বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
ইসলামী সংস্কৃতি

মুসলমানদের মেহমানদারির বৈশিষ্ট্য

জাওয়াদ তাহের    |   মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

মুসলমানদের মেহমানদারির বৈশিষ্ট্য

মেহমান পেয়ে আনন্দিত হওয়া এটা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। নবীরা মেহমান পেয়ে খুশি হতেন। তাঁদের অভ্যাস ছিল মেহমানের মেহমানদারি করা, তাকে যথার্থ সম্মান করা। নবুয়ত প্রাপ্তির আগে রাসুল (সা.)-এর মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য পূর্ণরূপে বিদ্যমান ছিল।

…খাদিজা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম, কখনোই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। …আপনি মেহমানের আপ্যায়ন করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩)


অন্য হাদিসে এসেছে যারা নাকি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তারা যেন মেহমানকে সম্মান করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। …(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)

মেহমানকে আপ্যায়ন করা তার সামনে খাবার পরিবেশন করা ইত্যাদির শিষ্টাচার আছে। যা আমাদের প্রিয় নবী (সা.) শিখিয়ে গেছেন।


মেজবানের কর্তব্য

মুত্তাকিদের দাওয়াত দেওয়া : দাওয়াতের ক্ষেত্রে মুত্তাকিদের পরহেজগার দাওয়াত দেওয়া। পাপিষ্ঠ ও পাপাচারদের এড়িয়ে চলা। কারণ তাদের দাওয়াত দেওয়া মানে, প্রকারান্তে তাদের সম্মান করা। আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তুমি মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেজগার লোকে খায়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২)


আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের দাওয়াত দেওয়া : এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা শুধু ধনীদের দাওয়াত দেয়। আত্মীয়-স্বজন কিংবা দরিদ্র তাদের অবহেলা করে বা দাওয়াত দিলেও এত গুরুত্বসহকারে দাওয়াত দেয় না। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) এসব দাওয়াতের ব্যাপারে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যে অলিমায় শুধু ধনীদের দাওয়াত করা হয় এবং গরিবদের দাওয়াত করা হয় না ওই অলিমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৭৭)

অভিবাদন জানানো : মেহমান আসার আগে তার জন্য অপেক্ষা করা এবং আসার পর তাকেই অভিবাদন জানানো মেজবানের ওপর কর্তব্য। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল নবী (সা.)-এর কাছে এলে তিনি বলেন, এই প্রতিনিধি দলের প্রতি ‘মারহাবা’, যারা লাঞ্ছিত ও লজ্জিত হয়ে আসেনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৭৬)

ডানদিক থেকে পরিবেশন করা : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর বাড়িতে এসে দুধ পান করতে দেখেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি একটি ছাগী দোহন করলাম এবং কূপের পানি মিশিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি পেয়ালাটি নিয়ে পান করেন। তাঁর বাম দিকে ছিলেন আবু বকর (রা.) ও ডান দিকে ছিল এক বেদুইন। তিনি বেদুইনকে তাঁর অতিরিক্ত দুধ দিলেন। এরপর বলেন, ডান দিকের আছে অগ্রাধিকার। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬১২)

মেহমানের সঙ্গে খোশগল্প করা : মেহমানের সঙ্গে খোশগল্প করা। একদম মেহমানের সঙ্গে চুপচাপ বসে না থাকা। এতে সে আনন্দ বোধ করবে। ইমাম বুখারি (রহ.) এ ব্যাপারে সহিহ বুখারিতে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় লিখেছেন—‘পরিবার পরিজন ও মেহমানদের সঙ্গে কথা বলা’ এ নামে। (সহিহ বুখারি : ১/১২৪)

এ ছাড়া মেহমানের খাতিরে ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ পরে পরিপাটি থাকা এবং সুন্দর বেশভূষা অবলম্বনের চেষ্টা করা। অজুর পর হাত-মুখ মোছার জন্য মেহমানকে নিজেদের ব্যবহৃত গামছা বা তোয়ালে না দেওয়া; বরং তার জন্য আলাদা পরিচ্ছন্ন তোয়ালের ব্যবস্থা করা। কারণ নিজেদের ব্যবহৃত গামছা অনেক সময় একটু অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে। তা ছাড়া অন্যের তোয়ালে ব্যবহার করতে অনেকের রুচিতে বাধে এবং মেহমানের জন্য যে হাম্মাম ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে, সেখানে যেন এমন কোনো কাপড়চোপড় না থাকে, যা দৃষ্টিকটু। (মিন আদাবিল ইসলাম)

খাবার পরিবেশনের আদব

১. দ্রুত খাবার পরিবেশন করা। কারণ এর দ্বারা মেহমানের সম্মান প্রকাশ পায়।

২. মেহমানের জন্য প্রস্তুতকৃত সব খাবার মেহমানের সামনে পরিবেশন করা। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কার্পণ্যতা না করা।

৩. খাবার শেষ হওয়ার আগে পাত্র উঠিয়ে না নেওয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত মেহমান হাত না উঠাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা রেখে দেওয়া।

৪. খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক এলাকার নিয়ম-নীতি রক্ষা করা। অর্থাৎ যে খাবার যেখানে আগে পরিবেশন করা হয় তা আগে পরিবেশন করা।

৫. খাবার শুধু পরিবেশন করার পর মেহমান খাচ্ছেন কি না—সেদিকে লক্ষ রাখা। তবে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেহমানের মুখ ও পাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে না, এতে তার অস্বস্তি বোধ হতে পারে; বরং উড়াল দৃষ্টিতে লক্ষ রাখবে।

মেহমান একাধিক হলে যিনি বয়স, ইলম বা মর্যাদায় বড় তাঁর থেকে পরিবেশন শুরু করা। এরপর তাঁর ডানে যে থাকবে তাকে দেওয়া। (মিন আদাবিল ইসলাম)

মেহমানের কর্তব্য

দাওয়াত গ্রহণ করা : কোনো মজলিসে যদি কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় তাহলে তার দাওয়াত গ্রহণ করা কর্তব্য। একান্ত ওজর ব্যতীত দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয়। কারণ দাওয়াত গ্রহণের মাধ্যমে শুধু খাবার খাওয়াই উদ্দেশ্য নয়; বরং এর মাধ্যমে অপর ভাইকে সম্মান করাও উদ্দেশ্য। আবার কখনো কখনো দাওয়াত এড়িয়ে চললে মানুষজন অহংকারী মনে করে থাকে। সে জন্য পারতপক্ষে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান না করা। আর মেজবানের উচিত যে যার শরঈ কোনো ওজর রয়েছে তাকে দাওয়াত গ্রহণের ব্যাপারে বাধ্য না করা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি যে এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি : এর একটি, দাওয়াত কবুল করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪০)

অতিথি ছাড়া অন্য কাউকে না নেওয়া : যাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে সেই দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা। যদি অতিরিক্ত কাউকে নিতে হয় তাহলে মেজবানের অনুমতি নিয়ে নেওয়া। আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি, আবু শুআইব নামক জনৈক আনসারি এসে তার কসাই গোলামকে বললেন, পাঁচজনের উপযোগী খাবার তৈরি করো। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-সহ পাঁচজনকে দাওয়াত করতে যাই। তাঁর চেহারায় আমি ক্ষুধার চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। তারপর সে লোক এসে দাওয়াত দিলেন। তাদের সঙ্গে আরেকজন অতিরিক্ত এলেন। নবী (সা.) বলেন, এ আমাদের সঙ্গে এসেছে, তুমি ইচ্ছা করলে একে অনুমতি দিতে পার আর তুমি যদি চাও সে ফিরে যাক, তবে সে ফিরে যাবে। সাহাবি বলেন, না; বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৮১)

দোয়া করা : আহার শেষে মেজবানের জন্য দোয়া করা। এটি মেহমানের কর্তব্য। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) সাআদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি রুটি ও (জয়তুনের) তেল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মুখে পেশ করলেন। নবী (সা.) তা ভক্ষণ করে দোয়া পড়েন। …(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৫৪)

advertisement

Posted ৬:৫৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(675 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.