মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস নিয়ে কথায় কথায় দম্ভোক্তি, কটুক্তি ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন এবং টুইটার বার্তায় কোভিট ১৯ কে পাত্তাই দেননি। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ও ফাষ্ট লেডিসহ হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের ১৩ জন উপদেষ্টা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ম্যারিল্যাণ্ডের ওয়াল্টাররিড সামরিক হাসপাতালে। সেখানে তার চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত সোমবার নিউইয়র্ক টাইমস ও জিয়ানা কলেজ যৌথভাবে একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, ‘নো সিমপ্যাথি টু ট্রাম্প।’ অর্থ্যাৎ জরিপ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আপনারা কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল? উত্তরে ভোটাররা ‘না’ বলেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে যে হোয়াই হাউজ এখন এক আতঙ্কের নাম। কম করে হলেও ট্রাম্প সার্কেলের ১৩ জন কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। সঠিকভাবে টেস্ট করা হলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে। হোয়াইট হাউজের মোট ৩৭৭ জন কর্মচারির মধ্যে কতজন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ মার্ক মেতো।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়া হোয়াইট হাউজের অন্য যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ফার্ষ্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, ইপদেষ্ট হপ হিকস, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সহকারী নিকোলাস লুনা, হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারী ক্যালিগ ম্যাকএনি, সাবেক প্রেস সেক্রেটারী ক্যালিয়ান কনওয়ে, ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার বিল ষ্টিফেন, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান রনা ম্যাকড্যানিয়েল, ইউতাহ’র রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর মাইক লি, নর্থ ক্যারোলিনার সিনেটর টম বিলিস, নটরডেম প্রেসিডেন্ট জন জেনকিনস ও নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। নটরডেম প্রেসিডেন্ট জন জেনকিনস এক সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতই দম্ভভরে মাস্ক ব্যবহার করেননি। ফলে তিনি কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া একজন প্রভাবশালী রিপাবলিকান হওয়ার কারণে নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিষ্টির নামও এসেছে। প্রেস সেক্রেটারী ম্যাকএনির দু’জন আত্মীয় ক্যারোলিন লিভ্যাট ও চাদ হিলমার্টিনও কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত। এ দু’জনও হোয়াইট হাউজ প্রেস টিমের সাথে জড়িত। এছাড়া সিএনএন এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মোট ৩৭৭ জন হোয়াইট হাউজ স্টাফের মধ্যে যদি সকলের বাধ্যতামুলক করোনা টেস্ট করানো হয়, তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিকও হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোভিড ১৯ পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ পাওয়ার পর থেকে পুরো সপ্তাহ জুড়ে এ খবর ছিল টক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। গত শুক্রবার ট্রাম্পকে চিকিৎসার জন্য মেরিল্যাণ্ডের ওয়াল্টাররিড সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে যে, গত রোববার ট্রাম্প অনেকটা জোর করেই হাসপাতাল ছেড়ে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকরা নিষেধ করার কারণে তা সম্ভব হয়নি। টাইমস আরো লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত রোববার আমেরিকান ও বিশ্ববাসীকে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকার মতো নয়। তিনি ভালো আছেন। এরপর গত সোমবার তিনি অনেকটা জোর করেই বিকেল বেলা হোয়াইট হাউজে ফিরে আসেন। হাসপাতাল ত্যাগের আগে তার দ্বিতীয় দফা কোভিড টেস্ট করা হয়নি অথবা প্রেসিডেন্টের বর্তমান অবস্থা পজেটিভ না নিগেটিভ তা প্রকাশ করা হয়নি। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা কেমন বা কি অবস্থা নিয়ে তিনি হোয়াইট হাউজে ফিরে এসেছেন তা এখনো পরিস্কার নয়। ডাক্তার বা ওয়াল্টাররিড হাসপাতাল থেকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনোকিছু জানানো হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হাসাপাতালে থাকা অবস্থায় এক টুইটার বার্তায় কোভিড ১৯ নিয়ে চিন্তা করতে সবাইকে নিষেধ করেছেন। এই টুইটার বার্তার পর প্রেসিডেন্টের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ১০ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সকলের প্রশ্ন ট্রাম্প তার বার্তায় কী বুঝাতে চাইছেন? সবাই বলছেন, প্রেসিডেন্ট কোন মুখ নিয়ে রসিকতা করছেন। ট্রাম্পের এই বার্তার ওপর এক জরিপে দেখা গেছে যে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে প্রেসিডেন্টের এ ধরনের টুইটার বার্তা ভুল বা অন্যায়। ২৯ শতাংশের অভিমত হচ্ছে এটা খুব একটা দোষনীয় নয়। সোমবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে ফেরত আসার পর দুটি নির্দেশনা প্রদান করেন হোয়াইট হাউজ স্টাফ ও উপদেষ্টাদের জন্য। স্টাফদের তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে আপনারা নীরব থাকবেন এবং উপদেষ্টাদেরকে তিনি বলেন, আপনাদের যদি করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়ে তা প্রকাশ করবেন না। গাড়ি থেকে নেমে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করার আগে তিনি মুখের ওপর থেকে মাস্ক খুলে ফেলেন। এরপর চারদিক থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে প্রেসিডেন্টের মাস্ক ব্যবহারে সমস্যা কোথায়?
ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের সাথে প্রথম বিতর্কে চরমভাবে হেরে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় প্রচণ্ড ধস নেমেছে বলা যায়। একাধিক জরিপে জাতীয়ভাবে জো বাইডেন ১৪ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু স্যুয়িং স্টেট ওহাইওতে দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা সমান সমান। সেখানে জরিপে ৪৭ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দেবেন তারা এবং সমসংখ্যক ভোটার জো বাইডেনকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউজে আসার পর হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নেবেন। ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজস্ব প্রচারাভিযানে গত সোমবার ফ্লোরিডায় ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত, আপনি কি প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নেবেন? বাইডেন বলেন, এক্ষেত্রে আমি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলবো। ট্রাম্পের করোনা আক্রান্তে বিষয়টি এখন টক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড হলেও ফার্ষ্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও করোনায় আক্রান্ত। কিন্তু মেলানিয়া কোথায় কি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এ ব্যাপারে কারো বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। ফার্ষ্ট লেডির শারীরিক অবস্থা কেমন তা কেউ জানে না।
Posted ১২:৫৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh