বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
করোনা ভাইরাস মহামারীতে কর্মহীন মানুষ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার উদ্দেশ্যে গত সোমবার কংগ্রেস বহুল আলোচিত ৯০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় ষ্টিমুলাস বা আর্থিক প্রনোদনা বিল পাস করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ভুক্তভোগী আমেরিকান নাগরিক, স্থায়ী বাসিন্দা ও বৈধ ইমিগ্রান্ট, যারা ২০১৯ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেছেন তারা ৬০০ ডলারের এককালীন আর্থিক সুবিধা ও ৩০০ ডলার হারে ১১ সপ্তাহের জন্য ফেডারেল আনএমপ্লায়মেন্ট বেনিফট লাভ করবেন। ষ্টেটের পক্ষ থেকে যে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট প্রদান করা হচ্ছে ফেডারেল আর্থিক সুবিধা এর অতিরিক্ত। আগামী সপ্তাহ অর্থ্যাৎ ২৬ ডিসেম্বর থেকে এই আর্থিক সুবিধা প্রদান শুরু হবে এবং ২০২১ সালের ১৪ মার্চ মাস পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। ১১ সপ্তাহের জন্য যে ফেডারেল সুবিধা দেয়া হবে কেউ যদি কোন কারণে যথাসময়ে তা দাবী ব্যর্থ হন তারা আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তা দাবী করতে পারবেন। ৫,৬০০ পৃষ্ঠাব্যাপী এই বিলে ছাত্রদের নেয়া ঋণ, বাড়ি ভাড়ার জন্য সহায়তা ও চিকিৎসা ব্যয়ে সহায়তা করার বিষয়গুলোও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। যাদের পারিবারিক বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৭৫,০০০ ডলার পর্যন্ত তারা ৬০০ ডলার এবং স্বামী-স্ত্রী মিলে বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ১৫০,০০০ ডলার তারা যৌথভাবে ১,২০০ ডলার পাবেন। যাদের উপর নির্ভরশীল সন্তান রয়েছে, তারা প্রতি সন্তানের জন্য অতিরিক্ত ৬০০ ডলার এবং চার জনের পরিবারে সর্বোচ্চ ২,৪০০ ডলার হারে লাভ করবেন। করোনা ভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর গত মার্চ মাসে পাসকৃত ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ষ্টিমুলাস প্যাকেজের অর্ধেকের কম ৯০০ বিলিয়ন ডলার ও কর্মহীন মানুষের সুবিধা অর্ধেক হলেও চরম আর্থিক সংকটে পতিত মানুষের জন্য স্বস্থি ডেকে এনেছে।
ট্রেজারি সেক্রেটারী স্টিভেন মুনচিন সোমবার বলেছেন আর্থিক সুবিধার প্রথম চেক বছর শেষ হওয়ার আগেই ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছবে। ইতোমধ্যে যাদের ব্যাংক একাউন্ট আইআরএস এর কাছে রয়েছে তারা দ্রুত, আর যারা অন্য উপায়ে, অর্থ্যাৎ চেক বা প্রে-পেইড কার্ডে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন তাদেরকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেউ যদি গত মার্চে দেয়া ষ্টিমুলাসের অর্থ না পেয়ে থাকেন অথবা আংশিক পেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তারা ২০২০ সালের ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার সময় “রিকভারি রিবেট ক্রেডিট” হিসেবে বকেয়া পাওনা দাবী করতে পারবেন। এ সম্পর্কে আইআরএস এর ওয়েবসাইটে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া আছে। কারো নির্ভরশীল সন্তানের বয়স ১৭ বছর বা এর বেশি হলে তাদের পক্ষে পরিবার প্রধান তাদের আর্থিক সুবিধা দাবী করতে পারবেন না।
অধিকাংশ ষ্টেট কর্মহীন হয়ে পড়া লোকদের ২৬ সপ্তাহের জন্য আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট দিয়ে থাকে। কেয়ারস অ্যাক্টের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ১৩ সপ্তাহ এবং বর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ সপ্তাহ অর্থ্যাৎ মোট ২৪ সপ্তাহের ফেডারেল আর্থিক সুবিধা পাবে ভুক্তভোগীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ যারা সেলফ-এমপ্লয়েড বা চাকুরিদাতার অধীনেও স্বল্প আয় করেন এবং যাদের ক্ষেত্রে প্রায়শ ষ্টেট বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ থাকে না ষ্টিমুলাস প্যাকেজে এ ধরনের কর্মজীবী, যারা বার্ষিক কমপক্ষে ৫,০০০ ডলার আয় করেন তাদের ক্ষেত্রে ৩০০ ডলার সাপ্তাহিক ফেডারেল বেনিফিটের অতিরিক্ত সপ্তাহিক ১০০ ডলার করে প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। তবে কেউ ষ্টেট বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য হলে তারা সপ্তাহে অতিরিক্ত ১০০ ডলার হারে পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। নিউইয়র্ক টাইমসের ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, “ধরা যাক কোন ব্যক্তির অধিকাংশ আয় আসে মুভিতে ফ্রিল্যান্স কাজ করে, কিন্তু তিনি রেস্টুরেন্টে সামান্য বেতনে কাজ করেন। এ ধরনের কোন কর্মী তার নিম্ন আয়ের কারণে স্টেট পর্যায়ের আনএমপ্লয়মেন্টে বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। তার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফেডারেল সুবিধা ১০০ ডলার প্রযোজ্য হবে না।” যারা অতিরিক্ত ১০০ ডলার হারে সুবিধা পাওয়ার যোগ্য তাদের এই সুবিধা ৩০০ ডলারের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। যারা ইতোমধ্যে ফেডারেল ও ষ্টেটের আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট লাভ করছেন দ্বিতীয় দফায় ১১ সপ্তাহের বেনিফিট পাওয়ার জন্য তাদের নতুন করে কিছু করার প্রয়োজন পড়বে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তারা আগের পদ্ধতিতেই প্রতি সপ্তাহে বেনিফিট দাবী করা সাপেক্ষে তা পাবেন।
বাড়ি ভাড়া সহায়তা: করোনা মহামারীর কারণে যারা বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন, আংশিক ভাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন এবং বাড়ি ভাড়া বকেয়া পড়েছে, তাদের সহায়তা করার জন্য ফেডারেল সরকার ষ্টিমুলাস প্যাকেজে ২৫ বিলিয়ন ডলার বাড়িভাড়া সহায়তার জন্য বরাদ্দ রেখেছে, যা স্টেট ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এ সুবিধা পেতে হলে ভাড়াটিয়াদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে প্যানডেমিকের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্তত একজনের গৃহহীন অবস্থা বা বসবাসের অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকতে হবে; আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য হতে হবে; অথবা প্রত্যক্ষা বা পরোক্ষাভাবে আর্থিক সংকটের মধ্যে থাকতে হবে। বাড়ি ভাড়া সহায়তার ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের লোকদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে, যা তিন মাস বা আরো বেশি সময় যাবত কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। ভাড়িাটিয়ারা ভাড়া পরিশোধে অসমর্থ হলে বাড়ি মালিকরা ভাড়াটিয়াদের উচ্ছদ করতে পাববেন কিনা সে সম্পর্কে ষ্টিমুলাস প্যাকেজে বলা হয়েছে যে আগামী ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত বাড়ি মালিকরা উচ্ছেদ করতে পারবেন নাম যা এর আগে ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। অ্যাসপেন ইন্সটিটিউটের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ৩ থেকে ৪ কোটি ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ”স্টুডেন্ট লোন সম্পর্কে দ্বিতীয় দফ ষ্টিমুলাস প্যাকেজে নতুন করে কিছু বলা হয়নি। কেয়ারর্স অ্যাক্টের আওতায় এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট ইতোমধ্যে এর মেয়াদ আগামী ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সূদের হার কম করা হয়েছে এবং কোনো মেয়াদ বেঁেধ দেয়া হয়নি। ফেডারেল স্টুডেন্ট এইড এর জন্য আবেদনের পদ্ধতি সহজতর করা হয়েছে।
প্যাকেজে কী আছে
-শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা সপ্তাহে সরাসরি পেচেকের মাধ্যমে ৬০০ ডলার করে পাবে।
-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পেচেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম ঋণ পরিশোধের জন্য ২৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তহবিল।
-সিনেমা হল বা মঞ্চ বা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সহায়তার জন্য দেড় হাজার কোটি ডলারের তহবিল।
-বেকারভাতা হিসেবে সম্প্রসারিত প্রকল্পের আওতায় সপ্তাহে ৩০০ ডলার করে দেওয়া হবে।
-করোনা টিকা কেনা ও এর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ২ হাজার কোটি ডলার। টিকা সরবরাহের জন্য ৮০০ কোটি ডলার।
-করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ২ হাজার কোটি ডলার।
-বাড়ি ভাড়ায় সহায়তার জন্য আড়াই হাজার কোটি ডলার।
-স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
-শিশু যত্ন কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার কোটি ডলার।
-সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (স্ন্যাপ) ও চাইল নিউট্রিশন প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
-পরিবহন খাতকে সহায়তার জন্য রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল।
এই বিল পাসের সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে কেয়ারস অ্যাক্টের আওতায় জরুরি ঋণসেবা দিতে ফেডারেল রিজার্ভকে দেওয়া ৪২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল।
Posted ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh