বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
ভ্যাকসিন বিতর্ক : সিটির ৭০০ ফায়ার-ফাইটারের হুমকি : সঙ্কটে শ্রমবাজার

চাকরি ছাড়ছেন রেকর্ড সংখ্যক আমেরিকান

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

চাকরি ছাড়ছেন রেকর্ড সংখ্যক আমেরিকান

ছবি : সংগৃহীত

রেকর্ড সংখ্যায় চাকরি ছাড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরা। শ্রম বিভাগের সর্বশেষ জব ওপেনিং এবং লেবার টার্নওভার জরিপে দেখা গেছে যে, আগস্ট মাসে ৪৩ লাখ আমেরিকান চাকরি ছেড়েছে। এই সংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সমস্ত কর্মীর ২.৯ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ চাকরি ছাড়ার রেকর্ড। এদিকে, আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির সংস্থান সামান্য কমে ১০.৪ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪ লাখে নেমে এসেছে, জুলাইয়ে যা ১১.১ মিলিয়ন (১ কোটি ১১ লাখ) ছিল। চাকরি ছাড়ার এই উচ্চ হার সাধারণত আমেরিকান কর্মীরা তাদের চাকরির সম্ভাবনা সম্পর্কে কতটা আত্মবিশ্বাসী তার দিকেই ইঙ্গিত করে।

কিন্তু এবারের তথ্যে গভীরভাবে ডুব দিলে বোঝা যায় যে, কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও শ্রমিকদের চাকরি ছাড়ার কারণ হতে পারে। বাসস্থান এবং খাদ্য পরিষেবা খাতে গ্রাহকদের মুখোমুখি হয়ে কাজ করতে হত এমন প্রায় ৮,৯২,০০০ কর্মী আগস্টে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, যা আগের মাসের তুলনায় ১,৫৭,০০০ বেশি। চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়া লোকের সংখ্যা এবং চাকরির শূন্যপদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।


গত বছর কোভিড লকডাউনের প্রথম ঢেউয়ে ২২ মিলিয়ন (২ কোটি ২০ লাখ) মানুষ চাকরি হারিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে এখনও প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিজনেসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিক বলেছেন যে, তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ আছে কিন্তু সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা পূরণ করার জন্য লোক পাওয়া যাবে না। শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাইনিং বোনাস এবং মজুরি বাড়ানোর মতো প্রণোদনা দিয়ে আসছে। প্রায় ৪২ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেছেন যে, তারা গত মাসে বেতন ভাতা বাড়িয়েছেন। এটি আগস্ট থেকে এক পয়েন্ট উপরে এবং ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা, শিশুদের যত্নের ব্যবস্থার অভাব এবং সরকারের উদ্দীপক ডলারে পূর্ণ সঞ্চয়ী হিসাব সবই শ্রমিকদের চাকরি ছাড়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিঃসন্দেহে চাকরির বাজার কিছু সম্ভাব্য বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।


ফেডারেল বেকারত্বের সুবিধাদিও সেপ্টেম্বরের শুরুতে শেষ হয়ে গেছে, মার্কিন শ্রম বিভাগের মাসিক চাকরির তথ্য সংকলনের এক সপ্তাহ আগে; তাই সামাজিক নিরাপত্তা জালে সেই শূন্যতার প্রভাব এখনও নতুন তথ্যে দেখা যায়নি। এবং কনফারেন্স বোর্ডের ভোক্তাদের আস্থার পরিমাপ- যা বর্তমানে অর্থনীতি সম্পর্কে এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশা সম্পর্কে মানুষ কেমন অনুভব করে তাও নির্ধারণ করে- তাতে আগস্টের তীব্র পতনের পর সেপ্টেম্বরেও পতন ঘটেছে।

ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করলে ৭০০ ফায়ার-ফাইটারের চাকুরি ছাড়ার হুমকি


নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপার্টমেন্ট ও পুলিশ ডিপার্টমেন্টের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নেয়নি। গত ৬ অক্টোবর নিউইয়র্ক সিটির ফায়ার কমিশনার ডেনিয়েল নিগ্রো এবং পুলিশ কমিশনার ডারমন্ট শেয়া তাদের সংস্থার সদস্যদের ভ্যাকসিন নেয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি অনুমোদন করার পর ভ্যাকসিন নেয়ার বিরুদ্ধে ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি উঠেছে।

ইউনিফর্মড ফায়ারফাইটার্স এসোসিয়েশন হুমকি দিয়েছে যে তারা ভ্যাকসিন বাধ্যবাধকতা পালনের পরিবর্তে বরং চাকুরি ত্যাগ করাকেই বেছে নেবেন। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আনুমানিক ৭০০ ফায়ারফাইটার চাকুরি ছাড়তে পারে। উল্লেখ্য, সিটির দুটি সংস্থার ক্ষেত্রেই ইতিপূর্বে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল যে, যারা ভ্যাকসিন নেবে না, তাদেরকে নিয়মিত করোনা ভাইরাস টেস্ট করাতে হবে। মেয়র বিল ব্লাজিও শিক্ষা বিভাগের সকল কর্মচারি ও শিক্ষকের জন্য ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে এবং নিউইয়র্ক স্টেট স্বাস্থ্য বিভাগের সকল সদস্যের জন্য ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করেছে।

ইউনিফর্মড ফায়ারফাইটার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডি অ্যান্সব্রো বলেছেন যে, ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করা হলে ফায়ার ডিপার্টমেন্টের ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে।

বহু সদস্য চাকুরি ত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে এবং সে ধরনের কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ডিপার্টমেন্ট পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি হবে। কারণ ন্যাশনাল গার্ড তলব করে ফায়ারফাইটারের কাজ করা সম্ভব নয়। আমরা কোনোমতে আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি নিজে ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে হলেও তার বিভাগের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, এবং তার আনুমানিক হিসেবে ৬০০ থেকে ৭০০ ফায়ারফাইটার পদত্যাগ করতে পারেন।

ডিষ্ট্রিক্ট কাউন্সিল ৩৭ এর লোকাল ২৫০৭ এর প্রেসিডেন্ট ওরেন বারজিলে, যিনি ইমার্জেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ানস এন্ড ফায়ার-প্রটেকশন ইন্সপেক্টরদের দায়িত্বশীল, তিনিও তার সদস্যদের মধ্যে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করা হলে আমার অনেক সদস্য চাকুরি ছেড়ে দেবে। আমরা ভ্যাকসিন বিরোধী নই, কিন্তু যারা তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য বিধি ও ধর্মীয় কারণে ভ্যাকসিন নিতে অনিচ্ছুক, তাদের সে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকা উচিত। তার বিভাগের অনেক সদস্য বিশ্বাস করেন যে, প্রাকৃতিকভাবে মানুষের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের চেয়ে কার্যকর।

কর্মী সঙ্কটে শ্রমবাজারে শ্লথগতি

করোনা প্রাদুর্ভাবের বেশ বড় প্রভাব পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও চাকরির বাজার এখনো গতি ফিরে যায়নি। দেশটির বহু প্রতিষ্ঠান এখনো শূন্য পদগুলোর জন্য যথাযথ কর্মী নিয়োগ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে কেবল ১ লাখ ৯৪ হাজার মানুষ নতুন কাজে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এখনো ফাঁকা পড়ে আছে বহু পদ। শ্রম বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে। কারণ কিছু মানুষ তাদের প্রয়োজন মতো চাকরি খুঁজে নিতে পেরেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।

মানুষের কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছে, রেস্তোরাঁগুলোতেও গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এখনো চাকরির বাজারে গতি আসেনি। বহু নিয়োগকর্তা কর্মী খুঁজে হয়রান হচ্ছেন। কারণ মহামারীতে চাকরি হারানো অনেক মানুষই এখনো কাজে ফিরতে আগ্রহী নন। সে কারণে কর্মী সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার। তবে সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কারণ স্কুলগুলো খুলে গেছে, কর্মজীবী মায়েদেরও কাজে ফিরতে হবে। আবার সরকারের বর্ধিত বেকারত্ব কর্মসূচির মেয়াদও সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ শেষ হয়েছে। কিন্তু যে গতিতে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সে গতিতে এ খাতে পুনরুদ্ধার হয়নি। আদমশুমারি ব্যুরোর জরিপে উঠে এসেছে যে, অনেক মানুষ এখনো কাজ খুঁজতে পারছে না। কারণ হয় তারা কভিড-১৯ আক্রান্ত নয়তো পরিবারের কভিড আক্রান্ত কোনো সদস্যের খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ারও ভয় করছেন কেউ কেউ। অনেক কর্মী মনে করছেন, শীতকালীন ও বড়দিনের ছুটি কাটিয়ে তবেই একেবারে কাজে ফিরবেন। কেউ কেউ এরই মধ্যে কাজে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় সে পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রেখেছেন। সবশেষ বর্ধিত যে বেকারত্ব ভাতা দেয় সরকার, সেটিকে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেছিলেন। অনেক ব্যবসায়ী বলেন যে, সপ্তাহে ৩০০ ডলারের প্রণোদনার কারণে অনেকেই কাজে ফিরতে অনাগ্রহী হয়ে উঠবেন।

বাস্তবে সেটিই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। যদিও সহায়তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তার পরও কাজে ফিরতে আগ্রহী হননি দেশটির কর্মীরা। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়ে যাওয়ায় নতুন কর্মী খুঁজতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্মী আকর্ষণে নানা রকমের লোভনীয় প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কর্মীর দেখা মিলছে না। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এ পরিস্থিতিকে রহস্যময় বলে অভিহিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। কবে নাগাদ এ থেকে উত্তরণ ঘটবে, তা যেন সবারই অজানা। এপি।

advertisement

Posted ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.