কলার অপেক্ষা করছিলেন । অতএব তিনি হাল ছেড়ে দেন। ব্রুকলিনের কোবল হিলের রিচ রোটোনডো ও তার সঙ্গী ব্যালট পেয়েছেন, যাতে তাদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। তিনি যে ভবনে বাস করেন সেখানে অন্য এক ভোটার সম্পর্কেও নির্বাচন বোর্ড ব্যালটে ভুল তথ্য দিয়েছে।
ফোনিক্স গ্রাফিক্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইও স্যাল ডি-বাসি তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজের দক্ষতার উপর আস্থা ব্যক্ত করেছেন যে, নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে তারা উচ্চ মানের পন্য সরবরাহ করতে পারদর্শী এবং সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনসের সাথে তারা ২০১০ সাল থেকে কাজ করছে। গত জুন মাসে কোম্পানিটিকে সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনস কোন টেণ্ডার ঘোষণা ছাড়াই জরুরী সংগ্রহ খাতে ৪.৬ মিলিয়ন ডলারের কাজ দেয়, যা এ বছরের শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
নির্বাচন বিধি অনুযায়ী ভোটাররা ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট স্বাক্ষর করে পাঠালে তা বাতিল হবে। তবে তারা যদি না জেনে ত্রুটিপূর্ণ ব্যালটে স্বাক্ষর করেন তাহলে তিনি দ্বিতীয় ব্যালটে বা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ভোট দেয়ার যোগ্য। সেক্ষেত্রে ডাকযোগে প্রেরিত তার ব্যালট এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। নিউইয়র্ক স্টেট বোর্ড অফ ইলেকশনসের কো-চেয়ার ডগলাস কেলনার জানিয়েছেন যে তিনি নিউইয়র্ক সিটি ও নাসাউ কাউন্টি থেকে ব্যালটে ত্রুটির অভিযোগ লাভ করেছেন। কিন্তু তা মাত্র তিনটি ব্যালট সম্পর্কে। ডাকযোগে প্রেরিত ব্যালট সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচন বোর্ড যদি ডাকযোগে ব্যালট প্রেরণের দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফেলে তখন বোর্ড তার নিয়ন্ত্রণ ও সরাসরি তত্বাবধানের এখতিয়ার হারিয়ে ফেলে এবং কি ঘটছে তা জানতে পারে না। ত্রুটিপূর্ণ ব্যালটের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যালটগুলো ভোটারদের কাছে পাঠানোর আগে নির্বাচন বোর্ডকে দেখিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকলে এ ধরনের প্রমাদ ঘটার আশংকা কম থাকতো।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস প্যাডেমিকের কারণে এ বছর ডাকযোগে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিউইয়র্কের ৪০ শতাংশ ভোটার ডাকযোগে ভোট দেয়ার আগ্রহ দেখিয়ে নির্বাচন বোর্ডের কাছে ব্যালট চেয়ে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরগুলোতে ছিল মাত্র চার শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের ডাকযোগে ভোট দেয়ার উদ্যোগে কারণে নির্বাচন বোর্ডে অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। ব্রুকলিনে প্রায় এক লক্ষ ব্যালটে ত্রুটি ধরা পড়ার পর সমস্যা আরো জটিল হয়েছে। তবে তারা আশা করছে যে নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তাদের পক্ষে সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। কর্মকর্তাারা ভোটারদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন আগামী ২৪ অক্টোবর ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আগাম ভোট প্রদানের জন্য। নিউইয়র্ক স্টেট সরকারের কর্মকর্তারা ধারনা করছে যে, তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫০ লাখের বেশি ডাকযোগে ব্যালট পাবেন। এর ফলে আশংকা করা হচ্ছে যে, ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ফলাফল জানা সম্ভব হবে না।
Posted ৩:৪৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh