বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সিটিতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়ারা ভাড়া দিতে অসমর্থ হয়ে বাড়ি মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন এবং এ প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সাম্প্রতিক দুটি জরিপে প্রকাশ পেয়েছে। প্রতি ১২ জন ভাড়াটিয়ার মধ্যে অন্তত একজন, অর্থ্যাৎ ২৮ লাখ ২০ হাজার ভাড়াটিয়া গত সেপ্টেম্বর মাসে হয় ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি, অথবা ভাড়া দিতে বিলম্ব করেছেন অথবা ভাড়ার একাংশ পরিশোধ করেছেন বলে মর্টগেজ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের জরিপে জানা গেছে। অন্যদিকে তারা দেখিয়েছে যে চলতি বছরের ্এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট লাভকারীদের সংখ্যা ৩ শতাংশ থেকে ৭ শতাশে উন্নীত হয়েছে। আট হাজার পরিবারের উপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। মর্টগেজ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের কমার্শিয়াল রিয়েল এষ্টেট রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমি উডওয়েল বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমনের পর ফেডারেল সরকার যে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সহায়তার জন্য যে ষ্টিমুলাস চেক ও পে-চেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল তাতে অত্যন্ত সুফল পাওয়া গেছে এবং ভাড়া পরিশোধে বেকার লোকদের কোন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে কোন ফেডারেল সহায়তা পাচ্ছে না কেউ।
এদিকে ভিন্ন এক জরিপে ১,৩৮১ জন বাড়ি মালিকের মধ্যে ৩৫.২% জানিয়েছেন যে সেপ্টেম্বরে তারা ১০০% বাড়িভাড়া পাননি এবং ৩৮.১% বাড়ি মালিক অক্টোবর মাসে পুরো বাড়িভাড়া পাবেন না বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। সেপ্টেম্বরে যেসব বাড়ি মালিক ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া পাননি তাদের তিন চতুর্থাংশ মালিক বলেছেন যে, ভাড়াটিয়ারা ভাড়া আদৌ দেয়নি বা পুরো ভাড়া দেয়নি। ১২.৯% বাড়ি মালিক তাদের ভাড়াটিয়াদের ভাড়া হ্রাস করেছেন, যাতে মহামারীর সময়ে তারা আরো সংকটে না পড়েন।
সরকারি সহযোগিতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বেকার লোকজন কোন উৎস থেকে বাড়িভাড়া পরিশোধ করার জন্য কোন সহায়তা লাভ করছে না। প্রথম দফা ফেডারেল সরকারের সপ্তাহে ৬০০ ডলার হারে ১৩ সপ্তাহ এবং দ্বিতীয় দফায় ৩ সপ্তাহের জন্য ৩০০ ডলার হারে সহযোগিতার পর আর কোন সরকারি সহায়তা পায়নি আমেরিকান বেকাররা। বছর শেষে সরকারের সব ধরনের নগদ আর্থিক সুবিধা প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় দেড় কোটি আমেরিকানকে কোন বেকার ভাতা ছাড়াই কাটাতে হবে। তখনই শুরু হবে আসল বিপর্যয়। ন্যাশনাল লো ইনকাম হাউজিং কোয়ালিশন জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সিটি ও কাউনিট পর্যায়ে ভাড়া সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ অথবা তাদের তহবিল শূন্য।
মর্টগেজ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের মতে তাদের সদস্য বাড়ি মালিকরা ভাড়াটিয়াদের কাছে ভাড়া না পাওয়ায় এ বছরের ৯ মাসে ৯.২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছে। ভাড়া যতো বাকি পড়ছে, বাড়ি মালিকরা নতুন ভাড়াটিয়াদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই বাছাইয়ের পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। আরবান ইন্সটিটিউট ও এভোইল ষ্টাডির জরিপ অনুসারে ৩৫.৬% বাড়ি মালিক নতুন ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে কঠোর যাচাই বাছাই এর উপায় বেছে নিয়েছে। ৫০% কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক বাড়ি মালিক তাদের আগের উচ্ছেদকৃত ভাড়াটিয়াদের সাথে বর্তমান বা নতুন ভাড়াটিয়াদের তুলনা করে দেখছে। অনেক বাড়ি মালিক উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাড়ি বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছে। জরিপ অনুযায়ী ৩১% বাড়ি মালিক মহামারী পূর্ব সময়ের চেয়ে এখন তাদের বাড়ি বিক্রি করে দেয়ার জন্য চাপের মুখোমুখি হচ্ছে; বিশেষ করে যারা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুরো বাড়ি ভাড়া পাননি।
মহামারী শুরু হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এণ্ড প্রিভেনশন অথরিটিকে ব্যবহার করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের উপর স্থগিতাদেশ কার্যকর করেছেন। যারা বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে অসমর্থ বা আংশিক ভাড়া পরিশোধ করছেন তাদেরকে একটি ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করে বাড়ি মালিকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে উচ্ছেদের উপর এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হলে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের যে ব্যাপকতা সৃষ্টি হবে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। মর্টগেজ ব্যাংকের এসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট এডি সেলার বলেছেন, যেসব ভাড়াটিয়া তিন, চার বা পাঁচ মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনি তারা চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।
Posted ১২:০৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh