মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে কেমন ছিলেন তার উপর যৌথভাবে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন কিংবদন্তিতূল্য সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও ওয়াশিংটন পোস্টেও সাংবাদিক রবার্ট কস্টা। “পেরিল” নামে এই গ্রন্থটি আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাজারে আসছে। বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারী ওয়াশিংটনে ক্যাপিটন হিলে সাবেক প্রেসিডেন্টের ইঙ্গিতে যে ভয়াবহ ও নজীরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, সেদিন থেকে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের শেষ দিনগুলোর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এ বইটির তথ্য সংগ্রহের জন্য উডওয়ার্ড ও কস্টা ২০০ প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
এতে বলা হয়েছে যে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা পর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মাইলি ও ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক সামরিক উপদেষ্টারা ট্রাম্পের যে কোন ধরনের সামরিক অভিযান বা নিউক্লিয়ার হামলার ক্ষমতা খর্ব করার জন্য সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছিলেন। জানুয়ারির ৮ তারিখে জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ জেনারেল মাইলি পেন্টাগণের ওয়ার রুমে পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের এক বৈঠক ডাকেন এবং যারা ন্যাশনাল মিলিটারি কমান্ডের দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকে বলেন যে আমার নির্দেশ বা সম্মতি ছাড়া আপনারা অন্য যে কোনো স্থান থেকে সামরিক অুিভযান বা নিউক্লিয়ার হামলার কোনো নির্দেশ গ্রহণ করবেন না। সিএনএন এর রিপোর্টেও দেখা যায় যে, জেনারেল মাইলি পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান যে, “আপনারা নিশ্চিতভাবে বলুন যে আপনারা আমার নির্দেশ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।”
বইটিতে আরো বলা হয়েছে যে জেনারেল মাইলি আশঙ্কা করেছেন যে ট্রাম্প আবারও কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলেন কিনা। এতে বলা হয়, এক পর্যায়ে মাইলি হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির একটি ফোন রিসিভ করেন। মাইলি পেলোসিকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিরাপদ, অর্থ্যাৎ ট্রাম্প সেগুলো ব্যবহার করার নির্দেশ দিতে পারবেন না। পেলোসি জেনারেল মাইলিকে বলেন, আমি আপনাকে বলতে চাই যে, ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের জন্য কেউ ট্রাম্পকে থামাতে পারেনি। কে জানে তিনি আবার কি করে বসেন। আপনি জানেন, তিনি উন্মাদ। দীর্ঘ সময় ধরেই তিনি মহাউন্মাদ।” জেনারেল মাইলি বলেন, ম্যাডাম স্পিকার, আমি সবকিছুতে আপনার সঙ্গে একমত।
পেলোসির সঙ্গে কথা বলার পর মাইলি সিদ্ধান্ত নেন যে, তাকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। তিনি তার সার্ভিস চিফকে নির্দেশ দেন সবকিছুর উপর দৃষ্টি রাখার জন্য। মাইলি তার অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন যে নির্বাচনের পরাজয়ের পর ট্রাম্প অপ্রত্যাশিত কিছু করতে পারেন। তিনি সন্ধান পান যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি মেমোতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেটি ছিল জানুয়ারি ১৫ তারিখের আগে তিনি আফগানিস্তান থেকে সকল আমেরিকান সৈন্য ফিরিয়ে আনবে। ট্রাম্পের দুজন উপদেষ্টা এ মেমোর খসড়া করেছিলেন। ন্যাশনাল সিকিউরিটি টিমের কেউ এই মেমো সম্পর্কে জানতেন না।
গ্রন্থে ট্রাম্পকে নীতিনৈতিকতাহীন ও অসৎ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোষ্টের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেনারেল মাইলি চীনের চিফ অফ আমি স্টাফকে ফোন করে বলেন যে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে। মাইলি একবার ২০২০ সালের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি চীনা চিফ অফ স্টাফকে ফোন করেন। শেষ ফোনে মাইলি তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আমক্রমণ করবে না। উডওয়ার্ড ও কস্টা তাদের গ্রন্থের বিষয়বস্তু প্রকাশ করার পর ট্রাম্প সাথে সাথে এক বিবৃতিতে গ্রন্থটি সম্পর্কে বলেন, পুরো গল্পটি নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি বলেন, যদি সত্য না হয়, তাহলে মাইলিকে গ্রেফতার করা উচিত। ট্রাম্প আরো বলেন, আমি কখনো চীনকে আক্রমণ করার কথা ভাবিনি।’ জেনারেল মাইলির অফিস বা পেন্টাগণ থেকে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি। রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর মার্কো রুবিও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জেনারেল মাইলিকে এখনই বরখাস্ত করার জন্য। হোয়াইট হাউজ থেকে এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
Posted ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh