রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সৎবৃত্তির পথ : অসৎবৃত্তির পথ

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

সৎবৃত্তির পথ : অসৎবৃত্তির পথ

সৎ প্রবৃত্তির পথ সহজ ও সরল হয় পক্ষান্তরে অসৎ প্রবৃত্তির পথ জঠিল ও কঠিন হয়। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,“(আল্লাহর নাফরমানী থেকে) দূরে থেকেছে এবং সৎবৃত্তিকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ-সুবিধা দেবো।”(সুরা আল লাইল:৬-৭) সৎবৃত্তির অবলম্বন মানে এক ধরনের মানবিক প্রচেষ্টা।

তিনটি জিনিসকে এর অংগীভূত করা হয়েছে। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এগুলোর মধ্যে সব গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, মানুষ যেন অর্থ লিপ্সায় ডুবে না যায়। বরং নিজের অর্থ-সম্পদ যে পরিমাণ আল্লাহ তাকে দিয়েছেন, তা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকার আদায়ে, সৎকাজে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে সাহায্য করার কাজে ব্যয় করে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তার মনে যেন আল্লাহর ভয় জাগরূক থাকে। সে যেন নিজের যাবতীয় কর্ম, আচার-আচরণ,সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি বিভাগে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হতে না পারে এমন প্রত্যেকটি কাজ থেকে দূরে থাকে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, সে যেন সৎবৃত্তি ও সৎকাজের সত্যতার স্বীকৃতি দেয়। সৎবৃত্তি ও সৎকাজ অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক। বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র ও কর্ম তিনটি সৎবৃত্তির অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সৎবৃত্তির স্বীকৃতি হচ্ছে, শিরক, কুফরী ও নাস্তিক্যবাদ পরিত্যাগ করে মানুষ তাওহীধ, রিসালাত ও আখিরাতকে সত্য বলে মেনে নেবে। আর কর্ম ও নৈতিক চরিত্রের ক্ষেত্রে সৎবৃত্তির স্বীকৃতি হচ্ছে, কোন নির্দিষ্ট ব্যবস্থা ও পদ্ধতি ছাড়াই নিছক নিজের অজ্ঞাতসারে কোন সৎকাজ সম্পাদিত হওয়া নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ ও সৎবৃত্তির যে ব্যবস্থা দান করা হয়েছে মানুষ তার সত্যতার স্বীকৃতি দেবে।

আল্লাহর শরীয়াত নামক যে ব্যাপকতর ব্যবস্থাটি দান করেছেন এবং যার মধ্যে সব ধরনের ও সকল প্রকার সৎবৃত্তি ও সৎকাজকে সুশৃংখলভাবে একটি ব্যবস্থার আওতাধীন করেছেন, মানুষ তাকে স্বীকার করে নিয়ে সেই অনুযায়ী সৎকাজ করবে।
যারা এ ধরণের সৎবৃত্তির পথ অবলম্বন করে, মহান আল্লাহ তার এই পথকে সহজ ও সরল করে দেন।

এটি হচ্ছে এই ধরনের প্রচেষ্টার ফল। সহজ পথ মানে মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতির সাথে মিল রয়েছে এমন পথ। যে স্রষ্টা মানুষ ও এই সমগ্র বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করেছেন তিনি যেমন চান তেমন পথ। যে পথে নিজের বিবেকের সাথে লড়াই করে মানুষকে চলতে হয় না। যে পথে মানুষকে নিজের দেহ, প্রাণ, বুদ্ধি ও মনের শক্তিগুলোর ওপর জোর খাটিয়ে যে কাজের জন্যে তাদেরকে এ শক্তি দান করা হয়নি জবরদস্তি তাদের থেকে সেই কাজ আদায় করে নিতে হয় না। বরং তাদের থেকে এমন কাজ নেয় যে জন্য তাদেরকে প্রকৃত পক্ষে এই শক্তিগুলো দান করা হয়েছে।

পাপপূর্ণ জীবনে চতুরদিকে যেমন প্রতি পদে পদে সংঘাত, সংঘর্ষ ও বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, এ পথে মানুষকে তেমনি ধরনের কোন বাধা ও সংঘাতের সম্মুখীন হতে হয় না। বরং মানুষের সমাজে প্রতি পদে পদে সে সহানুভূতি, সহযোগীতা, প্রেম, ভালোবাসা, মর্যাদা ও সম্মান লাভ করতে থাকে।

এ কথা সুস্পষ্ট, যে ব্যক্তি নিজের ধন সম্পদ মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে, সবার সাথে ভালো ব্যবহার কওে, নিজের জীবনকে অশ্লীল কার্যকলাপ ও দুস্কৃতিমুক্ত রাখে, নিজের লেন-দেনের ব্যাপারে পরিস্কার ও ন্যায়-নিষ্ঠ থাকে, কারো সাথে বেঈমানী,শফত ভংগ ও বিশ্বাসঘাতকতা করে না, যার পক্ষ থেকে কারোর প্রতি জুলুম, নির্যাতন ও অন্যায় আচরণের আশংকা থাকে না, যে প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং যার চরিত্র ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করার সুযোগ কারোর থাকে না, সে যতই নষ্ট ও ভ্রষ্ট সমাজে বাস করুক না কেন সেখানে অবশ্যি সে মর্যাদার আসনে সমাসীন থাকে। মানুষের মন তার দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে। মানুষের হৃদয়ে তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তার নিজের মন ও বিবেকও নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। সমাজে তার এমন মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা কোন অসৎ ব্যক্তি ও দুস্কৃতিকারী কোন দিন লাভ করতে পারে না।

সৎবৃত্তির জীবন যাপন সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,“যে ব্যক্তি সৎকাজ করে সে পুরুষ হোক বা নারী, সে মু’মিন হলে আমি অবশ্যি তাকে দুনিয়ায় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবো এবং (আখিরাতে) তাদের প্রতিদান দেবো তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে।”(সুরা নাহল:৯৭) যারা মনে করে সততা, ন্যায়পরায়নতা, বিশ্বস্ততা ও পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার পথ অবলম্বন করলে মানুষের পরকালে সাফল্য অর্জিত হলেও তার পার্থিব জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। তাদেও জবাবে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের এ ধারণা ভুল।

এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে শুধু পরকালীন জীবনই সুগঠিত হয় না, দুনিয়াবী জীবনও সুখী সমৃদ্ধশালী হয়। সত্যি কথা হলো, দুনিয়ায় যারা সৎ পথ অবলম্বন করেছে, তাদের পরিতৃপ্ত আত্মিক সুখ অসবৃত্তির লোকেরা কখনো অনুধাবন করতে পারে না। যারা প্রকৃত পক্ষে ঈমানদার, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও সৎ তাদের পর্থিব জীবন। যারা বেঈমান ও অসৎকর্মশীল লোকদের পার্থিব জীবনের তুলনায় সুস্পষ্টভাবে ভালো ও উন্নত হয়। নিজেদের নিস্কুলংক চরিত্রের কারণে তারা প্রকৃত যে প্রকৃত সম্মান ও চরিত্র লাভ করেন তা অন্যেরা লাভ করতে পারে না।

যেসব পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও উত্তম সাফল্য লাভ করে তাও অন্যেরা লাভ করতে পারে না। কারণ অন্যদের প্রতিটি সাফল্য হয় নোংরা ও ঘৃণিত পদ্ধতি অবলম্বনের ফসল। সৎলোকেরা ছেঁড়া কাঁথায় শয়ন করেও যে মানসিক প্রশান্তি ও চিন্তার ঐশ্বর্য লাভ করেন তার সামান্যতম অংশও প্রাসাদধারী বেঈমান দুস্কৃতিকারী লাভ করতে পারে না।

আগেই বলা হয়েছে যে, এ ধরনের সৎবৃত্তি অবলম্বনকারীদের পথ মহান আল্লাহ সহজ করে দেন। এর মানে হচ্ছে, যখন সে সৎবৃত্তিকে স্বীকার করে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে, এটিই তার উপযোগী পথ এবং দুস্কৃতির পথ তার উপযোগী নয় আর যখন সে কার্যত আর্থিক ত্যাগ ও তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করে একথা প্রমাণ করবে যে, তার এই স্বীকৃতি সত্য তখন আল্লাহ এ পথে চলা তার জন্য সহজ করে দেবেন।

এ অবস্থায় তার জন্য আবার গোনাহ করা কঠিন এবং নেকী করা সহজ হয়ে যাবে। হারাম অর্থ-সম্পদ তার সামনে এলে সে তাকে লাভের সওদা মনে করবে না। বরং সে অনুভব করবে, এটা জ¦লন্ত অংগার, একে সে হাতের তালুতে উঠিয়ে নিতে পারে না। ব্যভিচারের সুযোগ সে পাবে। কিন্তু তাকে সে ইন্দ্রিয় লিপ্সা চরিতার্থ করার সুযোগ মনে করে সেদিকে পা বাড়াবে না। বরং জাহান্নামের দরজা মনে করে তা থেকে দূরে পালিয়ে যাবে। সালাত তার কাছে কঠিন মনে হবে না বরং সালাতের সময় হয়ে গেলে সালাত না পড়া পর্যন্ত তার মনে শান্তি আসবে না। যাকাত দিতে তার মনে কষ্ট হবে না। বরং যাকাত আদায় না করা পর্যন্ত তার নিজের ধন-সম্পদ নাপাক মনে হবে। মোট কথা প্রতি পদে পদে পদে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই পথে চলার সুযোগ ও সুবিধা সে লাভ করতে থাকবে। অবস্থাকে তার উপযোগী বানিয়ে দেয়া হবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে সাহায্য করা হবে।

এখানে একটি বিষয় পরস্পরবিরোধী মনে হতে পারে, তা হলো, সুরা আল বালাদে এ পথটিকে দূর্গম পার্বত্য পথ বলা হয়েছে আর এখাসে একে বলা হচ্ছে সহজ পথ। মুফাসসিরগণ এই দু’টি কথার সমাধান দিয়েছেন। তাদেও জবাব হচ্ছে, এই পথ অবলম্বনের করার আগে এটা মানুষের কাছে দুর্গম পার্বত্য পথই মনে হতে থাকে।

এ উঁচু দুর্গম পার্বত্য পথে চলার জন্য তাকে নিজের প্রবৃত্তির লালসা নিজের বৈষয়িক স্বার্থের অনুরাগী, পরিবার-পরিজন, নিজের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও কাজ-কারবারের লোকজন এবং সবচেয়ে বেশী শয়তানের সাথে লড়াই করতে হয়। কারণ এদও প্রত্যেকেই তাকে এ পথে চলতে বাধা দেয় এবং একে ভীতিপ্রদ বানিয়ে তার সামনে হাযির করে। কিন্তু মানুষ যখন সৎবৃত্তির স্বীকৃতি দিয়ে সে পথে চলার সংকল্প করে নেয়, তখন এই দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া তার জন্য সহজ হয়ে যায়। তখন নৈতিক অবনতির গভীর খাদ গড়িয়ে পড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

যারা অসৎবৃত্তি পথ অবলম্বন করে এবং এই বৃত্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে না, এ পথ তার জন্য দুর্গম হয়ে যায়। ফলে এ পথ থেকে বের হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। কারণ এ পথে সে পাড়ি জমাতে চায় সে যদিও বৈষয়িক লাভ, পার্থিব ভোগ-বিলাস ও বাহ্যিক সাফল্যেও লোভে এি দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু এখানে সর্বক্ষণ তাকে নিজের প্রকৃতি, বিবেক, বিশ্বজাহানের স্রষ্টার তৈরি করা আইন এবং তার চারপাশের সমাজ পরিবেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়। ফলে সে ঘৃণিত কীটে পরিণত হয়।

Posted ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(865 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.