মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

করোনাকালে রোগ প্রতিরোধে যোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

ডা. সুব্রত ঘোষ   |   শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

করোনাকালে রোগ প্রতিরোধে যোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

ভারতের উদ্যোগে জাতিসংঘের স্বীকৃতির পর বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে গত ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করা হয়। গত ২৮ জুন ছিল আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। শরীর সুস্থ রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী যোগ ব্যায়াম। দিনের যেকোনো সময় যোগাসন করা সম্ভব। এই করোনাকালে করোনার বিরুদ্ধে শরীরকে প্রস্তুত করতেও যোগ ব্যায়াম অত্যাবশ্যকীয়। যোগ আনে মানসিক শান্তি, বাড়ায় মনোবল সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

কখন যোগব্যায়াম করা উচিত 


যেকোনো সময়ই যোগাসন করা যায়। সকাল-সন্ধ্যা যেকোনো সময় যোগাসন করা সম্ভব। খাবার খাওয়ার ৩-৪ ঘণ্টা পর, হালকা খাবারের পর, চা বা এ-জাতীয় পানীয়ের ৩০ মিনিট পর এবং পানি খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর আসন করলে উপকৃত হবেন।

কোথায় এবং কিভাবে করা উচিত


১. খোলা আকাশের নিচে যোগাসন সব সময় সাহায্য করে। তা সম্ভব না হলেও যেকোনো জায়গাতেই যোগ করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, যোগাসন করার সময় আশপাশের পরিবেশ শান্ত থাকে। ২. মাটিতে যোগা ম্যাট বা কোনো কাপড় রেখে যোগাসন করুন। যোগের সময় সুতি কাপড় পরলে সুবিধা হবে। তবে ট্র্যাক প্যান্ট ও টি-শার্টও পরতে পারেন। ৩. যোগাসন করার সময় চোখ বন্ধ রাখুন। এর ফলে যোগের প্রভাব আরও বেশি হয়। শরীরের যে অংশে যোগের প্রভাব পড়ছে, সেখানে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। ৪. যোগ ব্যায়ামে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার গুরুত্ব আলাদা। যখন শরীর পেছনের দিকে যাবে, তখন শ্বাস নিতে হবে। যখন শরীর সামনের দিকে এগোবে, তখন শ্বাস ছাড়তে হবে। নাক দিয়ে শ্বাস নেবেন এবং মুখ দিয়ে ছাড়বেন। ৫. ক্লান্ত অবস্থায়, অসুস্থতার সময়ে যোগ করার চেষ্টা করা উচিত নয়। ৬. যোগাসনের ৩০ মিনিট পর স্নান ও আহার করা উচিত। ৭. যোগের সুফল পেতে সময় লাগে। তাই অধৈর্য হওয়া উচিত নয়।

মাত্র ১০ মিনিটে কিভাবে যোগ করবেন


১. পাঁচ মিনিটে ঘাড়, কাঁধ, হাত, কোমর, হাঁটু, পা, গোড়ালিকে বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে (সুক্ষম) প্রসারিত করুন।
২. দু-তিন মিনিট সূর্য নমস্কার করুন।
৩. দু-তিন মিনিট উঠে একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে জগিং করুন।

অফিসে বসে কিভাবে যোগ করবেন

১. সুক্ষম ক্রিয়া : ৭-৮ ঘণ্টার অফিস ডিউটিতে দুবার ঘাড়, কাঁধ, কনুই, হাত, কোমর, হাঁটু, পা, গোড়ালিতে সুক্ষম ক্রিয়া করতে পারেন।
২. তদাসন : অফিসে সিট থেকে উঠে একই অবস্থানেই তদাসন করা যেতে পারে।
৩. গভীর শ্বাস নেওয়া : ক্লান্তির সময় নিজের সিটে বসেই ২-৩ মিনিট পর্যন্ত গভীর শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। এতে রিল্যাক্সড অনুভব করবেন।

করোনা আক্রান্ত রোগীর বেশ কিছু উপসর্গের মধ্যে আতঙ্কিত হওয়ার মতো উপসর্গটি হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেকটা রুখে দেওয়া সম্ভব।
গবেষকরা মনে করছেন, ব্যায়ামই আটকে দিতে পারে করোনার থাবাকে। আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সামনে এনেছেন এ তথ্য। তাদের গবেষণা বলছে, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএস দূর করতে বা অন্তত কম করতে শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৩-১৭ শতাংশের চূড়ান্ত শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইউএস সেন্টার্স ফর ডিসট্রেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, ২০ থেকে ৪২ শতাংশ করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। আইসিইউর ক্ষেত্রে এই শতাংশ ৬৭-৮৫-এর মধ্যে। আর এই রোগীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বাঁচবেন না- বলছে গবেষণা। গবেষকরা বলছেন, অন্তত ৮০ শতাংশ করোনা রোগীর আগে থেকেই সামান্য শ্বাসকষ্ট ছিল, তবে সে জন্য তাদের ওষুধ খেতে হতো না। তারা একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উৎসেচক খুঁজে পেয়েছেন, যা এআরডিএস রুখতে সাহায্য করে। আর আমাদের পেশিই তৈরি করে দেয় এই উৎসেচক, অন্য অঙ্গগুলো ঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে। কিন্তু কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ করলে এই উৎসেচক বেশি তৈরি হয়- গবেষকরা বলেছেন।

আর কমে গেলে শুরু হয় ফুসফুসের জটিল অসুখ, হৃদযন্ত্রসংক্রান্ত সমস্যা, এমনকি কিডনি ফেইলিওর। মাত্র একবার কিছুক্ষণের জন্য ব্যায়াম করলেই এই উৎসেচক তৈরি হতে শুরু করে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। তাই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের পাশাপাশি সুস্থ থাকতে ব্যায়ামও করুন পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী। এ ছাড়া এতে শিথিলায়ন হয় বা মানসিক চাপ কমে। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন : রিল্যাক্সিং ব্রিদিং- পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে এক থেকে চার পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে সাত পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস’ করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন আট পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পরপর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দুবার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।

শ্বাস গোনার ব্যায়াম- এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তার পর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এ ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনোসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।

স্থিরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত ব্যায়ামের চর্চা : প্রাচীনকালে যোগসাধনার ক্ষেত্রে এহেন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত ব্যায়ামের অনুশীলন নিয়মিত করা হতো। অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিংয়ের কৌশলও সেই সময়ে প্রচলিত ছিল। এর সাহায্যে মানুষ তার শরীর এবং মনের নানা সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ-সবল হয়ে বাঁচতে পারে। এই ব্যায়াম অনুশীলনের পর্যায়গুলো হলো- ১. এমন শান্ত জায়গা বাছতে হবে, যেখানে হইহট্টগোল নেই। হাত পেটের ওপর রেখে কাঁধ ও বুকের অংশ শিথিল করে রাখতে হবে। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে এবং পেট ওপরের দিকে ওঠা পর্যন্ত শ্বাস টেনে রাখতে হবে। এই অবস্থায় পাঁচ গুনতে হবে। ২. এরপর কিছুক্ষণ থেমে আবার পাঁচ গুনে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালাতে হবে। ৩. নাক বা মুখ দিয়ে শ্বাস বাইরে ছাড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে নিঃশ্বাস পুরোপুরি বাইরে বের করা জরুরি। ৪. হাওয়া পুরো বাইরে বের করে দেওয়ার পর পেট অনেক নরম এবং ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। দুবার এভাবে স্বাভাবিক ছন্দে শ্বাস গ্রহণ এবং বর্জন করতে হবে। তার পর কিছুক্ষণ থেমে আবার একই প্রক্রিয়া প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। ৫. এভাবে ৩ থেকে ৫ মিনিট ক্রমাগত ১০ বার এই ব্যায়াম অনুশীলন করা জরুরি। অনুশীলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানুষের নিঃশ্বাস ছাড়ার গতি শ্বাস নেওয়ার গতির থেকে সামান্য বেড়ে যায়। এহেন অভ্যাস নিয়মিত বজায় রাখার মধ্য দিয়ে মানুষের ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে ওঠে, চিন্তাভাবনায় স্বচ্ছতা আসে এবং সামগ্রিকভাবে শরীর সুস্থ থাকে।

প্রত্যেকবার শ্বাস ছাড়ার সময় একজন মানুষের উচিত ইতিবাচক মনোভাব, সুচিন্তাভাবনায় সমৃদ্ধ হওয়া। প্রতিনিয়ত এই অভ্যাস অনুশীলনের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ-সবল ও সতেজ হয়ে উঠবে- এটাই কাম্য।

আসুন এই করোনাকালে সবাই যোগ ব্যায়ামের অভ্যাস করি এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনামুক্ত পৃথিবী গড়ি।
করোনামুক্ত সকালে আগামী যোগ দিবস ঘরে নয়, মুক্ত আকাশের নিচে পালনের প্রত্যাশায় আসুন সুস্থ, সবল আর নিরোগ পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা করি সবাই।

ডা. সুব্রত ঘোষ : চিকিৎসক, সংগঠক ও সমাজকর্মী।

advertisement

Posted ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.