বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ফোবানা সম্মেলন ও নূতন প্রজন্মের শিক্ষা

মন্তব্য প্রতিবেদন :   |   বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফোবানা সম্মেলন ও নূতন প্রজন্মের শিক্ষা

ছবি : সংগৃহীত

ফোবানা সম্মেলন থেকে এবার নতুন প্রজন্ম নজীবিহীন শিক্ষা লাভ করেছে। প্রত্যক্ষ করেছে আঙ্কেলদের মারামারি, ধ্বাস্তাধস্তি। আর এমন ঘটনা ঘটেছে ওয়াশিংটন ডিসির সন্নিকটে ভার্জিনিয়া রাজ্যের আর্লিংটনস্থ বিলাসবহুল হিলটন ক্রিস্টাল হোটেলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অর্গানাইজেশনস ইন নর্থ আমেরিকা- ফোবানা’র ৩৫তম সম্মেলনে। লেবার ডে উইকেন্ডে বহুল আলোচিত ফোবানার একাংশের এ সম্মেলন যেমন ছিলো জমকালো তেমনি ছিলো বিশৃংখলা ও অনিয়মে ভরপুর। এসবই গতানুগতিক এবং অতীতমুখী।

ফোবানা সম্মেলন ঘিরে বিভক্তি, বিভেদ, নেতৃত্বের কোন্দল, মামলা মোকদ্দমা এবং আড়ালে আবডালে ছোট-খাট হানাহানির ঘটনা নুতন কিছু নয়। দিন যত যাচ্ছে ফোবানার গন্ডি ততোই ছোট হয়ে আসছে। কমছে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা। আকর্ষন হারিয়ে ফেলছে সাধারণ দর্শক শ্রোতা-তথা প্রবাসী বাংলাদেশীরা। তারপরও নানা প্রতিকূলতার মাঝে প্রতিবছরই প্রতিযোগিতা চলছে ফোবানা সম্মেলন আয়োজনের। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফোবানার ৩৫তম সম্মেলন ঘিরে ওয়াশিংটন কেন্দ্রিক দু’টি পৃথক সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছিলো বছর ধরে। শেষ পর্যন্ত একটি পক্ষ রণে ভঙ্গ দিয়ে লেবার ডে উইকেন্ড থেকে পিছিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করেছে নভেম্বরে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র ছুটিতে।


গত সপ্তাহে ফোবানা সম্মেলনের প্রথম দিনটা ভালো কাটলেও বিপত্তি ঘটে দ্বিতীয় দিনে। আয়োজক এবং স্টিয়ারিং কমিটির কর্মকর্তাগণ জড়িয়ে পড়েন সংঘাতে। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক নির্বাহী কমিটির সম্পাদককে সজোরে চড় মারেন। সম্পাদক মহোদয়ও পাল্টা আঘাত হানার চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হলেও উপস্থিত অপর কর্মকর্তার ধাক্কায় ভূপাতিত হন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক। হোটেল ক্যাফেটেরিয়ায় ঘটনাস্থলে এসময় উপস্থিত ছিলেন ফোবানার শীর্ষ কর্মকর্তাগণ।

সম্মেলনে অ্যাসাল’র অংশীদারিত্ব নিয়ে ফোবানা সম্পাদকের প্রশ্নে ৩৫তম সম্মেলনের আহ্বায়ক যারপরনাই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার মারমুখীতায় হতবাক হয়ে যান সবাই। ফোবানা কর্মকর্তাদের নিকট বিষয়টি অস্বাভাবিক না ঠেকলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পাশের টেবিলে উপস্থিত মহিলা ও বেশ ক’জন শিশু। ঘটনাস্থলের সন্ত্রস্ত নূতন প্রজন্মের শিশুদের সামনের মারামারির একটি ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এবং বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অন লাইন পোর্টালে ছড়িয়ে পড়ে সংবাদটি। ভাইরাল হয়ে যায় ফোবানা কর্মকর্তাদের মারামারির ভিডিওটি দ্রুত। সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠে দেশ ও প্রবাসে। এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ফোবানার চেতনা ও কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে। নূতন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত রাখার পাশাপাশি দেশ ও প্রবাসের মাঝে সেতু বন্ধন তৈরীই নাকি ফোবানার মূলমন্ত্র। এবারের সম্মেলনের পূর্বেও আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তাগণ এমন উক্তি করেছেন।


কিন্তু কার্যত ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। নূতন প্রজন্মের কথা বলে তাদের সাথে বাহাস করা হচ্ছে। তারা লিপ্ত হয়েছেন ফ্রি স্টাইল মারামারিতে নূতন প্রজন্মের সন্তানদের সামনে। এ ঘটনায় ম্লান হয়ে গেছে ৩৫তম ফোবানার সব সাফল্য। আর নূতন প্রজন্মই বা কি বার্তা পেলো। এ ঘটনায় সম্পৃক্ত উভয় পক্ষেরই পরিবার পরিজন এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তারাও ছিলেন একই হোটেলে। বিষয়টি নিশ্চয়ই তাদের জন্য ছিলো অত্যন্ত বিব্রতকর। সামান্য একটি কথাকে কেন্দ্র করে এধরণের ঘটনা ঘটানো কোনভাবেই ব্যক্তি বিশেষের স্বাভাবিকতা প্রমাণ করেনা।

জানা গেছে, এ ঘটনার পর কোন ধরণের ক্ষমা প্রার্থনা বা সমঝোতা হয়নি বিবাদমান দু’জনের মাঝে। পরদিন তারা আবারও আরোহন করেছেন একই মঞ্চে। আইনি কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি কেউ। তবে যে শিশুরা ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মানসিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন তাদের কি হবে? তাদের ক্ষত সারবে কিভাবে? এই মেন্টাল ট্রমা তাদেরকে বহন করতে হবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত। তারা ভবিষ্যতে কি এসব অনুষ্ঠানে আসবে? আর আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতিই বা কতোটা শ্রদ্ধাশীল হবে নূতন প্রজন্ম বাপ-চাচাদের কান্ড দেখে। নূতন প্রজন্মকে এসব শেখানোর দায়ভার নিয়ে নিজেরাই যেখানে মারপিট করছে সেখানে কিইবা আশা করা যায়। এজন্যই বলে ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও।’ নেতৃত্বের মোহ এবং অর্থ কড়ি নিয়ে বিভেদে জড়িয়ে পড়ার সংগঠন ফোবানা নয়। যারা এসব কর্মে অভ্যস্থ তাদের উচিত হবে নিজ থেকেই সরে পড়া। সমাজকে কলুষিত করা থেকে বিরত থাকা। কেউ কেউ সাফাই গাইছেন অঘটন মূল মঞ্চে ঘটেনি। এটি লুকানো-ছাপানোর বিষয় নয়। তাবৎ দুনিয়ার মানুষ ভিডিও দেখেছে।


ইতিপূর্বেও ফোবানা নিয়ে বিরোধের কারণে এক নেতা নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনের গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। ফোবানার প্রতি এখন আর কোন আগ্রহ বা আকর্ষণ নেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের। ১৯৮৭ সালে একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শ, উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন নিয়ে ফোবানার পথ চলা শুরু হয়েছিলো। উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি করা।

বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারা উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে জাগরুক রাখা। দেশ ও প্রবাসের মাঝে সেতু বন্ধন সৃষ্টি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত করে সম্মিলিত ভাবে তা সমাধানে ব্রতী হওয়া ইত্যাদি কল্যাণকর কর্মকান্ড চালানো। মোটকথা ফোবানার উদ্যোগ আয়োজনই ছিলো বাংলাদেশীদেরকে কল্যাণ ঘিরে। এজন্য ফোবানার উদ্যোগে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হতো উত্তর আমেরিকা বাংলাদেশ সম্মেলন। কালক্রমে সম্মেলনের নাম বদলেছে। পাল্টেছে লগো। নেতৃত্বের কোন্দলে একাধিক ধারায় এখন প্রবাহিত ফোবানার স্রোত। এ বিভক্তির পেছনে যেমন নেতৃত্বের মোহ কাজ করছে তেমনি এর পেছনে আছে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক স্পৃহা, ব্যক্তিগত ইগো আর্থিক লেনদেন ও পারস্পরিক অশ্রদ্ধা।

আমেরিকান সমাজে পারস্পরিক বাক-বিতন্ডা, গালিগালাজ পর্যন্ত চলে। এ পর্যায়ে মারপিটের মহড়া করলেও কেউ সাহস করে না গায়ে হাত দেয়ার। আইনের চোখে এটা ফৌজদারি অপরাধ। কিল থাপ্পড় একবার পিঠে পড়লে হাইকোর্ট করেও তা সুরাহা করা যায় না। যেমন যায় না তেল একবার মাটিতে পড়ে গেলে।

advertisement

Posted ৬:২৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.