| বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩
ইসরায়েলের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। গত ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাস নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায়। মাত্র ২০ মিনিটে হাজার পাঁচেক রকেট ছুড়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় হামাস। ভেদ করে ইসরায়েলের নিñিদ্র সুরক্ষাবলয়কে। শুধু তা-ই নয়, সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে হামাসের যোদ্ধারা। শুরুতে হতবাক হলেও দ্রুত পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েল। পাল্টা আক্রমণ করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। এর পর থেকে ফিলিস্তিনে মুহুর্মুহু বোমা পড়ছে। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। হামাসের হামলা ও ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করার পর গত ১০ অক্টোবর সকালে বিমানবাহিনী হামলা আরও জোরদার করেছে। গাজায় ২৩ লাখ মানুষের খাবার, পানি, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেখানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। বোমার আঘাতে বিভিন্ন আবাসিক ভবনগুলো একের পর এক ধসে পড়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে আনা হচ্ছিল মরদেহ। তবে এসব মরদেহের কোনোটাই হামাস যোদ্ধাদের নয়। নিহত সবাই বেসামরিক সাধারণ নাগরিক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু। আহতদের চিকিৎসকার জন্য ডাক্তারও কিছু করতে পারছেন না। কারণ হাসপাতালের সরবরাহ ফুরিয়ে গেছে। নেই কোনো আলোর ব্যবস্থা। ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলা এবং গাজা অবরুদ্ধ হওয়ায় এখন সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান নিজেদের সভ্য দাবি করে যুগের মানুষ । রয়েছে বিশ্বের সব মানুষের সমতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি তাদের। জাতিসঙ্ঘের অধীনে এ জন্য প্রণীত হয়েছে বহু সনদ। এগুলোর মর্মকথা- ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে কারো মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না। বাস্তবে এসব আইন কিংবা সনদ অনুশীলনে তীব্র বৈষম্য লক্ষণীয়। সাত দশক ধরে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলছে নির্মম পীড়ন। সব কিছুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে যাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিরা যখন অব্যাহতভাবে কোনো প্রতিকার পান না; তখন দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার।
সম্প্রতি বছরগুলোতে ইসরাইলি সেনারা পবিত্র এ মসজিদের আঙিনায় বেশ কয়েকবার আক্রমণ করে মুসল্লিদের রক্তাক্ত করেছে। যখন ফিলিস্তিনিরা এসবের কোনো জবাব দিতে চান, পাল্টা আক্রমণে সব সময় আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবারো তাদের অনেক খেসারত দিতে হবে। তবে এবারের সুপরিকল্পিত আক্রমণের জন্য হামাস দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়েছে। এর পেছনে আরেকটি বিশেষ কারণ ছিল। মূলত মুসলিম বিশ্বের কাছে তাদের আবেদন ইতোমধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। ক্রমে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো তাদের ভুলে যাচ্ছে। অনেকে জোরালো সম্পর্ক তৈরির পথে হাঁটছে ইসরাইলের সাথে। এ হামলার মাধ্যমে তারা সবাইকে আবার যেন ফিলিস্তিনি মুসলমানদেরও স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে তা জানান দিলো।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনের প্রতি সঙ্গত আচরণ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বব্যবস্থা বরাবর ইসরাইলের আগ্রাসী নীতির সমর্থন জোগাচ্ছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিনে স্পষ্টত মানুষ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। ফিলিস্তিনিদের ওপর সব পৈশাচিকতা চালানোকে এক ধরনের বৈধতা দেয়া হয়েছে। এ জন্য তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা, হত্যা করা- কখনো অপরাধ বিবেচিত হয় না। নিঃশর্তে নিজ ভূমে ফিলিস্তিনিদের ফিরতে না দিলে, দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি-পানি-সম্পদ ফিরিয়ে না দিলে এবং জাতিগত নিশ্চিহ্নকরণের জন্য ক্ষমা না চাইলে আর যা-ই হোক, শান্তি আসবে না। ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এখনই সময়।
Posted ১২:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh