বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
সীমান্ত থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে আগত প্রায় এক লাখ ইমিগ্রান্টের আবাসিক সংস্থানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের দাবির প্রেক্ষিতে স্টেটের সাহায্যের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার বিদ্রুপপূর্ণ সমালোচনা করেছেন স্টেট গভর্নর ক্যাথি সি হকুল। সিটি প্রশাসন ইমিগ্রান্টদের সহায়তা দান মন্থর করারও সমালোচনা করেন তিনি। এক আইনজীবীর মাধ্যমে দীর্ঘ ১২ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে গভর্নর হকুল বলেন, ইমিগ্রান্টদের আগমণ শুরু হওয়ার পর সিটির আহবানে স্টেট সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেও বেশ কয়েক দফা সিটির পক্ষ থেকে স্টেটের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
চিঠিতে তিনি ইমিগ্রান্ট সংকট হ্যান্ডলিংয়ে এরিক অ্যাডামসের পদক্ষেপকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন এবং এর ফলে সিটি ও স্টেটের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। তিনি বলেন, বারোটির বেশি স্থানে ৩,০০০ ইমিগ্রান্টের আবাসিক সংস্থানের জন্য স্টেটের প্রস্তাবকে পর্যন্ত সিটি বাতিল করেছে, কিন্তু অব্যাহতভাবে এ সংকট মোকাবিলায় স্টেট ও ফেডারেল সরকারের সহায়তা কামনা করা হচ্ছে। এমনকি একক বয়স্ক পুরুষ ইমিগ্রান্টদের জন্য বৃহদাকারের তাবুর ব্যবস্থা করার জন্য স্টেটের প্রস্তাবের প্রতিও নেতিবাচক সাড়া দিয়েছে সিটি প্রশাসন।
গভর্নর আরো সমালোচনা করেছেন যে, ইমিগ্রান্টরা যাতে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারে, সিটি এ বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দেয়নি, যার ফলে যারা কাজ করার মধ্য দিয়ে নিজেদের আবাসনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা করতে পারতেন, তারাও এখন সিটির সহায়তা লাভের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকছে। তিনি সিটিকে বাস্তব ভিত্তিক ও সহযোগিতামূলক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান ইমিগ্রান্ট সংকট মোকাবিলার আহবান জানান, এবং স্টেট প্রয়োজনীয় সহায়তা করতেও প্রস্তুত বলে আশ্বাস প্রদান করেন মেয়র অ্যাডামসকে। গভর্নর ক্যাথি হকুল বলেন যে চলতি আর্থিক বছরে স্টেটের পক্ষ থেকে ইমিগ্রান্টদের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার অগ্রিম হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিটির এর মধ্যে মাত্র ১৩৮ মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে বলে দলিলপত্রে দেখা যাচ্ছে। সিটির পক্ষ থেকে ইমিগ্রান্টদের সমগ্র স্টেটজুড়ে পুনর্বাসনের প্রস্তাব স্টেট সরকার গ্রহণ করেনি তা বাস্তবসম্মত বিবেচিত হয়নি বলে।
রেন্ডাল দ্বীপে ২,০০০ ইমিগ্রান্টের শেল্টারে সিটির মাসিক ব্যয় ২০ মিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশ রিপোর্ট: নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন টেক্সাস থেকে নিউইয়র্কে পাঠিয়ে দেওয়া ইমিগ্রান্টদের আবাসিক সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছে। করদাতাদের করের অর্থ বিপুল পরিমাণে ব্যয় হচ্ছে। সিটিকে এ সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে নিউইয়র্ক স্টেট সরকার এবং ফেডারেল সরকার কোনো সাহায্য না করায় ব্যয়ের পুরো বোঝা চেয়ে নিউইয়র্কারদের উপর। সিটি নতুন ২,০০০ ইমিগ্রান্টের জন্য র্যান্ডাল’র আইল্যান্ডে একটি আশ্রয় শিবির চালু করতে যাচ্ছে, সে শিবিরের পরিচালনে মাসিক ব্যয় হবে আনুমানিক ২০ মিলিয়ন ডলার।
এ শিবির স্থাপন করা হচ্ছে ইস্ট হারলেম ও সাউথ ব্রঙ্কসের মাঝামাঝি স্থানে একটি দ্বীপে, যেখানে ২,০০০ বয়স্ক এসাইলাম প্রার্থী ইমিগ্রান্টের বসবাসের ব্যবস্থা থাকবে। এই দ্বীপে এটি দ্বিতীয় দফা ইমিগ্রান্ট শেল্টার স্থাপনের উদ্যোগ। গত বছর অক্টোবর মাসে সিটি একটি শেল্টার স্থাপনের জন্য ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল, কিন্তু প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা না করায় এবং ন্যূনতম কাজে লাগার প্রেক্ষিতে নির্মাণের ২ সপ্তাহ পরই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অর্থ্যাৎ পুরো এক মিলিয়ন ডলারই গচ্চা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাস থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় এক লাখ ইমিগ্রান্টকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে টেক্সাসের রিপাবলিকান সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তে। ফলে নিউইয়র্ক সিটিতে রীতিমতো মানবিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং নিউইয়র্কারদের দেওয়া ট্যাক্সের অর্থে ইমিগ্রান্টদের সকল সেবা নিশ্চিত করতে হচ্ছে সিটি প্রশাসনকে। ইতোমধ্যে উদ্ভুত সংকটে ফেডারেল সরকার এবং বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচিত সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, “আমরা ভেঙে পড়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। নিউইয়র্কারদের সহানুভূতি ও সহৃদয়তা হয়তো সীমাহীন। কিন্তু আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।”
ইমিগ্রান্টদের জন্য সিটিকে প্রতিদিন ৯.৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে, অর্থ্যাৎ এর মাসিক পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং বার্ষিক ব্যয় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। নিউইয়র্ক সিটির মানবাধিকার আইন অনুযায়ী এই সিটি প্রতিটি ইমিগ্রান্টের আবাসনের ব্যবস্থা করতে আইনগতভাবে বাধ্য। মেয়র বলেছেন, এই খাতে ব্যয় আমাদের আগের যেকোনো অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ ইমিগ্রান্টদের এখানে এসে পৌছার বন্ধ হয়নি এবং এখনো অব্যাহত আছে।
এ অবস্থা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য ও টেকসই হতে পারে না। এর আশু অবসান আবশ্যক।” অবশ্য অতি সম্প্রতি মেয়র এরিক অ্যাডামস ও স্টেট গভর্নর ক্যাথি সি হকুল ঐকমত্যে উপনীত হয়েছেন যে, সিটি থেকে ১২০০ ইমিগ্রান্টকে স্টেটের বিভিন্ন কাউন্টিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সিটি ধারণা করছে যে, ইমিগ্রান্টদের খাতে আগামী তিন বছরে ১২ বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয় হবে। ফেডারেল সহায়তা ছাড়া এই ব্যয় সংকুলান করা সম্ভব হবে না বলে সিটি প্রশাসন আশঙ্কা ব্যক্ত করছে।
Posted ৫:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh