বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে বয়স্ক আমেরিকানদের প্রতি ১০০ জনে একজন করে মারা গেছে অর্থ্যাৎ মৃতের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ৬৫ বা তদুর্ধ বয়সের। গত বছরের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই বছর অতিক্রম হতে চলেছে এবং এ পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা যাচাই করে দেখা গেছে বয়স্ক লোকজনই করোনা ভাইরাসের শিকার হয়েছেন বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় যারা মারা গেছে তাদের ৭৫ শতাংশ অথবা আট লাখের মধ্যে প্রায় ছয় লাখের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি ছিল। ৬৫ বছরের নিচের বয়সীদের মৃত্যু হার ছিল অনেক কম, প্রতি ১,৪০০ এর মধ্যে ১ জন।
নিউইয়র্ক টাইমসের গত সোমবারের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে বয়স্কদের জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকের জীবনের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে তাদেরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের উপরও ঝুঁকি বেড়েছিল। স্যান ফ্রান্সিসকোর প্যাট হায়াশি (৬৫) বলেছেন, নিজেকে মনে হয়েছে বিস্মৃত। বয়স্করা এমনিতেই নি:সঙ্গ থাকে, কিন্তু করোনা মহামারীকালে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা ও নি:সঙ্গ কাটানো যন্ত্রণাদায়ক ছিল, বলা যায় অত্যন্ত বাজে পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হয়েছে। আমরা আমাদের চাকুরি হারিয়েছি। আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারিয়েছি।
এক বছর আগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলে বয়স্ক আমেরিকানরা ভ্যাকসিন নিতে অগ্রাধিকার লাভ করে এবং পর্যায়ক্রমে তা কম বয়সীদের মধ্যে শুরু হয়। এখন শিশুদেরও ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। তা সত্বেও আক্রান্ত ও মৃতের হারের বিবেচনায় এখনো বয়স্করাই শীর্ষে রয়েছে। অপেক্ষাকৃত তরুণদের মধ্যেও সংক্রমণ হার বেশি, যদিও তা বয়স্কদের হারের মত নয়। এমনকি ভ্যাকসিন নেয়ার পরও বয়স্কদের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায়নি। বিশেষ করে গত দুই মাসে বয়স্কদের সংক্রমণ হার অনেক বেড়ে গেছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট উল্লেখ করেছে। সেন্টারস অফ ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনো যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক ১,২০০ এর অধিক লোক করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মারা যাচ্ছে এবং তাদের াধিকাংশই ৬৫ বছর বা তদুর্ধ বয়সের।
নিউইয়র্ক টাইমসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বয়স্কদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে, যারা অভিযোগ করেছেন যে, তারা এখনো বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণা সহ্য করছেন এবং দীর্ঘ মহামারীকাল পেরিয়ে যাওয়ার পর তরুণ ও মধ্য বয়স্ক লোকজন কাজে ফিরে গেছেন এবং অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন, কিন্তু ৬৫ বা তদুর্ধদের এখনো ভীতির দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে এবং তারা কাজে ফিরে যেতে পারছেন না। যেসব বয়স্ক ব্যক্তি এখনো ভ্যাকসিন নেননি, তারা অধিক সংখ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ওয়াশিংটনের মিল ক্রিকের সেলস এক্সিকিউটিভ রব এরিং (৭০) বলেছেন, “পরিচিত বেশ ক’জন লোককে মৃত্যুবরণ করতে দেখার পর আমরা আর ঝুঁকি গ্রহণ করতে চাইনি।” এরপর আসে নতুন ঝুঁকি ডেল্টা ভেরিয়েন্ট এবং এখন নতুন করে এসেছে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট এবং ইতোমধ্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে দুটি ভেরিয়েন্টই বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
অতএব বয়স্করা ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষেত্র বিশেষে বয়স্করা সামাজিক সমাবেশে যোগদান করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা হচ্ছে। শিকাগোর অ্যান কানিংহ্যাম (৮৪) বহুতল বিশিষ্ট সিনিয়র সেন্টারে বসবাস করেন। সেখানে একটি টেলিভিশন রুম ও একটি কমিউনিটি রুম ছিল, কিন্তু ২০২০ এর মার্চ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে, আর খোলা হয়নি। তিনি বলেছেন, “লোকজন এখনো উদ্বিগ্ন। কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের মধ্যে আটকা থাকে এবং কারো সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ না থাকে, তাহলে ঁেবচে থাকাও কার্যত মৃতের মত থাকা হয়ে দাঁড়ায়।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস জনিত প্রথম মৃত্যুর ঘটনার তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমিত হয়ে এক লাখ লোক মারা যায়। এই হার সামারে হ্রাস পেলেও শীতের মধ্যে ভাইরাসে মৃত্যু হার আবারও বেড়ে যায় এবং বসন্তে তা কমে আসে।
Posted ৮:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh