বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বিবেকের খাদ্য ও সঠিক পরিচর্যা

জাফর আহমাদ   |   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিবেকের খাদ্য ও সঠিক পরিচর্যা

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের ভেতর দু’টো জিনিস অবস্থান করে। একটি হলো, ‘নাফস’ আর অন্যটি হলো ‘বিবেক’। নাফস দুনিয়াকে অবাধে ভোগ করার জন্য মানুষকে ক্রমাগত লালসার লোভ দেখায়। অর্থ্যাৎ খাও-দাও ফূর্তি করো দুনিয়াটাই মস্তবড়। আল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, (ইউসুফ বলল) “আমি নিজের নফসকে দোষমুক্ত করছি না। নফস তো খারাপ কাজ করতে প্ররোচিত করে, তবে যদি কারোর প্রতি আমার রবের অনুগ্রহ হয় সে ছাড়া। অবশ্যই আমার রব বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।”(সুরা ইউসুফ:৫৩)
পক্ষান্তরে বিবেক মানুষকে সবসময় ভালো কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। যার বিবেক দূর্বল এবং নফস সবল তার কাছে হালাল-হারাম ও ভালো-মন্দ সব একই রকম। আর যার বিবেক সবল তার কাছে হালাল ও ভালো কাজই শুধু গ্রহণযোগ্য। নফসের খাদ্য হলো, দুনিয়াকে অবাধে ভোগ করা। আপাতত: হালাল-হারামের পার্থক্য করা জরুরী নয়। নিজের হাত ও মুখ দ্বারা মানুষ কষ্ট পেলেও আমার কিছুই যায় আসে না। আমার চাই, আমার আরো চাই। আর বিবেকের খাদ্য হলো, ভালো কাজ করা, হালাল-হারামকে আল্লাহর হুকুমের আওতায় বিধিবদ্ধ করে নেয়া। নফসের অবাধ চাওয়া-পাওয়ার লাগাম টেনে ধরা, প্রতিটি মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। সর্বদা যথাসাধ্য মানুষের কল্যাণ করা।
‘বিবেক’ মানুষের এক মূল্যবান সম্পদ। মানুষ নামক যে যন্ত্রটি পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, সেই যন্ত্রটির মৌলিক মানবীয় গুণ ও প্রাণশক্তিই হলো ‘বিবেক’। এটি ছাড়া মানুষ কখনো মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে না। আলবত সে পশুর কাতারে নেমে আসে। সব মানুষই বিবেকসম্পন্ন। কিন্তু এটিকে মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যের মতো যত্ন নিতে হয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কেউ কেউ তার নিয়মিত পরিচর্চা করেন আবার অনেকেই তাকে অবহেলা ভরে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেয়। বিবেকের পরিচর্চা ও শান দেয়ার মাধ্যমেই মানুষ ভালো মানুষে পরিণত হয়। সুস্থ ও সবল বিবেকের তাড়নায় এ সমস্ত মানুষেরা সমগ্র আবেগ-উচ্ছ্বাস, হৃদয়বৃত্তি এবং সকল প্রকার লোভ-লালসা নিয়মানুগ ও বিধিবদ্ধ করে নেয়।
মানুষের মধ্যে নফসও আছে, যে সকল সময় মানুষকে কামনা-বাসনায় আবদ্ধ করতে চায়। ক্রমাগত মানুষকে মায়াবী পৃথিবীর রঙিন জালে আবদ্ধ রাখতে চায়। এই নফসের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বিবেকের সাহায্য একান্ত প্রয়োজন হয়। তাই নফস থেকে বিবেক অবশ্যই অধিকতর শক্তিশালী হতে হবে। এজন্য বিবেকের নিয়মিত পরিচর্চার প্রয়োজন হয়। বিবেক যত শক্তিশালী হবে নৈতিকমান তত উন্নত হবে। নৈতিক মান যত উন্নত হবে নফস তত দূর্বল হতে থাকবে। এবং এক সময় নফস বিবেকের গোলামী করতে বাধ্য হবে। যার বিবেক শক্তিশালী তিনিই মুত্তাকী। বিবেককের ইসলামী পরিভাষা হলো, তাকওয়া। এই বিবেক বা তাকওয়াকে শক্তিশালী করা ও নাফসের কামনা-বাসনাকে শৃংখলিত করার জন্য রমযানের একটি মাস বৈধ দু’টো কাজ তথা হালাল খাদ্য গ্রহণ ও হালাল কাম প্রয়োগ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এটিই বিবেকের খাদ্য বা পরিচর্যা।
কিন্তু যদি এই বিবেককে ক্রমাগত অবহেলা করা হয় তবে এটি অসুস্থ ও দূর্বল হয়ে যায় এবং এক সময় তার অপমৃত্যু ঘটে এবং তখন নফসের একক রাজত্ব চলে এবং মানুষ অমানুষে পরিণত হয়। সমাজ ও সভ্যতায় নেমে আসে অরাজকতা ও বিপর্যয় এবং সমাজ পরিণত হয় অন্যায় ও অবিচারের অভায়রণ্য। যেখানেই এভাবে বিবেকের মৃত্যুহারের সংখ্যা বাড়তে থাকে সেখানটায় পশুর খোয়ারে পরিণত হয়। জমিনে ছড়িয়ে পড়ে পাশবিকতার প্রতিযোগিতা।
সব মানুষ জানে বিবেকের গুরুত্ব কতটুকু। কিন্তু তার পরিচর্চা করতে জানে না অথবা জানার সেই পরিবেশও পায় না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কেউ ছোট্র একটি অপরাধ করলে, মানুষ তাকে বলে থাকে ‘লোকটির বিবেক নাই’ অথবা ‘এটি বিবেকহীনের কাজ’। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষ ও পশুর মধ্যে তফাৎ করা হয় ‘বিবেক’-এর মাধ্যমে। অর্থ্যাৎ মানুষের বিবেক আছে, পশুর নেই। কিন্তু এখানে এ-ও মনে রাখা প্রয়োজন যে, মানুষ যখন বিবেকহীন হয়ে পড়ে তখন তার মান পশুর চেয়েও অধিকতর নিচে নেমে আসে। কারণ পশুরা শুধুমাত্র নিজের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণের জন্য অন্য পশুকে শিকার করে। হিংসা-বিদ্বেষ, প্রভাব-প্রতিপত্তি বা হিংসাত্মক মনোভাব চরিতার্থ করার জন্য কোন পশু অন্য পশুর উপর হামলা করে না বা আক্রমন চালায় না। তারা চরদখল, টেন্ডারবাজি, আত্মসাৎ ও দুর্নীতি করে না। কিন্তু বিবেকহীন মানুষ হেন হীনতর কাজ নাই যা সে করতে পারে না। যে কোন জায়গায় সামাজিক বিপর্যয় ঘটানোর জন্য গুটিকয় বিবেকহীন ব্যক্তিই যতেষ্ঠ।
আমাদের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করা হলে, সহজেই পরিমাপ করা যায় যে, সেই বিবেকের মৃত্যুহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু কেন? কেন আজ বিবেকের মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে? কেন সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ উঠে যাচ্ছে এবং কেন আজ সামাজিক বন্ধন হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে? সমাজের সর্বস্তর থেকে আজ ধৈর্য, সহনশীলতা, সহিষ্ণুনতা, সহাবস্থান, পরশ্রীমূখরতা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে মানছে না। ছোট বড়কে সম্মান করছে না, বড় ছোটকে স্নেহের বন্ধনে আবদ্ব করতে পারছে না। জাতির মেরুদন্ড সোজাকারী শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছেন স্বীয় গুণধর ছাত্রের দ্বারা। ছাত্র তার ছাত্র বন্ধু দ্বারা নিহত হচ্ছে। তথাকথিত মেধাবীরা চরম বেহায়াপনার কাজে জড়িয়ে পড়েছে। সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হচ্ছে যত্রতত্রভাবে। স্বাধীন দেশের অধিবাসীরা স্বাধীনভাবে মুক্ত বাতাসে নি:সঙ্কায় চলাফেরা করতে পারছে না। কিসের ভয় যেন সদায় তাদের তাড়া করে ফিরে। হত্যা, মাস্তানী ও চাঁদাবাজির কারণে সমাজের হা-হুতাশ শুরু হয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই আজ বিশাল ধ্বংসের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে শুধু অবক্ষয় আর অবক্ষয়। ব্যক্তি ও জাতীয় চরিত্রের অধঃপতন, পারিবারিক ও সামাজিক সুশৃংখল অবকাঠামোর ভাঙ্গন, সামাজিক ও রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা দেশ আজ অগ্নীগর্ভে রূপ নিয়েছে। ভোগের রাজ্যে চলছে অত্যাধিক মাতলামী। মোটকথা মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবন আজ মরণব্যাধী রোগে আক্রান্ত। তাহলে কি বিবেকের মৃত্যুহার বেড়ে গিয়ে বিবেকশূণ্য পৃথিবী বিবেকহীনদের ভার সইতে পারছে না? হ্াঁ, পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বিবেকের নিয়মিত পরিচর্চা না করার কারণেই বিবেকের মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। ফলে বিবেকের অনুপস্থিতির কারণে উপরোক্ত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
আমার ধারণা, আমাদের নেতৃত্বের কারণে বিবেকের এ মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। নেতৃত্বই এজন্য দায়ী। কারণ নেতৃত্বের মনোভাব ও আচার-আচরণ সংশ্লি¬ষ্ট দেশের সাধারণ নাগরিকদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। নেতৃত্ব যদি ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন হয়, দেশের জনগণ সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক হবে। একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নতির জন্য যতগুলো বিষয়কে গণ্য করা হয়, তন্মধ্যে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ সর্বোচ্চ গুরুত্বের দাবী রাখে। নেতিবাচক মনোভাব ও আচার-আচরণ দিয়ে উন্নতির চিন্তা করা যায় না এবং এ ধরণের মনোভাব দিয়ে মানুষের চরিত্র গঠন করাও সম্ভব নয়। বরং নেতিবাচক আচার-আচরণ রাষ্ট্রের বা সমাজের সর্বস্তরে অসহিষ্ণুতা, অসৌজন্যতা ও উগ্রতাকে এমনভাবে উসকে দেয় যে, মানব সভ্যতা ও মানুষের জীবন মারাত্মক হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এখানে আরো অনেকগুলো কারণ পেশ করা যাবে, কিন্তু এসমস্ত কারণের পিছনে নেতৃত্বের প্রভাব প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কাজ করে। যার বিবেক লোপ পায়, তিনিই সর্বদা নেতিবাচক পথে হাটেন।
বিবেক রক্ষা করার জন্য এবং কামনা-বাসনার নাফসকে দুর্বল করার জন্য রামাদান হলো, সবচেয়ে বড় মহৌষধ। হালাল থাকা সত্বেও রমাদান মানুষের নফসকে ক্রমাগত একটি মাস শাস্তি প্রদান করে তার লালসা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নফসের কয়েকটি মৌলিক লালসা হলো খাদ্য গ্রহণ, পিপাসা নিবারণ ও যৌনকর্ম সাধন। রমাদান ইসলামের হালাল কর্মগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নফসকে ক্রমাগত একটি মাস শাস্তি দেয় ফলে সে বৈধ চাহিদাগুলোও পূরণ করতে না পেরে দূর্বল হয়ে পড়ে পক্ষান্তরে বিবেক শক্তিশালী হয়ে উঠে। রামাদানের একটি মাস বিবেক এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে পরবর্তিতে নফস আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। পরবর্তিতে অবৈধ খাদ্য, পানীয় ও যৌনাচার থেকেও তাকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়। রমাদানের তাকওয়ার গুণটিই হলো মূলত: বিবেক।
বিবেককে সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথপ্রদর্শক হলো আল কুরআন। এজন্য এমাসেই কুরআন নাযিল করে আল্লাহ তা’আলা বলে দিয়েছেন যে, (এই নাও) সেই কিতাব যার মধ্যে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই, যা মুত্তাকীদের পথ দেখায়।” (বাকারা ১-২)


advertisement

Posted ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(684 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.