বাংলাদেশ প্রতিবেদন : | বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশ সোসাইটি আবারো মামলার গ্যাড়াকলে পড়লো। ভণ্ডুল হয়ে গেলো গত ১৪ নভেম্বরের পূর্ব-নির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বের শেষ মুহূর্তে গত ১২ নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সোসাইটি’র নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশে স্থগিত হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া। নির্বাচনে নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে সোসাইটির সদস্য নীরা রব্বানি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনিসহ সবাইকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শুনানির দিন ধরা হয়েছে ২ ডিসেম্বর। তবে এবারের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারটি অপ্রত্যাশিত ছিল না। কমিউনিটিতে জল্পনা-কল্পনা চলছিল যে আবারও থামিয়ে দেওয়া হতে পারে নির্বাচনের আয়োজনকে। দুই প্যানেল এবং স্বতন্ত্রসহ ৩৮ প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও অপচয় ঘটলো বলে অভিযোগ করেছেন তারা । নিউ ইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কপি নিউ ইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কপি২০১৭ ও ২০১৮ সালে প্রবাসীরা সদস্য ফরম পূরণ করেন দু’বছর মেয়াদি কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে ভোট দিতে। নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর। তার দুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ এসেছিল। সে আবেদন করেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মনোনয়নপত্র বাতিলের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা দুই সদস্যপ্রার্থী আলী আকবর বাপ্পী ও লিটন। সেই মামলার জট খুলে গত বছরের মার্চে।
এদিকে গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে নির্বাচন স্থগিত সংক্রান্ত মামলা দায়ের করার কথা উল্লেখ করে গত ১০ নভেম্বর বুধবার বাংলাদেশ সোসাইটিসহ ৯ জনের নামে নোটিস জারি করেন ওসমান চৌধুরী। মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্দিষ্ট আইনজীবি মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ যোগাযোগ সংবাদমাধ্যম জানান, ১২ নভেম্বর জামাইকার কুইন্স কাউন্টির সুপ্রিম কোর্টে দুপুর ১২:২০ মিনিটে তিনি শশরীরে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বাদী ওসমান চৌধুরী তার যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন কিন্তু আদালত তার কাগজপত্রের মুদ্রিত সংস্করণ (হার্ড কপি) গ্রহণ করেননি। করোনা মহামারির পর থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা নথিপত্র আদালতের ওয়েবসাইটে গিয়ে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তিনি সে নিয়মে নথিপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হন।
নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি। প্রতি দু’বছর অন্তর সংগঠনটি কার্য নির্বাহী কমিটি গঠিত হয় সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে। নির্বাচন এলেই সরব হয়ে উঠেন সোসাইটি সংশ্লিষ্ট একটি মহল। এক ধরণের উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয় কমিউনিটিতে। সাম্প্রতিক সময়ে সোসাইটির নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে মামলাকারীরা তৎপর হয়ে উঠেন। দীর্ঘদিন ধরে মামলার ফাঁদ পেতে তারা অপেক্ষা করেন মোক্ষম সময়টির জন্য। অলাভজনক সামাজিক এ সংগঠনটির কর্মকান্ড ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিগত তিন মাস ধরে নির্বাচন কমিশন এবং প্রতিদ্বন্দ্বি দু’টি প্যানেলের ৩৮ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকগণ যারপরনাই পরিশ্রম করেছেন। ২০১৮ সাল এবং চলতি বছরের নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন কমিশন ও মামলায় ব্যয় বাবদ পুরো প্রক্রিয়ায় মিলিয়ন ডলারের শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
১৪ নভেম্বরের এ নির্বাচনে সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৯টি পদে মোট ৩৮ জন প্রার্থী ছিলেন। তন্মধ্যে রব-রুহুল প্যানেলের ১৯জন, নয়ন-আলী প্যানেলের ১৭জন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল দু’জন । নির্বাচনে ভোটার ছিল রেকর্ড সংখ্যক ২৭ হাজার ৫১০ জন । ভোটাররা যাতে তাদের কাছাকাছি স্থানে ভোট দিতে পারেন সেজন্য সিটির বিভিন্ন স্থানে ৫টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে নির্বাচন কমিশন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটারের কথা বিবেচনায় রেখে কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যথেষ্ট সংখ্যক ভোটিং মেশিন, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, মেশিন অপারেটর নিয়োগ করে।
২০১৮ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো সেই নির্বাচনে দু’জনের প্রার্থীতা অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এসব নিয়ে বাদ-প্রতিবাদের কারণে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরনাপন্ন হন ভুক্তভোগী দু’প্রার্থী। সোসাইটির অপর একজন সাবেক কর্মকর্তা পৃথক আরো একটি মামলা করেন অনিয়মের অভিযোগ এনে। আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপর। থমকে যায় সব উৎসব আয়োজন। পুরনো কমিটি সচল হয়ে উঠে পুনরায়। এভাবে ৯ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাদী-বিবাদী পক্ষের এটর্নির চিঠি চালাচালি চলছিলো বিরতিহীনভাবে। আদালতের মর্জি মাফিক দু’পক্ষের এটর্নি মিলে বিষয়টি ফয়সালার উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে ধাবিত হওয়ার চেষ্টা চালান নির্বাচন কমিশন। এতে করে পুনরায় মামলার কার্যক্রম শুরু হলে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে যায় সোসাইটির নির্বাচনী প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সোসাইটি একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। সোসাইটির তহবিলের অর্থ সাধারণ প্রবাসীদের। মামলা-মোকাদ্দমা বা অন্য কোন অভিপ্রায়ে এই তহবিলের অর্থ অপচয় করলে এ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সোসাইটির সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। মামলাকারীদের অভিযোগ সোসাইটিতে যোগ্য নেতৃত্ব নেই। মামলার ভয়েই যে যোগ্য ব্যক্তিরা এখন সোসাইটিতে আসছেন না এ বিষয়টি মামলাকারীদের ভাবনায় নেই। সোসাইটির অনিয়ম নিয়ে নির্বাচনের একমাস পূর্বে কেন অভিযোগ উত্থাপন করা হলো না বা সোসাইটির কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেয়া হলো না এ নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মাঝে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
মামলার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সোসাইটি থেকে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সামান্য কারণে কথায় কথায় আদালতের শরনাপন্ন হওয়াতে সোসাইটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে সোসাইটি একসময় নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়বে। নির্বাচন কমিশন এবং সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটি আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এবারের মামলা এড়ানো যেতো এমন ধারণা রয়েছে অনেকের। মামলা করে কমিউনিটিতে বিভ্রান্তি বাড়ানো যাাবে। অপচয় ঘটানো যাবে অর্থের। কিন্তু এসব কোন কল্যাণ বয়ে আনবে নাÑএমনটি মনে করেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি।
Posted ২:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh