বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
টানা দেড় বছরের বেশি সময় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে এক অবিশ্বাস্য সময়। প্রাণঘাতী এক ভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কায় সদা সন্ত্রস্ত থাকতে হয়েছে মানুষকে। স্বাভাবিক জীবনযাপন তো বটেই, থমকে ছিল গোটা বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রম। কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ফলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারেও লেগেছে পরিবর্তনের ঢেউ। একটা দীর্ঘ সময় মন্দার কবলে থাকা এ বাজার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক দক্ষ কর্মী খুঁজে নিতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে মার্কিন শ্রম বিভাগ। সেখানে দেখা গেছে, সদ্যসমাপ্ত অক্টোবরে কর্মীর চাহিদা বেড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন খাতে এখন কর্মী প্রয়োজন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রেস্তোরাঁ, বার, কলকারখানা, অফিস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়ারহাউজ। মূলত সেবা খাতে এখন বেশি কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। আবার পরিবহন খাতেও প্রচুর কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যদিও এর আগে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, অক্টোবরে হয়তো সাড়ে চার লাখের মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। তবে পরিস্থিতি সে পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে।
পাশাপাশি বেকারত্বের হারও কিছুটা কমেছে। আগের মাসের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মহামারী শুরুর পর থেকে এটিই সবচেয়ে কম। এ ফলাফলকে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো উল্লেখ করে বেশ উচ্ছ্বসিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, এটি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের বড় উদাহরণ। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে চলেছে। ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অক্টোবরের তথ্য দেখে মনে হচ্ছে যে বছরের বাকি দিনগুলোও ভালো যাবে। বিশেষ করে যেহেতু বড়দিনসহ নানা ধরনের ছুটির মৌসুম শুরু হচ্ছে, তাই এগুলো ঘিরে ক্রেতা চাহিদাও বাড়ছে। ফলে বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা বিক্রেতাদের। ব্যাংক অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান ময়নিহান বলেন, পৃথিবী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের অনেকাংশেই জয় হয়েছে। ভোক্তারা এখন অনেক অর্থ ব্যয় করছেন। মানুষ দীর্ঘদিনের বন্দিদশা ভুলে ঘুরতে বের হচ্ছে। হোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম বাড়ছে।
মার্কিন শ্রম বিভাগের এ প্রতিবেদনে আগের মাসগুলোর চিত্রও বেশ উজ্জ্বল। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও নিয়োগের গতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ দুই মাসে প্রায় আড়াই লাখের মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। এ ফলাফলে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। এর আগে গত সপ্তাহেই আরেকটি নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সব কর্মীকে টিকার আওতায় নিতে হবে। যেসব অফিসে ১০০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন তাদের সবাইকে অবশ্যই টিকা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে প্রতি সপ্তাহে কর্মীদের নিয়ম করে কভিড পরীক্ষা করাতে হবে। প্রশাসন মনে করছে যে, এ নিয়মের ফলে কর্মী নিয়োগ ও দক্ষ কর্মী খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। কারণ সংক্রমণের ভয়ে যারা এতদিন কাজে ফেরার কথা ভাবছিলেন না, তারাও কাজে ফিরতে আগ্রহী হবেন। মহামারী প্রায় শেষ হয়ে আসছে বলে নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ হচ্ছে। চাকরির বাজারে এ উন্নতিও তারই প্রমাণ। গত মাসে বাড়িতে বসে কাজ করা কর্মীর সংখ্যাও কমেছে। অনেক অফিসেই এখন কর্মীরা সবাই মিলে কাজ করতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকটি অনেক ভালো যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সান ফ্রান্সিসকোর ব্যাংক অব দ্য ওয়েস্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্কট অ্যান্ডারসন। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত দেখে মনে হচ্ছে শ্রমবাজারে পুনরুদ্ধার ঘটছে।
Posted ১২:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh