বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১
করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমনের আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী সতর্কতা অবলম্বনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেহেতু ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম সনাক্ত হয়েছে এবং সনাক্ত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ত্রিশটি দেশে বিস্তৃত হয়েছে এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশি দেশ কানাডায় ওমিক্রন সনাক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে সতর্কতা নিতে হয়েছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সকল আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের ক্ষেত্রে যাত্রা শুরুর একদিন অর্থ্যাৎ ২৪ ঘন্টার মধ্যে করোনা টেস্ট নেগেটিভ ফলাফল পেয়ে যাত্রার পরামর্শ দিয়েছে। ওমিক্রন সংক্রমণের আগে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ক্ষেত্রে যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি শুধু তাদের ক্ষেত্রে ৭২ ঘন্টা বা তিন দিন আগে টেস্ট করাানোর বিধি বলবৎ ছিল। সিডিসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিমানবন্দরে পৌছার আগে যাতে কারও মধ্যে ওমিক্রন ভেরাইটি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করার উদ্দেশ্যেই করোনা ভাইরাস টেস্টের বর্তমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আমেরিকান এয়ারলাইনগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে আগত সকল আন্তর্জাতিক যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে এবং সিডিসি যদি তাদের কাছে এসব তথ্য জানতে চায় তাহলে তথ্য সিডিসির কাছে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। গত ৮ নভেম্বর থেকে এ নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে, যখন থেকে নতুন আন্তর্জাতিক ট্রাভেল বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। সেজন্য আন্তর্জাতিক বিমান যাত্রী যারা আমেরিকান কোন বিমানবন্দরে অবতরণ করছেন বা করবেন তাদের নাম, ঠিকানা, ফোপন নম্বর, ইমেইল ও জন্ম তারিখ এয়ারলাইনগুলোকে প্রদান করতে হবে।
সিডিসির সর্বশেষ নির্দেশে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে সকল আন্তর্জাতিক যাত্রীর ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য তা হচ্ছে, তারা ভ্যাকসিন নিয়ে থাকুন অথবা না নিয়ে থাকুন, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌছার একদিনের মধ্যে করোনা ভাইরাস টেস্ট ফলাফল নেগেটিভ হলে বিমানে আরোহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যত্যয় হলে যুক্তরাষ্ট্রগামী আন্তর্জাতিক যাত্রীরা বিমানবন্দরে অহেতুক বিভ্রাটের মধ্যে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে যদি কারও বিস্তারিত জানার থাকে তাহলে তারা সিডিসির ট্রাভেল অ্যাসেসমেন্ট সেকশনে যোগাযোগ করে সম্ভাব্য সহায়তা বা পরামর্শ চাইতে পারেন:
https://t.co/59VCRJmNb2. pic.twitter.com/sGTkp1ZcFx ৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর এই নতুন বিধি বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী ২ বছর বয়সী থেকে শুরু করে সকল বয়সী যাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা ভ্যাকসিন দিয়েছেন এবং যারা ভ্যাকসিন নেননি তাদের সকলেই এই নির্দেশের আওতায় পড়বেন। তবে যেসব যাত্রী দেখাতে পারবেন যে তারা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ৯০ দিন আগে রোগমুক্ত হয়েছেন তারা নতুন বিধির আওতায় পড়বেন না।
যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন তাদেরকে অবশ্যই করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ে ভাইরাল টেস্ট করাতে হবে, যার অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে অ্যান্টিজেন টেস্ট ও নিউক্লেইক এসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট, যেমন: আরটি-পিসিআর টেস্ট (RT-PCR), আরটি-এলএএমপি টেস্ট (RT-LAMP), টিএমএ টেস্ট (TMA), এনইএআর টেস্ট (NEAR), এইচডিএ (HDA) টেস্ট। সিডিসি বলছে যে, এই টেস্টগুলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে করার জন্য অনুমোদিত হতে হবে। পিসিআর টেস্ট জনপ্রিয় হলেও এটির ফলাফল আসতে কয়েকদিন লেগে যায়। ইয়েল ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথের প্রফেসর অ্যালবার্ট কো যাত্রীদের পরামর্শ দিয়েছেন সিডিসির কাছে গ্রহণযোগ্য যথাসময়ে ফলাফল পাওয়া সম্ভব এমন র্যাপিড টেস্ট করিয়ে নিতে। র্যাপিড টেস্ট বিভিন্ন দেশে ফার্মেসিতে নেয়া যেতে পারে। অনেক দেশে বিমানবন্দরেও টেস্ট করোনোর সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু বিমানবন্দরে টেস্ট করানো অনেক ব্যয়বহুল হতে পারে যাত্রীদের জন্য। অ্যালবার্ট কো আরো বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেক বিমানবন্দরে সেলফ-টেস্ট করানোর ব্যবস্থা থাকলেও তা করাতে হবে ‘টেলিপ্যাথ প্রক্টর’ এর সামনে এবং সিডিসির অন্যান্য শর্ত পূরণ করেই তা করাতে হবে। যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন তারা এয়ারলাইনগুলোর ওয়েবসাইট ভিজিট করেও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। বিমানযাত্রীদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। মাস্ক পরিধানের বিধি আগামী বছরের ১৮ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
১৬ রাজ্যে ওমিক্রন, ভ্রমণবিধি কঠোর করছে যুক্তরাষ্ট্র
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ রাজ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত রাজ্যের সংখ্যা এখন ১৬। ভারতে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। থাইল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ওমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সেখানে একজন মার্কিন নাগরিকের শরীরে রাজধানী ব্যাংককে এই সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। ওদিকে সংক্রমণ রোধের জন্য বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে ব্রাসেলস, বেলজিয়ামে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। অন্যদিকে বৃটেনের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বৃটেন যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা এখন নস্যাৎ হয়ে যাওয়ার পথে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের টিকার অন্যতম আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট সতর্কতা দিয়ে বলেছেন পরবর্তী মহামারী হতে পারে আরও ভয়াবহ, আরো প্রাণঘাতী।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন তার দেশে বেশিরভাগ প্রদেশে নতুন যে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, তার বেশির ভাগই ওমিক্রন সংক্রমণ। পাশাপাশি তিনি জনগণকে করোনা ভাইরাসের টিকা নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন তার দেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের মুখোমুখি। এরইমধ্যে সংক্রমনের যে ঢেউ দেখা দিয়েছে তা মহামারী চলাকালে এর আগে দেখা দেয় নি। গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ গুণ। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা আরো বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণের ফলে হাসপাতালের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এরই মধ্যে অধিক পরিমাণ রোগী ভর্তি করার জন্য হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের কিভাবে দ্রুততার সাথে চিকিৎসা সম্পন্ন করা যায় সে বিষয় খতিয়ে দেখছে সরকার। একইসাথে অবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য ন্যাশনাল করোনাভাইরাস কমান্ড কাউন্সিলের একটি বৈঠক আহ্বান করা হচ্ছে খুব শিগগিরই।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩২৫ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ১৪৪ জন। ভারতে একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩০৬ জন। মারা গেছেন ২১১ জন। নতুন তথ্যে জানানো হয়েছে, ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। দক্ষিণ আফ্রিকায় একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১১,১২৫ জন। আগের দিনের তুলনায় এ সংখ্যা সামান্য কম।
গত ৬ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা বলেছেন গত মাসেই স্পেন সফর করেছিলেন এমন একজন মার্কিন নাগরিকের দেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি গত ২৯নভেম্বর থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন। এর মধ্য দিয়ে ওমিক্রন আক্রান্তের দিক দিয়ে থাইল্যান্ড ৪৭তম দেশ। দেশটির ডিপার্টমেন্ট অফ ডিজিজ কন্ট্রোল-এর মহাপরিচালক ওপাস কার্নকাউনপং এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ওমিক্রন আক্রান্ত ওই মার্কিন নাগরিকের বয়স ৩৫ বছর। তার হালকা সংক্রমণ রয়েছে। তার সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন ব্যক্তিদের করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে।উল্লেখ্য বোতসোয়ানা ইমাতিনি, লেসোথো, মালাবি, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়েসহ দক্ষিণ আফ্রিকার আটটি দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে থাইল্যান্ড।
Posted ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh