বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত ১ মার্চ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ স্কুল শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) সোমবার একটি প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মোট আক্রান্তের চার শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থীরা। আর এদের মধ্যে যাদের বয়স ৫ থেকে ১১ তাদের তুলনায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীরা দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বসন্তকালে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং গ্রীষ্মকালে তা কমে যায়। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৫ স্কুল শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৩ হাজার ২৪০ জনকে। এর মধ্যে ৪০৪ জনকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। এছাড়া করোনায় ৫১ স্কুল শিক্ষার্থী করোনায় মারা গেছে। শিশুদের মধ্যে যাদের ফুসফুসে সমস্যা এবং হাঁপানি ছিল তাদের অবস্থাই বেশি গুরুতর হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) ।এ প্রতিবেদন নিয়ে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, যেখানে করোনার সংক্রমণ কম সেখানে স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া নিরাপদ হতে পারে। কিন্তু যেখানে করোনার সংক্রমণ বেশি সেখানে স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
নিউইয়র্কে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
নিউ ইয়র্কে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এপ্রিলে যেখানে বিশ্বের যেকোন একটি দেশের চেয়ে অধিক পরিমাণে করোনা সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল। ফলে গা শিউরে উঠার মতো এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয় এই রাজ্যে। কর্তৃপক্ষ কয়েক মাসের চেষ্টায় সেই সংক্রমণ কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সোমবার গভর্নর অ্যানড্রু কুমো সতর্ক করেছেন। বলেছেন, কোভিড-১৯ পরীক্ষায় আবার পজেটিভের হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১.৫ ভাগ। এ রাজ্যের জন্য এটা এক উদ্বেগজনক অবস্থা। কারণ, এর আগে সেখানে এই হার ছিল শতকরা প্রায় ১ ভাগ।এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, কিছু এলাকায় উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ। এর মধ্যে রয়েছে ব্রুকলিন ও কুইন্স। এসব এলাকায় বসবাস করেন বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী। নতুন করে এই সংক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের আরো অনেক এলাকার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ৪০ হাজার। দু’সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫ হাজার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ২৭টিতে গত দু’সপ্তাহ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে লুকোচুরি বাড়ছে
করোনাভাইরাসের বিস্তার এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে চারপাশে এখন সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের বিষয়টি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি হলেও একে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে আগের মতোই। শুধুমাত্র কোভিড পজিটিভ শুনেই অনেকের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এই আতঙ্ক এতটাই চরমে পৌঁছায় যে অনেকে উপসর্গ থাকার পরেও পরীক্ষা করা তো দূরের কথা, ধরা পড়লেও তা জানাতে চান না। এমনকি তারা যে অসুস্থ তাও স্বীকার করতে চাইছেন না। ফলে তাদের কারণে আরও অনেক মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে কন্টাক্ট ট্রেসিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণের ব্যাপার গোপন করলে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের কিছু করার থাকে না। কিন্তু সংক্রমণ সংক্রান্ত মানুষের মনস্তাত্ত্বিক চাপ রয়েছে তা অনেকটাই দূর হতে পারে। গবেষকরা মনে করেন, সংক্রমণ সংক্রান্ত এমন ভয় মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে গেড়ে বসতে পারে, যা নতুন রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
মানুষ কেন সংক্রমণের ব্যাপারটি গোপন করছে এর পুরো দায় তাদের ওপর নয়। বিষয়টি নিয়ে বৈশ্বিকভাবেই গবেষকরা কাজ করছেন। পরীক্ষার ফলে একজন মানুষ তার শরীরে করোনার সংক্রমণ বিষয়ে জানতে পারেন। কিন্তু একই সঙ্গে তার মনে আরেকটি প্রশ্ন আসে, ‘আমি কি যথেষ্ট সচেতন ছিলাম না? আমি কি পর্যাপ্ত পূর্বপ্রস্তুতি নিইনি?’ বহু করোনা রোগীকে এমন প্রশ্ন করতে দেখা গেছে। তারা মনে করছেন, করোনা পরীক্ষার কারণেই তারা প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
করোনায় আক্রান্তদের জন্য এই ভয় খুবই ভীতিকর। কারণ ভয় মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মানুষের যুক্তিবোধ-বিচারবুদ্ধিকে প্রভাবিত করে ভয়। সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা আড়াল করার আরও একটি কারণ ভাইরাসটি শরীরে থাকার মেয়াদ। মানুষ মনে করে, ভাইরাসটি শরীরে ১৪ বা ২১ দিন পর্যন্ত থাকে, এরপর ভাইরাসের ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। তখন আক্রান্ত ব্যক্তি কোনোমতে ১৪ অথবা ২১ দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু এই প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রেই আত্মঘাতী হয়ে যায়।
কিছুদিন আগেও মানুষ জানত না করোনাভাইরাস কতটা দ্রুত ছড়াতে পারে। কিন্তু একদল গবেষক বিষয়টি খোলাসা করেন পরীক্ষার মাধ্যমে। তাদের মতে, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় অনেক ভুল সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মনগড়া ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই ধারণাগুলো সামাজিক পর্যায়ে সহজেই মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।
Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh