নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক নারী কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, নবনির্বাচিত কাউন্সিলে প্রথমবারের মত নির্বাচিত হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, যিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। এছাড়া প্রথমবারের মত একজন কোরিয়ান বংশোদ্ভুত এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এলজিবিটিকিউ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

জননিরাপত্তা ও করোনা মহামারীর বিধিনিষেধ বেশ ক’জন রিপাবলিকানকেও ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সিটির কাউন্সিলম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। নবনির্বাচিত নারী কাউন্সিল মেম্বারদের মধ্যে দু’জন রিপাবলিকান। ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর সিটি নির্বাচনে রিপাবলিকানরা অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো ফলাফল করায় ডেমোক্রেটরা হতবাক হয়েছে। ৫১ সদস্যবিশিষ্ট নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ডেমোক্রেটদের প্রাধান্য বহু দশকের। কয়েকজন রিপাবলিকান সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হলেও তাতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবেন না। রিপাবলিকান কাউন্সিল সদস্যরা সিটির রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন না। তবে কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে ৩০ জন নারীর নির্বাচন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে নতুন ইতিহাস সংযোজন করেছে।

বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী একটি ধারণা পাওয়া গিয়েছিল যে এবারের সিটি নির্বাচনে অন্তত সাত জন রিপাবলিকান কাউন্সিল সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন এবং যদি তা হতো তাহলে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর তারা সিটিতে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ থাকতো। তারা ডেমোক্রেটদের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারলেও তাদের সোচ্চার কণ্ঠ সিটিবাসীর কানে পৌছানোর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারতো বলে অনেকে মনে করেন। স্ট্যাটেন আইল্যাণ্ডের বরো প্রেসিডেন্ট ছাড়া মেয়র পদ ও চারটি বরো প্রেসিডেন্ট পদ ডেমোক্রেটরাই ধরে রেখেছেন। এখনো সিটি কাউন্সিলম্যান হিসেবে ব্রুকলিনে জাস্টিন ব্রানান এর পুন:নির্বাচনের বিষয়টি স্থির হয়নি। তিনি আগামী বছর সিটি কাউন্সিল স্পিকার পদের জন্য একজন প্রতিদ্বন্দ্বী। গত ২ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে ভোট গণনায় তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রায়ান ফক্সের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ২৫৫ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। ১,৪৫৬ টি অ্যাবসেন্টি ব্যালট এখনো চূড়ান্ত গণনা করা হয়নি, যার মধ্যে প্রায় এক হাজার রেজিস্টার্ড ডেমোক্রেট। ব্রানান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে তিনি ভোটার অনুপস্থিতি খুব কম ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ব্যক্তিগতভাবে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন প্রায় ২৪,০০০ ভোটার এবং ৩,৩০০ জন অ্যাবসেন্টি ব্যালট চেয়েছেন। অথচ সেই নির্বাচনী এলাকায় রেজিস্টার্ড ভোটার সংখ্যা ১০৫,০০০ জন।

ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকদের বক্তব্য হচ্ছে, সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে উভয় দলের প্রায় অভিন্ন ইস্যু ছিল: জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, করোনা মহামারীর বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট নিয়ে হতাশা। তাছাড়া ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে ভোটাররা মনে করেছেন যে তারা পরিত্যক্ত হয়েছেন। হান্টার কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এমিরেটাস কেন শেরিল বলেছেন, “ডেমোক্রেটিক পার্টি কী ইস্যু নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো বার্তার ঘাটতি রয়েছে, যা সিটির ডেমোক্রেটদের জন্য চরম হতাশার ছিল। ভোটার উপস্থিতির স্বল্প হারও তার প্রমান। ডেমোক্রেটদের উচিত ছিল আরও অধিক সংখ্যক ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করার ব্যাপাওে উৎসাহিত করা।” তিনি আরো বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে ডেমোকেটিক পার্টি জাতীয়ভাবে কতটা চাপের সম্মুখীণ।

সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে দক্ষিণ ব্রুকলিনের ডিস্ট্রিক্ট ৪৮ এর অধিকাংশ অধিবাসী অর্থডক্স ইহুদি, রুশ ও ইউক্রেনীয় ইমিগ্রান্ট। সেখানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের হওয়া লেগেছে এবং ডেমোক্রেটরা পিছিয়ে পড়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক রিপাবলিকান প্রার্থী ইননা ভারনিকভ তার ডেমোক্রেট প্রতিদ্বন্দ্বী স্টিভেন স্যাপারস্টেনকে পরাজিত করে সিটি কাউন্সিলে রিপাবলিকানদের চতুর্থ আসন এনে দিয়েছেন। কুইন্সের ডিস্ট্রিক্ট ১৯, ব্রুকলিনের ডিস্ট্রিক্ট ৪৭ এ দুই দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিত হয়েছে। এবারের সিটি কাউন্সিলে ৫ জন এশিয়ান আমেরিকানের বিজয় এক চমক সৃষ্টি করেছে। তারা হচ্ছেন: কুইন্স থেকে দুই কোরিয়ান আমেরিকান জুলি ওন ও লিণ্ডা লী, কুইন্স থেকে কম্বোডিয়ান আমেরিকান স্যান্ড্রা উং; ব্রুকলিন থেকে বাংলাদেশী আমেরিকান শাহানা হানিফ ও ইন্ডিয়ান আমেরিকান শেখর কৃষ্ণণ।