ডা. আসিফ শওকত | মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০
যাদের ঘরে কোভিড-এর পেশেন্ট আছে, অথবা যারা হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে নিজের অসুস্থ পিতা-মাতা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ি অথবা অন্য আত্মীয়স্বজনকে ঘরে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।
প্রথম উপদেশ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা পেটের ওপর ভর করে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন বা সামান্য কাত হয়ে বাহু বা হাতের ওপর ভর করে। আমরা সচরাচর যেভাবে ঘুমাই অর্থাৎ পিঠের ওপর ভর করে না ঘুমানো শ্রেয়।
ভেন্টিলেশন ইন প্রোন বা উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় ফুসফুসের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। এতে আপনার হাইপোক্সিক বা অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার আশংকা কমে আসে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ে। অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) বা তীব্র শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলোর চিকিৎসায়ও প্রোন ভেন্টিলেশন বড় ভূমিকা রাখে।
দ্বিতীয় উপদেশ
করোনায় আক্রান্ত হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, করোনাভাইরাস যখন ফুসফুসে আক্রমণ করে, তখন ফুসফুসের ডিপেন্ডেন্ট পার্ট বা নিচের অংশ শক্ত হতে থাকে। বায়ুথলিগুলো আর অক্সিজেন বহন করতে পারে না। যেটুকু করতে পারে সেটুকুও ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে।
শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোকে (ব্রেণ, লিভার, কিডনি) এ সামান্য অক্সিজেনের সাহায্যে টিকে থাকতে হয়। এ অবস্থায় আপনি যদি দুশ্চিন্তা করেন তবে আপনার ব্রেণের কাজ বাড়তে থাকে। ব্রেণের মেটাবলিজম অংশে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়তে থাকায় ব্রেণ বেশি অক্সিজেন ব্যবহার করে ফেলে। সেক্ষেত্রে বাকি সংবেদনশীল অঙ্গগুলো মারাত্মক অক্সিজেন সংকটে পড়তে পারে।
তৃতীয় উপদেশ
করোনায় আক্রান্ত হলে শরীরকে ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূন্য করা যাবে না, মোটেই না। প্রচুর তরল, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগী স্ট্রোক থেকে শুরু করে যে কোনো অ্যাকিউট ভাস্কুলার ক্রাইসিস বা তীব্র সংবহনতান্ত্রিক জটিলতায় পড়তে পারেন। ফলে পালমোনারি এমবলিজম থেকে শুরু করে যে কোনো প্রধান সংবহনতন্ত্রে ব্লক হতে পারে করোনা আক্রান্ত রোগীর।
আপনার শরীরের পানিশূন্যতা, স্ট্রোক লাইক সিম্পটমকে ট্রিগার করতে পারে। বিশেষত করোনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে হার্টের প্রধান নালিকে ব্লক করার পেছনে কোষের পানিশূন্যতা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে। শরীর যদি পানিশূন্য হয় সেক্ষেত্রে হেমোকনসেনট্রেশন হয়। প্যাকড সেল ভলিয়ম বা PCV বাড়ে, রক্তের সান্দ্রতা বাড়ে, রক্ত আঠালো হয়ে যায়। এর ফলে স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন এবং এর কারণে যদি ডায়রিয়া হয় তবে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। শরীরকে প্রোটিন দিতে হবে। নতুবা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মেজর ভ্যাসেল এম্বোলিজম হওয়ার আশংকা বহুগুণে বেড়ে যাবে।
লেখক : চিকিৎসক, এভার কেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
Posted ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh