বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে প্রাথমিক গণনার ফলাফলে মেয়র পদে এগিয়ে ছিলেন এরিক এডামস। দ্বিতীয়
অবস্থানে থাকা মায়া উইলির সাথে বড় ধরনের ব্যবধান ছিলো তার। প্রাইমারির এক সপ্তাহ পর গত ৩০ জুন বুধবার প্রাপ্ত সর্বশেষ ভোট গণনায় নাটকীয়ভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছেন ক্যাথরিন গার্সিয়া। তৃতীয় অবস্থানে চলে গেছেন মায়া উইলি। র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং পদ্ধতির প্রথম দফার গণনায় এই পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন। এরিক এডামসের সাথে ক্যাথরিন গার্সিয়ার ভোটের ব্যবধান মাত্র ১৪ হাজার ৭৫৫। অথচ গণনার অপেক্ষায় রয়েছে ১লাখ ২৫ হাজার অ্যাবসেন্টি ভোট। এছাড়া রয়েছে র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং এর দ্বিতীয় কিস্তির গণনা। যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ জুলাই মঙ্গলবার। এরিক এডামসের সাথে ক্যাথরিন গার্সিয়ার ভোটের ব্যবধানে যে হারে কমছে তাতে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। এ নিয়ে উভয় শিবিরে চলছে টান টান উত্তেজনা। নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র কে হচ্ছেন তা জানতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে ২৯ জুন ভোট গণনা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
গত ২২ জুন নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রগুলোতে প্রদত্ত ভোটের গণনায় এরিক অ্যাডামস তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকলেও গত মঙ্গলবার রাতে সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনস তাদের ওয়েবসাইটে আগে প্রকাশিত ফলাফলকে “অসামঞ্জস্যপূর্ণ” উল্লেখ করে ফলাফলে মেয়র পদে কে বিজয়ী হয়েছেন তা প্রকাশ করা উহ্য রাখায় ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও দ্ব্ধিাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সিটিতে বিরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে আশংকা করা হয়েছে। আগে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল তাতে ভোটের ফলাফলে এরিক অ্যাডামস ও তার দুই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম ছিল। কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর প্রকাশিত ফলাফলে ইলেকশন বোর্ড কোথায় “অসামঞ্জস্য” রয়েছে তা সনাক্ত করার লক্ষ্যে তাদের টেকনিক্যাল স্টাফরা কাজ করছেন বলে জানায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে তারা আগের ফলাফল তুলে নেয় এবং একটি নোট দেয় যে, ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটের ফলাফল ৩০ জুনের শুরুতে প্রকাশ করা হবে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বোর্ড তাদের বক্তব্যে ব্যাখ্যা করে যে তারা র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং সফটওয়ারে যে পরীক্ষামূলক নমুনা ব্যালট ব্যবহার করেছিল তা অপসারণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই জটিলতা হয়েছে। বোর্ড যখন নির্বাচনী দিবসের ভোট গণনা করেছে তখন পরীক্ষামূলক নমুনা ব্যালটসহ গণনা করেছিল। যার ফলে নির্বাচনের দিন প্রদত্ত ভোটের সঙ্গে অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার নমুনা ভোট যোগ হয়েছে। র্যাঙ্কড চয়েস ভোট পুনরায় গণনা করা হবে বলে ইলেকশন বোর্ড জানায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বলা হয় যে, বোর্ড অফ ইলেকশনসের বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও অকার্যকারিতার অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই রয়েছে। সেক্ষেত্রে সিটিজুড়ে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে তাদের সামর্থ নিয়েও অনেকে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আরো কয়েকটি সিটিতে এ পদ্ধতি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং এ ভোটাররা ব্যালটে তাদের পছন্দের ক্রমানুসারে ৫ জন পর্যন্ত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। ভোটারদের প্রথম পছন্দের কোনো প্রার্থী যদি ৫০ শতাংশের অধিক ভোট না পায়, তাহলে প্রার্থীদের বিলোপ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। যারা কম ভোট পাবেন তাদেরকে বাদ দিয়ে তাদের প্রাপ্ত ভোটগুলো ভোটাররা যাকে পরবর্তী পছন্দ করেছেন তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে এবং কোনো প্রার্থীর পক্ষে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। বোর্ড অফ ইলেকশনস মঙ্গলবার বিকেলে র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং এর বেসরকারি যে ফলাফল ঘোষণা করেছিল তাতে এরিক ৩১.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন ক্যাথরিন গর্সিয়া ও তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন মায়া উইলি। এরপর বোর্ড ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ” বলে ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল তুলে নেয়। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস এর রিপোর্টে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে যে, ফলাফল পুনরায় জটিলতায় পড়তে পারে। বোর্ডকে আনুমানিক ১ লাখ ২৪ হাজার অ্যাবসেন্টি ভোট গণনা করতে হবে এবং সেগুলো গণনা করার পর ইলেকশন বোর্ড র্যাঙ্কড চয়েস এর প্রার্থী বিলোপ পদ্ধতি অনুসরণ করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পারবে না।
বোর্ড অফ ইলেকশনস নিজেরাই তাদের পদ্ধতিতে ত্রুটি আবিস্কার করায় অনেক ডেমোক্রেট বোর্ডের উপর অনাস্থা প্রকাশের পাশাপাশি র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং ও সিটির সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মায়া উইলি মঙ্গলবার রাতে বোর্ড অফ ইলেকশনসের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন যে, বোর্ড দীর্ঘদিন ধরেই যে কোনো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় একই ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসলেও তারা সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, তাদের অক্ষমতা এতই ব্যাপক যে কারো পক্ষে বিস্মিত হওয়াও অসম্ভব। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীর ফলাফল নিয়ে তারা যা করছে তাতে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টির কারণ আমাদের নির্বাচনী আইনের ত্রুটির কারণে নয়, বরং যারা এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের অযোগ্যতার কারণে। অতীতেও তারা একই ধরনের ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছে। তিন আরো বলেন, যেসব ভোট গণনার বাকি রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই স্বচ্ছতার সঙ্গে গণনা করতে হবে এবং র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিতে হবে। ক্যাথরিন গর্সিয়া বলেছেন, নির্বাচনের ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল প্রকাশ অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সেজন্য ভোট গণনা হতে হবে স্বচ্ছ ও সম্পূর্ণ ব্যাখ্যাসহ, যাতে আমাদের গণতন্ত্র ও আমাদের সরকারের উপর ভোটারদের অনাস্থার সৃষ্টি না হয়। তিনি সকল প্রার্থীকে চূড়ান্ত ফলাফল মেনে নেয়ার এবং যিনি বিজয়ী ঘোষিত হবেন তাকে সমর্থন করার আহবান জানান।
সর্বোচ্চ ভোট লাভকারী প্রার্থী এরিক অ্যাডামস বোর্ড অফ ইলেকশনসের ভুলকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বর্ণনা করে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যথাযথভাবে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনের উপর, বিশেষ করে এবারের র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং এর উপর নিউইয়র্কারদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা বোর্ড অফ ইলেকশনসের স্বচ্ছতার প্রশংসা এবং তাদের ভুলকে স্বীকার করি। আমরা সঠিক ও ত্রুটিমুক্ত নির্বাচনের ফলাফলের জন্য তার অপেক্ষার কথা বলেন।
উল্লেখ্য, এরিক অ্যাডামস মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেভিড এন ডিনকিনস। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদে তিনি সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে এরিক অ্যাডামসের অনেক সমর্থক র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং প্রক্রিয়াকে অশ্বেতাঙ্গ ভোটারদের কার্যত মূল্যহীন করে দেয়ার একটি পদ্ধতি বলে সমালোচনা করছেন। বোর্ড অফ ইলেকশনস ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীর প্রাথমিক ফলাফলকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে প্রাথমিক ফলাফলকে ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেয়ার পর তারা সন্দিহান যে তাদের প্রার্থী নির্বাচনের দিনের ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ক্যাথরিন গর্সিয়ার কাছে পরাজিত হতে পারে।
ক্যাথরিন গর্সিয়া একজন শ্বেতাঙ্গ প্রার্থী। র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং প্রক্রিয়ায় এরিক অ্যাডামসের বিকল্প হিসেবে মেয়র পদে ভোট ভাগাভাগি হবে গর্সিয়া ও এন্ড্রু ইয়াং এর মধ্যে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ভোটারদের অবদমন করার একটি উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের শেষ দিনগুলোতে গর্সিয়া ও ইয়াং সিটিতে একসাথে প্রচারণা চালিয়েছে এবং সেইসব নেইবারহুডগুলোতে বেশি গেছেন, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এশিয়ান আমেরিকান কমিউনিটির বসবাস। ক্যাম্পেইনের ফ্লাইয়ারেও তাদের দু’জনের ছবি একসাথে দেখা গেছে। বোর্ড অফ ইলেকশন জানিয়েছে যে কিভাবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ত্রুটিপূর্ণ ভোট প্রার্থীদের পক্ষে গেছে। সর্বনিম্ন ভোট লাভকারী চার জন প্রার্থী এই ভোটের মধ্যে পেয়েছেন ৪২ হাজার ভোট, যা তাদের প্রকৃত প্রাপ্ত ভোটের প্রায় চার গুণ বেশি। নতুন ভোটের সংখ্যা ১,৩৩৬ থেকে বেড়ে ১৭,৫১৬ তে দাঁড়িয়েছে এবং অ্যাডামস ও ইয়াং এই ভোটগুলো থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েছেন।
Posted ১:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh