মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য বেশ কিছু কূটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। গত মার্চ থেকে প্রতিটি সংস্থার জরিপে ট্রাম্প পিছিয়ে রয়েছেন এবং কোন একটি জরিপেও তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে যেতে পারেননি। সেজন্য ট্রাম্প এখন দিশেহারা। কিন্তু যেভাবেই হোক নির্বাচনে তাকে জয়ী হতেই হবে আর সে কারণেই তিনি এখন হাতে নিয়েছেন ‘ভ্যাকসিন কৌশল’। কারণ প্রেসিডেন্ট মনে করেন যে করোনা ভ্যাকসিন প্রস্ততের ঘোষণাটি দিতে পারলে তিনি এককভাবে পুরো এর কৃতিত্ব গ্রহণ করতে পারবেন এবং এর ফলে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে।এ উদ্দেশে তিনি প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছেন ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি এবং ইউএস ফুড এন্ড ড্রাগ্র এডমিনিষ্ট্রেশনের উপর। যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা ও প্রয়োগের সাফল্যের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো উৎপাদনে যাবে এবং বাজারজাত করা হবে। বাজারজাত করার আগেও ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিষ্ট্রেশনের আরেক দফা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রায় প্রস্তুত। এরপর গত সোমবার লেবার ডে উইকএণ্ডে হোয়াইট হাউজ থেকে সর্বশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা খুব শিগগির ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি, হয়তো বা বিশেষ কোন তারিখের পূর্বে। আপনারা জানেন আমি কি বলতে চেষ্টা করছি।” তিনি আরো বলেন, আমি অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে কথা বরৈছি। আমি বিখ্যাত জনসন এন্ড জনসন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে ভালো আশ্বাস দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের সাংবাদিক সম্মেলনের পরই সিএনএন এর হোয়াইট হাউজ সংবাদদাতা তার বিশ্লেষণে বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের প্রথম দিকে হয়তো ভ্যাকসিন প্রস্তু হবে। সিএনএন সংবাদদাতা জিম অ্যাকোষ্টা বলেন, প্রেসিডেন কেন এই সময়ে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কথা বলছেন তা বোধগম্য নয়। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে প্রেসিডে ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিষ্ট্রেশনের উপর জাপ সৃষ্টি করছিলেন ‘প্লাজমা থেরাপিকে’ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন হিসেবে অনুমোদন দেয়ার জন্য। কিন্তু এফডিএ’ সেটি নাকচ করে দিয়েছে। গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাংবাদিক সম্মেলনের কিছুক্ষণ পরেই সিএনএন এর সাথে এক সাক্ষাতকারে ইন্সটিটিউট ফর এলার্জি এণ্ড ইনফেকশাস ডিজিজ এর ডাইরেক্টর ডা: এন্থনি কাউসি বলেন, কিছু আগে প্রেসিডেন্ট ‘আমাদের ভ্যাকসিন প্রায় প্রস্তুত’ একথা বলার মাধ্যমে কি বলতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। কিছু স্টেটে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমলেও মন্টানা, মিশিগান, মিনেসোটা এবং ডাকোটায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখনো উর্ধমুখী। মানুষ যাতে কোনভাবেই মাস্ক ব্যবহার বন্ধ না করে সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
প্রেসিডেন্টের অব্যাহত চাপের কারণে সিডিসি ও এফডিএ’র চিকিৎসা বিজ্ঞানি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে থেকে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠান দুটির স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতা নিয়ে। তাদের পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে যাতে এই সংস্থা দুটিতে রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করে পুরো নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নিয়োগ দেয়া হয়। আরো দাবী উঠেছে যে আইন প্রনেতাদের উচিত এক্ষেত্রে এগিয়ে এসে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এ সম্পর্কে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ডরিট রিজ সিএনএন এর সাথে বলেছেন, সিডিসি এবং সিডিসিতে রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শুধু আইন প্রনেতারা। উল্লেখ্য, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টরের নিয়োগ দিয়ে থাকেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট। তিনি ইচ্ছা করলে তাদেরকে যে কোন সময়ে পদচ্যুতও করতে পারেন। সিডিসির ডাইরেক্টরকে নিয়োগ দেয়ার পর সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না। তবে এফডিএ’র ডাইরেক্টরকে নিয়োগ দিলে সিনেটের অনুমোদন লাগে।
Posted ১০:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh