শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নিতে মাথায় রাখুন ৬টি বিষয়

ডা. নুসরাত জাহান   |   শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নিতে মাথায় রাখুন ৬টি বিষয়

আপনাদের সাথে আমার ডাক্তারি অভিজ্ঞতা থেকে কিছু ঘটনা শেয়ার করব। আজকাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ অনেক কিছু জানছে, শিখছে। আবার অনেকে নিজের উপর সেই জ্ঞান অল্প-স্বল্প অ্যাপ্লাইও করছে। এটা ভালো হয় তখনই, যখন তা অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ অনুযায়ী হবে। তা না হলে অনেক সময়ই প্রেগনেন্ট মায়েদের নরমাল ডেলিভারির ইচ্ছা থাকলেও তাদের বাধ্য হয়ে সিজার করতে হয়। তবে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমার দু’টি পেশেন্টের কেস শেয়ার করার সাথে সাথে নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নিয়ে জেনে নেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা।

নরমাল ডেলিভারি নিয়ে দু’জন গর্ভবতীর কেস


কেস-১ : রোগী এবং তার হাসবেন্ড এসে জানালো তাদের নরমাল ডেলিভারি করানোর প্রস্তুতির কথা। এর মধ্যে আছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, বেশি বেশি ভিটামিন ওষুধ না খাওয়া (কারণ বাচ্চা বড় হয়ে যাবে) এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া (ডেলিভারি সহজ হবে) ইত্যাদি। শুনে কিছুটা হতাশ হলেও অপেক্ষা করলাম ডেলিভারি পেইন ওঠার। শেষ পর্যন্ত যখন ব্যথা উঠল, রোগী এবং তার আত্মীয়স্বজনের রিকোয়েস্টে সিজার করা হলো।

কেস- ২ : বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হিসেবে এই রোগীটি ছিল অনেক আহ্লাদী। সাধারণত দেখা যায় এমন মেয়েরা সিজারিয়ানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়। তবে সে জানালো নরমালে বাচ্চা নিতে ইচ্ছুক, তাই প্রতিদিন ইউটিউব থেকে বিভিন্ন ভিডিও দেখে পরামর্শ নিচ্ছে এবং এক্সারসাইজ করে যাচ্ছে। পরে দেখা গেল তার গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা জরায়ুর নিচে অবস্থিত। তাই সিজারিয়ানের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত বাচ্চা ডেলিভারি করতে হলো।


উপরের দুটি দৃশ্যপট আমার দুইজন পেশেন্টের যারা সমাজের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে এসেছিলেন। এরা দুজনেই নরমাল ডেলিভারি করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাদের সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছিল। আসলে নরমাল ডেলিভারি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে অস্বাভাবিক পথে চেষ্টা চালানোর কোনো প্রয়োজন নাই। তবে ইদানীংকালে দেখা যায় মায়েরা সঠিক নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে কুসংস্কারগুলো ফলো করতে থাকে এবং স্বাভাবিক ও সহজ পথ থেকে দূরে সরে যায়। তাই কিভাবে নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি সঠিকভাবে মায়েরা নিতে পারেন তার কিছু গাইডলাইন দেয়া হলো

নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নিতে ৬টি বিষয়


১. শরীরের স্বাভাবিক ওজন : নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতির প্রথম শর্তই হলো ওজন স্বাভাবিক রাখা। একটি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেইন্টেন করতে হবে- যাতে শরীরের ওজন (ইগও) স্বাভাবিক থাকে। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা কমে যায় এবং ডেলিভারির সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে।

২. প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা : যাদের প্রেগনেন্সির পূর্ব থেকেই বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সমস্যা যেমন- প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে, যাতে গর্ভাবস্থায় এ সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৩. সিজারের পরও নরমাল ডেলিভারি করা যায় : যাদের একবার সিজার হয়েছে তারাও পরে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এটি ডিপেন্ড করবে পূর্ববর্তী সিজার কি কারণে হয়েছিল এবং আরো কিছু ফ্যাক্টর এর উপর। বাংলাদেশের কিছুকিছু কর্পোরেট হসপিটালে এই ডেলিভারি প্র্যাকটিস করা হয়।

৪. মাঝারি মানের ব্যায়াম : প্রেগনেন্সির প্রথম থেকেই মায়েদের উচিত নরমাল অ্যাকটিভিটি চালিয়ে যাওয়া। কিছু কিছু প্রেগন্যান্ট মায়েরা (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্রিটার্ম ডেলিভারির হিস্ট্রি ইত্যাদি) ছাড়া অন্য সবাই এসময় হালকা থেকে মাঝারি মানের ব্যায়াম এবং সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। অনেকে প্রেগনেন্ট হলেই ভাবেন এখন তাকে রেস্টে থাকতে হবে। যার ফলে ডায়াবেটিস, প্রেসার, ওজন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা কমে যায়।

৫. মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন : মানসিক প্রস্তুতি এখানে একটি বড় ভূমিকা রাখে। সব মায়েদেরই মনে রাখতে হবে নরমাল ডেলিভারি একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া হলেও মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই এর সুফল রয়েছে। আর ডেলিভারি পেইন সহ্য করার মতো মানসিক প্রস্তুতি শুধু মাকে নিলেই চলবে না। পরিবারের অন্যদের উৎসাহ এবং সাপোর্ট এ ক্ষেত্রে অতি জরুরি।

৬. ডেলিভারি পেইন : ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য কোরনা ধরনের ওষুধ বা খাবারের দরকার হয় না। এটি আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রক্রিয়া যা স্বাভাবিক নিয়মে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পরও না হলে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ইন্ডাকশনের (রহফঁপঃরড়হ) মাধ্যমে ডেলিভারি পেইন উঠানো সম্ভব। এজন্য অধিক টেনশন বা দুশ্চিন্তা না করে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শে থাকবেন।

সবশেষে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সবরকম মানসিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে যখন নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা করলে মা ও বাচ্চা উভয়ের ক্ষতি হতে পারে, এ সময় সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি না করাই ভালো। সর্বক্ষেত্রেই আল্লাহর উপর ভরসা করে একটি সুস্থ বাচ্চা আশা করা উচিত।

advertisement

Posted ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.