শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব   |   শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

ছবি-সংগৃহীত

জানুয়ারিতে আরেকটি একতরফা সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে আওয়ামী লীগ। এরপরই মালদ্বীপের মতো বাংলাদেশেও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। মূলত বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের অসন্তোষের প্রতিফলন এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারাভিযান। এটি শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক নির্বাচনের কারসাজির বিরুদ্ধে নয় বরং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ সম্পর্কে ভারতের নীরবতাও এর পেছনে কাজ করেছে।

এক্টিভিস্টরা বলছেন, ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে মূলত তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য। এই সমর্থনের মাধ্যমে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষুন্ন করেছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্টরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নিরলস হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বাংলাদেশে এবং বিদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন।


গত এক দশকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি করেছে। এরফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মনে করা হয়, ভারত শুধুমাত্র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কারসাজি উপেক্ষা করেই নয় বরং প্রার্থীদের পছন্দকে প্রভাবিত করার মাধ্যমেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট তৈরিতে সাহায্য করেছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল হয়ে যাওয়া নিয়েও বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।ভারত এসবের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে বলে মনে হয়। ‘১৯৭১-২০২১ : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর’ বইটিতে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেছেন যে- “বাংলাদেশে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য ভারতের সম্মতি প্রয়োজন হয়।” ভারত সম্পর্কে এই উপলব্ধিগুলি এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে “ইন্ডিয়া আউট” প্রচারনায় ইন্ধন যোগাচ্ছে। তবে প্রচারণার দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্কটি বেশ জটিল। এ সম্পর্ক ঐতিহাসিক বন্ধন, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক আর্থ-সামাজিক নির্ভরতার ওপর দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ২০২২ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৬.১৬ বিলিয়ন ডলার। খাদ্য, জ্বালানি, সার এবং শিল্পের কাঁচামালের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির জন্য ভারতের উপর এই অত্যধিক নির্ভরতা এবং এর দেশীয় বিকল্প কম থাকায়, বাংলাদেশ চীন থেকে এসব পণ্য আমদানি শুরু করতে বাধ্য হতে পারে। এতে চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বাড়বে। ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন বাংলাদেশের কর্পোরেট সেক্টরে, বিশেষ করে সফ্টওয়্যার এবং পরিষেবা-ভিত্তিক ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতীয় দক্ষ কর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে ।
‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী অনিয়ম এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার মতো মৌলিক বিষয়গুলি থেকে মনোযোগ সরানো হচ্ছে। অন্যদিকে এর সমর্থকরা দাবি করেন যে, এটি ভিন্নমত প্রকাশ করার এবং কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করার একটি উপায় হিসাবে কাজ করছে। যদিও নির্বাচনী জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ, তবে প্রায়শই ভারতকে এই কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়। এটা ঐতিহাসিকভাবেও সত্য। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৫ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এবং একদলীয় ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ বা বাকশাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, তখন এর জন্য ভারতকেই দোষারোপ করা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন, ভারতের সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগ এত বড় পদক্ষেপ নিতে পারতো না।

স্বার্থান্বেষী মহল বয়কট প্রচারাভিযানকে ব্যাহত করার জন্য গোপন কৌশল অবলম্বন করতে পারে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করতে পারে, এমনকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এবং বিরোধীদের দোষারোপ করতে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয় প্রবাসীদের ভয় দেখাতে পারে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, ইন্ডিয়া আউট প্রচারাভিযান ভারত ও বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা বপন করার একটি কৌশল হতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে ক্ষমতাসীন দলকে উপকৃত করবে।


আশ্চর্যজনকভাবে, বাংলাদেশ সরকারকে এই প্রচারণা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে না। কেউ কেউ অনুমান করেন যে, সম্ভাব্য সুবিধার কথা ভেবেই হয়ত এই উদাসীনতা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, ভারত বয়কটের মধ্য দিয়ে আমদানি হ্রাস ও বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ হচ্ছে, যা চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সুবিধাজনক হতে পারে। নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এই ভারত-বিরোধী ধারণাগুলিকে মোকাবেলা করতে হবে এবং বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ভারত-বিরোধী স্রোতের অন্তর্নিহিত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের জন্য সরাসরি আহ্বান না করে, বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্টদের উচিত সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। বিভিন্ন একাডেমিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো এবং তাদের সংলাপে যুক্ত করা। যদিও পণ্য বয়কট করার অধিকার সর্বজনীন, তবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত যেকোনো সরকারের সাথে কাজ করার মানসিকতা রাখতে হবে। অন্যান্য দল এবং গোষ্ঠীগুলিকে বাদ দিয়ে একা আওয়ামী লীগের সঙ্গে একচেটিয়া সম্পর্ক বজায় রাখার পরিণতি সম্পর্কে ভারতের সতর্ক হবার সময় এসেছে। বাংলাদেশিদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে সম্মান করতে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সমস্ত দলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভারতকে বোঝানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টদের ভারতীয় সুশীল সমাজ, একাডেমিয়া এবং কূটনৈতিক চ্যানেলগুলি ব্যবহার করা উচিত।

(লেখক: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জননীতির সমালোচক। তিনি ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ: উন্নয়ন গতিপথ এবং গণতন্ত্রের ঘাটতি’, এবং ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ৫০ বছর’ সহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।)

advertisement

Posted ৮:৪৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1402 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.