আমেরিকার সিটিজেন নয়, কিন্তু গ্রীনকার্ডধারী বা আমেরিকার বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা এবং যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার বৈধতা আছে, এমন প্রায় আট লাখ ইমিগ্রান্টকে ভোটাধিকার দেওয়ার সুযোগ দানের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম এ ধরনের অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তবে এ ভোটাধিকার সীমিত থাকবে শুধুমাত্র স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তারা জাতীয় বা স্টেটের কোনো নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের যোগ্য বিবেচিত হবেন না। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সামনে এ ধরনের একটি আইনের বিল বিবেচনাধীন রয়েছে, যা আগামী মাসেই (ডিসেম্বর) পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা এই ভোটাধিকার পাবেন তাদের মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজার ডোমিনিকান রিপাবলিকের।

“আওয়ার সিটি, আওয়ার ভোট” নামে প্রস্তাবিত বিলটি আগামী ৯ ডিসেম্বর সিটি কাউন্সিলে পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে শুধু নাগরিকরাই ভোট দেওয়ার অধিকারী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের আইন তৈরি হচ্ছে, এছাড়াও রয়েছে অর্থনৈতিক কারণে লোকজনের অন্যত্র সরে যাওয়ার ফলে উদ্ভুত সমস্যা, যার প্রভাব নিউইয়র্কেও পড়েছে এবং নিউইয়র্কের একটি কংগ্রেসনাল আসন কমে গেছে। আলাবামা, কলোরাডো ও ফ্লোরিডার ভোটাররা গত বছর একটি ব্যালট ইস্যু পাস করেছে, যাতে যেকোন নির্বাচনে শুধু আমেরিকান নাগরিকদের ভোটাধিকারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দান করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে অ্যারিজোনা ও নর্থ ডাকোটা এবং ননসিটিজেনদের স্টেট ও স্থানীয় নির্বাচনেও ভোটাধিকার না দেওয়ার কথা বলেছেন।

সিটি কাউন্সিলে বিলটির উত্থাপক আপার ম্যানহাটানের ওয়াশিংটন হাইটস এর কাউন্সিলম্যান ইদানিস রডরিগজ বলেছেন যে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য নিউইয়র্ক সিটির দিকে লক্ষ্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সকলের দেখা উচিত যে ভোটাধিকার কিভাবে খর্ব করা হচ্ছে, সেজন্য আমরা ভোটারদের অংশগ্রহণ সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। বিলটি প্রথম উত্থাপিত হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এক দশকের বেশি সময় আগে থেকে স্থানীয় নির্বাচনে গ্রীনকার্ডধারীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার জন্য কাজ করে আসা হচ্ছিল। বিলটি পাস হলে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় থাকা অনেক ওয়ার্ক পারমিটধারী ইমিগ্রান্টও ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন, যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে অবৈধভাবে শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশে তাদেরকে ডিপোর্টেশন করার বাইরে রেখে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্রে অনাগরিকদের ভোট দেওয়ার অধিকার স্বীকৃত ছিল, যা বিংশ শতাব্দীর সূচনা রদ করা হয়, যখন ক্রমবর্ধমান হারে ইমিগ্রান্টরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে শুরু করেছিল। দুই দশক আগেও অনাগরিকদের নিউইয়র্ক সিটির স্কুলবোর্ডের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল, যা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এ অধিকার এখনো স্যানফ্রানসিসকোতে বহাল রয়েছে। মেরিল্যান্ড ও ভারমন্টের বেশ ক’টি সিটিতে অনাগরিকদের মিউনিসিপ্যালিটেতে ভোট দেওয়ার অধিকার এখনো স্বীকৃত। তবে নিউইয়র্কের মত জনবহুল সিটিতে স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার দেওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত, যা অন্যান্য বড় সিটি অনুসরণ করতে পারে। উল্লেখ্য, সিটি মেয়রের অফিসের তথ্য অনুসারে নিউইয়র্ক সিটিতে আনুমনিক ৮ লাখ ৮ হাজার বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রীনকার্ডধারী এবং ওয়ার্কপারমিটধারী রয়েছেন, যাদের মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজার ডোমিনিকান রিপাবলিকের, ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ জন চীনের। বিলে নিউইয়র্ক সিটিতে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দানের অধিকারী হওয়ার জন্য নির্বাচনের তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে এই বিলের প্রতি উচ্ছসিত সমর্থন ব্যক্ত করেছে ইমিগ্রান্ট রাইটস সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি নাগরিক অধিকার সংগঠন। নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশ ও ইউনাইটেড নেইবারহুড হাউজেস এর নেতৃত্বে ‘আওয়ার সিটি আওয়ার ভোট কোয়ালিশন’ এবং নিউইয়র্কের ইমিগ্রান্টরা গত ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার ‘নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল বিল ইনট্রো ১৮৬৭’ এর উপর ৩৫ জন কো-স্পন্সরের সুপারমেজরিটিকে উদযাপনের জন্য সিটি হলের সামনে সমবেত হয়। তারা কাউন্সিল স্পিকার কোরি জনসনকে ধন্যবাদ জানায় আগামী ৯ ডিসেম্বর বিলটির উপর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করায়। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, বিভিন্ন স্টেটে যখন ভোটারদের উপর নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য বিল আনা হচ্ছে, তখন নিউইয়র্ক সিটি ননসিটিজেনদের ভোটাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৪৮টি স্টেটে প্রায় ৪০০ ভোটার অবদমন আইনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।