বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না হওয়ার কারণে হাজার হাজার যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্ট চাকুরিচ্যুত হয়েছে এবং বহুসংখ্যক চাকুরিচ্যুতির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ক পারমিটের জন্য নতুন আবেদন প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় লাগছে বলে লক্ষ লক্ষ লোক ইমিগ্রান্ট বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) সূত্র সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে যে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় ১৪ লাখ ইমিগ্রান্টের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন ও নতুন ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন বিবেচনাধীন ছিল, যা গত পাঁচ মাসে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওয়ার্ক পারমিটের জন্য বিবেচনাধীন আবেদনের সংখ্যা করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার আগের সংখ্যার দ্বিগুণ এবং ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ইউএসসিআইএস এর একজন মুখপাত্র সিএনএন নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেছেন, উদ্ভুত সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্ত ফেডারেল এজেন্সির বাজেট ও লোক স্বল্পতার কারণে এত বিপুল সংখ্যক ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন প্রক্রিয়া করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের দুর্বল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনার কারণেও ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে যে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছিল তা এখ নপর্যন্ত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
ইউএসসিআইএস এর কাছে সঠিক হিসাব নেই যে তাদের পারমিট ইস্যু করার বিলম্বের কারণে কত সংখ্যক পারমিটের মেয়াদ বিলম্বিত হয়েছে এবং আবেদনকারীরা যথাসময়ে নবায়িত ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ার কারণে কর্মচ্যুত হয়েছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রান্ট, তাদের নিয়োগকারীী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ইমিগ্রান্ট অধিকার সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে অনেক অভিযোগ পেয়েছে। যেসব এসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদনকারী ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রথমবার আবেদন করেছেন, তারা ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ায় শুধু যে বৈধভাব্ েকাজ করতে পারছেন না তা নয়, ওয়ার্ক পারমিটের অভাবে তারা হেলথ ইন্স্যুরেন্স করতে পারছেন না। কারণ ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পরই একজন এসাইলাম প্রার্থী সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বা নিয়োগকারীরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে যে তাদের কর্মীদের পারমিট নবায়নে কত সময় প্রয়োজন হবে, সে সম্পর্কে তারা বা তাদের কর্মীরা নিশ্চিত নয়। অনেক সময় কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে একজন নিয়োগকারী দক্ষ কর্মী কোথায় পাবেন। ফ্লোরিডায় অনেক এসাইলাম আবেদনকারী ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু গত দশ মাসেও তারা ওয়ার্ক পারমিট না পেয়ে অবৈধভাবে স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে একজন নিয়োগকর্তা বলেছেন দক্ষ কর্মীকে ওয়ার্ক পারমিট নবায়িত না থাকার কারণে কর্মচ্যুত করতে হলে তার স্থলে অন্য কাউকে নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। কেউ কাজ করলে অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে করবে, কিন্তু সব কর্মী ৪০০ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠে ৫জি উপকরণ স্থাপন করতে রাজী হবে না।
ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করতে বিলম্বের কারণে ইউএসআইসিএস এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে অলাভজনক সংস্থা ‘এসাইলাম সিকার এডভোকেসি প্রজেক্ট।’ তারা বলেছে যে তাদের সংস্থার প্রায় ২,০০০ সদস্য সম্প্রতি চাকুরি হারিয়েছে শুধু তাদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়িত না থাকার কারণে। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ থাকে সাধারণত দুই বছর থাকে।
নতুন ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু বা নবায়নে দীর্ঘ সময় লাগে না। ইউএসআইসিএস সূত্র জানিয়েছে যে প্রতিটি আবেদনপত্র যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শেষ হলে একটি পারমিট বা ওয়ার্ক অথরাইজেশন কার্ড ইস্যু করতে একজন ইউএসআইসিএস কর্মীর গড়ে ১২ মিনিট সময় ব্যয় হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক সমস্যা নজীরবিহীন জটের সৃষ্টি করেছে। এমনকি মহামারীর আগে ট্রাম্প প্রশাসন প্রক্রিয়াগত জটিলতা সৃষ্টি এবং ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ফি বৃদ্ধি করেছে। প্রশাসন নতুন কর্মচারি নিয়োগ বন্ধ রেখেছে এবং অনেক কন্ট্রাক্টরের সাথে কাজের চুক্তির অবসান ঘটিয়েছে। তার ওপর কোভিড ১৯ এর কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাও পুরো ব্যবস্থার উপর শেষ আঘাত হেনেছে।
যদিও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন অনেক নীতি পরিবর্তন ও সংশোধন করেছে, কিন্তু কাজের চাপ কমানোর জন্য ইউএসসিআইএস এর জনশক্তি বৃদ্ধি করা হয়নি। ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকনমিক এর জরিপ অনুযায়ী ৪৭ শতাংশ কোম্পানি চলতি বছরের শেষ তিন মাসে এসে দক্ষ কর্মী সংকটে পড়েছে শুধু তাদের কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট যথাসময়ে নবায়িত না করার কারণে।
টেক কোম্পানিগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিদেশ থেকে জরুরী ভিত্তিতে কর্মী সংগ্রহ করাও সম্ভব নয় ইমিগ্রেশন বিষয়ক বহু জটিলতা যা ট্রাম্প প্রশাসনের সময় সৃষ্টি করা হয়েছিল তা কাটিয়ে না উঠার কারণে। উল্লেখ্য, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো কর্তৃক ভিসা ইস্যু করা হ্রাস পেয়েছিল পূর্ববর্তী বছরগুলোর চেয়ে ৬০ শতাংশের বেশি। এ প্রবণতা এখনো বজায় রয়েছে। যদিও এখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে ইউএসসিআইএস এর নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, জট বেঁধে থাকা কাজ সম্পন্ন করতে বিদ্যমান কর্মীদের ওভারটাইম দেওয়া হচ্ছে এবং নতুণ কর্মী নিয়োগের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তারা দাবী করছে যে কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
Posted ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh