বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
কোভিড-১৯ মহামারী স্মরণকালের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় বিশ্বকে। থমকে যায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সংকুচিত হয়ে পড়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম। ব্যয়সংকোচন নীতি গ্রহণ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মহামারিটি লাখ লাখ মানুষকে ঠেলে দেয় চরম দারিদ্র্যে।
এমন পরিস্থিতিতে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে ধনী পরিবারগুলো। নতুন একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৮ শতাংশ ধনী পরিবার দাতব্য সংস্থায় অনুদান দিয়েছে। গত বছর ধনী পরিবারগুলো গড়ে ৪৩ হাজার ১৯৫ ডলার অনুদান দিয়েছে। শেষবার জরিপ চালানো ২০১৭ সাল থেকে এ অনুদানের পরিমাণ ৪৮ শতাংশ বেশি। সে বছর পরিবারগুলো গড়ে ২৯ হাজার ২৬৯ ডলার অনুদান দিয়েছিল।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ব্যাংক অব আমেরিকা ও ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি লিলি ফ্যামিলি স্কুল অব ফিলানথ্রোপি। এক হাজার ৬২৬টি পরিবারের জরিপের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বছরে দুই লাখ ডলার বা তারও বেশি আয় করা এবং ১০ লাখ ডলার বা তারও বেশি মূল্যের সম্পত্তি থাকা পরিবারগুলোকে সমীক্ষাটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এ সম্পদের হিসাবে পরিবারগুলোর বসবাসের বাড়ির মূল্য বাদ দেয়া হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোর গড় বার্ষিক আয় তিন লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং গড় সম্পদের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ডলার। মহামারীতে সাড়া দিয়ে বেশির ভাগ বিত্তবান দাতারা অনুদান দেয়ায় দাতাগোষ্ঠীগুলো বিশ্বজুড়ে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরেছে।
প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পরিবার জানিয়েছে, তারা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অলাভজনক এবং উচ্চশিক্ষায় সম্পৃক্ত দাতা সংগঠনগুলোতে শর্ত ছাড়াই অনুদান দিয়েছেন। পাশাপাশি ৮৩ শতাংশেরও বেশি পরিবার জানিয়েছিল, তারা শিল্প ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলোকে শর্তহীনভাবে অনুদান দিয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকার ফিলানথ্রোপিক সলিউশন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডায়ান চিপস বেইলি বলেন, জনহিতকর উপদেষ্টারা বছরের পর বছর ধরে ধনী দাতাদের শর্ত ছাড়াই অনুদান দিতে উৎসাহিত করে আসছেন। ২০২০ সালের সংকট দাতাদের এমন অনুদানের গুরুত্বকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, মহামারীটি আমাদের বিশ্বের অনিশ্চয়তাকে খুব নাটকীয় উপায়ে প্রকাশ করেছে। এটি দেখিয়েছে, কোনো শর্ত ছাড়াই অনুদান দেয়া দাতব্য সংস্থাগুলোকে সেই অর্থ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের দিকে পরিচালিত করার সুযোগ দেয়।
প্রায় ৭৫ শতাংশ ধনী দাতা মহামারীটি তাদের অনুদানের আচরণ পরিবর্তন করে দেবে বলে মনে করেন না। মাত্র ৫ শতাংশের মতো দাতা বলেছেন, তাদের ভাবিষ্যতের অনুদান কম সীমাবদ্ধ হবে। এ ছাড়া ২০ শতাংশ দাতা বলেছেন, তারা নির্দিষ্ট বিষয়ে বেশি অনুদান দেবেন। গত বছর ধনী পরিবারগুলোর ৫৭ শতাংশ অনুদান দিয়েছিল মৌলিক চাহিদা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অন্য দিকে ৪৭ শতাংশ পরিবার ধর্মীয় সংস্থায় অনুদান দিয়েছিল। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থায় অনুদান দেয়ার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষায় অনুদান দিয়েছিল ৩৬ শতাংশ পরিবার।
গত বছর অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক ও জাতিগত ন্যায়বিচার গুরুত্ব পেয়েছিল। প্রায় ৯ শতাংশ ধনী পরিবার বলেছে, সামাজিক ও জাতিগত ন্যয়বিচার তাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ২০১৭ সালে এ হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। প্রায় ১১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীতে অনুদান দিয়েছিল। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। বহু-প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মের সমাজসেবা বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল ওরিস্টিয়ান বলেন, মহামারীটির আঘাত জাতিগত ও সামাজিক ন্যয়বিচারের বিষয়ে দাতাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন অনেক ধনী ব্যক্তি তাদের সম্পদকে আরো বেশি সমস্যা সমাধানে ব্যয় করার উপায় খুঁজছেন। এ বিষয়টি অনেক দাতাকে সংগঠনভিত্তিক অনুদান থেকে সমস্যাভিত্তিক অনুদানে স্থানান্তরিত করেছে।
Posted ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh