বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় ১৮ মাস পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোর প্রায় ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী স্কুলে ফিরেছে। তাদের স্কুলে ফিরে আসার মধ্যে আনন্দ ও স্বস্থির পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কাজ করছে। কারণ গত মে মাস থেকে করোনা মহামারী পরিস্থিতির লক্ষ্যণীয় উন্নতি ঘটলেও ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শিথিল করা বিধিনিষেধগুলো পুনরায় বহাল করা নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, গতবছর মাস মাস থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারীর রূপ ধারণ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ স্কুল সিস্টেম নিউইয়র্কের স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষাজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে শিশুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়াসহ শিক্ষা বঞ্চিত থাকাকে স্বাভাবিক বিবেচিত না হওয়ায় অনলাইনে শিক্ষাদান চলতে থাকে। নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ এডুকেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮০ শতাংশ শিক্ষাথী অনলাইনে পড়াশোনা করেছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে। তবে বিজ্ঞানের ছাত্রদের ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল কাজ ব্যাহত হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের মতে সিটির স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা টানা ৫৫০ দিন স্কুলে আসতে পারেনি।
আঠারো মাস পর গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে আসা প্রতিটি স্কুলেই তাদের অভ্যর্থনা জানাতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্কুলগুলোকে বেলুন, ফেষ্টুন দিয়ে সাজানো হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের জন্য ফুলের তোড়াসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থাকা সত্বেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একে অন্যকে দীর্ঘদিন পর কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে। তা সত্বেও শিক্ষক ও অভিভাবকদের চোখেমুখে উদ্বেগ দেখা গেছে। কারণ কেউই নিশ্চিত নয় যে তারা নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন কিনা। কারণ ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা এখনো হ্রাস পায়নি এবং হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের সংখ্যাও গড়ে প্রতিদিন এক হাজারের উপরে। স্কুল ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেও বিদ্যমান পরিস্থিতি আশঙ্কার উর্ধে নয় বলে অনেকে মনে করেন। কারণ স্কুলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে ভাইরাসের সংক্রমণের আশ্কংা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
নিয়ম করা হয়েছে যে, স্কুলে প্রবেশের আগে প্রতিটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে প্রতিদিন ওয়েবসাইটে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। কিন্তু অনেক স্কুলে ওয়েবসাইটে প্রথম দিন কিছু সময়ের জন্য ডাটা আপলোড করা যাচ্ছিল না। তা পরে আপলোড করা সম্ভব হয়। এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের মতে স্কুল খোলার প্রথম দিনে প্রাথমিক হিসেবে ৮২.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। মহামারী পূর্ব ২০১৯ সালে প্রথম দিনের উপস্থিতি ছিল ৯০.১ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৮৯.৫ শতাংশ। অনেক পরিবার আনন্দিত যে তাদের সন্তানরা স্কুলে ফিরে গেছে। কারণ এরই মধ্যে অনেক অভিভাবককে তাদের কাজে ফিরে যেতে হয়েছে এবং অনলাইনে শিক্ষা অনেকসময় কঠিন হয়ে পড়ে। সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত থাকলে অধিক শিক্ষা সহায়তা পাওয়া যায় সরাসরি শিক্ষকের কাছ থেকে, সহপাঠিদের সঙ্গে আলোচনা করেও অনেক বিষয় সম্পর্কে সহায়তা পাওয়া যায়, যা অনলাইনে সহজ ছিল না। অবশ্য অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুল খোলার প্রথম দিনে স্কুলে পাঠাননি। কারণ মহামারী পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেননি।
সিটি কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন যে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে মাস্ক পরে থাকা, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রতিটি ক্লাসরুমে দুটি করে এয়ার-পিউরিফাইয়ার ইত্যাদি। স্কুলে দর্শনার্থীদের জন্য নিয়ম করা হয়েছে যে তাদেরকে এক ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার প্রমাণ প্রদর্শন করতে হবে। এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল স্টাফদের ভ্যাকসিন না নিলেও চলবে বলে জানিয়েছে, তবে প্রি-কে’র ৩ বা ৪ বছর বয়স্ক শিশুদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ক্লাসরুম পর্যন্ত পৌছে দিতে পারবেন এবং তাদেরকে ভ্যাকসিনেশনের প্রমাণ দেখাতে হবে না। সিডিসি পরামর্শ দিয়েছে যে, মিডল ও হাইস্কুল ছাত্ররা যদি ভ্যাকসিন নিয়ে থাকে এবং তাদের মধ্যে যদি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ না থাকে, তাহলে তাদের কোয়ারানটাইনের প্রয়োজন পড়বে না।
Posted ৯:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh