বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ এ কবির
করোনাকালে মানবতার সেবায় অনন্য ভূমিকা পালন নিউইয়র্ক সিটির করছে জ্যামাইকা ও ফ্যামিলি কেয়ার ফামের্সি। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিন্যুস্থ বাংলাদেশী মালিকানাধীন ফার্মেসী দু’টির সুনাম এখন স্থানীয় বাংলাদেশীদের মুখে মুখে। করোনা ভাইরাস মহামারির আগেও প্রায় দেড় যুগ ধরে গ্রাহকদেরকে উন্নত সেবা প্রদান করে আসছে জ্যামাইকা ফার্মেসী। পরবর্তীতে একই ধারায় সম্পৃক্ত হয় অনতিদূরে তাদেরই মালিকানাধীন আরেকটি প্রতিষ্ঠান ফ্যামিলি কেয়ার ফার্মেসী।
অতিদ্রুত এবং নির্ভুলভাবে প্রেসিক্রিপশন পূরণ করার ক্ষেত্রে বরাবরই অগ্রভাগে অবস্থান ফার্মেসী দু’টির। ফলে বাংলাদেশী গ্রাহকদের পছন্দের ফার্মেসী হিসেবে দ্রুত হয়ে উঠে সুপরিচিত। বাংলাদেশীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন স্বদেশী ফার্মেসী দু’টিতে গিয়ে। অনেক দূর থেকেও ছুটে আসেন অনেক রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যগণ। ফার্মেসী দু’টি চলছিলোও ভালো। কিন্তু এরই মাঝে গত মার্চের মাঝামাঝি শুরু হয় মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। জাতীয় জরুরী অবস্থা এবং নিউইয়র্ক সিটি জুড়ে জারি করা হয় লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মহামারি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে নিউইয়র্ক সিটিতে। অনেক বাংলাদেশী পরিবার আক্রান্ত হয় করোনায়। প্রতিদিন বাড়তে থাকে রোগী ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশী কম্যুনিটির অনেক পরিচিত মুখ হারিয়ে যায় করোনায়। চারিদিকে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দিশেহারা মানুষ। এমনকি হাসপাতালে যেতেও ভীত ছিলেন অনেকে। ডাক্তারদের অফিস বন্ধ হয়ে যায়। তারা শুরু করেন টেলিমেডিসিন প্র্যাকটিস। ডাক্তারগণ ফোনে পরামর্শ দেন রোগীদের। অনলাইনে প্রেসক্রিপশন পাঠান ফার্মেসীগুলোতে। করোনার প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধপত্র ছাড়াও যারা নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন চিকিৎসকগণ তাদের প্রেসক্রিপশনও পাঠান ফার্মেসীতে । ফলে মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ যারা রোগী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন তাদেরকে তো আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। মানুষের জীবন কিভাবে চলবে ঔষধ ছাড়া। তাই হাসপাতালের মতো খোলা রাখতে হয়েছে ফার্মেসী। হাসপাতালের ডাক্তার নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো ফার্মাসিস্ট, সহকারী ফার্মাসিস্ট এবং অন্যান্য কর্মীদের কাজ করতে হয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা। যারা সামনের কাতারে থেকে নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের চিকিৎসা করছেন। প্রাইভেট চিকিৎসকরাও কাজ করছেন পরোক্ষভাবে। আর এসব যোদ্ধাদের পেছন থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেছেন করোনা যুদ্ধে দ্বিতীয় সারিতে থাকা ফার্মাসিস্টগণ। ফার্মাসিস্টরা হাসপাতালে যেমন কাজ করেছেন তেমনি কাজ করেছেন নিজ নিজ ফার্মেসীতে।
হিলসাইড এভিন্যুর জ্যামাইকা ও ফ্যামিলি কেয়ার ফার্মেসীও শামিল হয়েছে এ যুদ্ধে। ফার্মেসীতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং সবরকম স্বাস্থ্যনীতি অনুসরণ করে করোনাকালে গ্রাহকদের হাতে ঔষধ তুলে দিয়েছে ফার্মেসী দু’টি। যারা ভয়ংকর এ দুঃসময়ে ফার্মেসী থেকে ঔষধ সংগ্রহ করতে পারেননি তাদের অনেকের বাসায় পৌছে দিয়েছে ঔষধ সামগ্রী। দু:সময়ে ফার্মেসী দু’টোতে মিলছে করোনা প্রতিষেধক ঔষধ। এছাড়া আছে করোনা প্রতিরোধক রেভাইভাইফাই, ভিটামিন-সি, জিঙ্ক, আয়রণ সহ অন্যান্য জরুরী ঔষধ। আর এসব কিছুর জন্য যিনি নিবেদিত প্রাণ তিনি হলেন জ্যামাইকা ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ এ কবির। করোনাকালে ফার্মেসীর সার্ভিস অব্যাহত রাখা খুবই ঝুকিপূর্ণ ছিলো বলে জানান তিনি। মোহাম্মদ কবির বলেন, তারপরও অতি দ্রুত পুরো ফার্মেসীকে আপৎকালীন স্বাস্থ্যবিধির উপযোগী করে তৈরী করা হয়। প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত খোলা রাখা হয় ফার্মেসী। এসময় ঔষধের অপ্রতুলতা ছিলো। অভাব ছিলো কাজ করার মতো লোকের। ঝুঁকি ছিলো করোনা সংক্রমনের। তখন বোঝার উপায় ছিলোনা ঔষধ সংগ্রহ করতে আসা ব্যক্তিদের মাঝে কে করোনাক্রান্ত। আর কে করোনাক্রান্ত নয়। তারপরও মানুষের সেবায় আমরা কখনো শৈথিল্য প্রদর্শন করিনি। অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ কবির মনে করেন মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে আত্নসন্তুষ্টি যেমন আছে। তেমনি আছে মহান আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ লাভের সুযোগ। তিনি বরাবরই বাংলাদেশী গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশী গ্রাহকদের তিনি জ্যামাইকা এবং ফ্যামিলি কেয়ার ফার্মেসীর সেবা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়বদ্ধতা আছে গ্রাহকদের প্রতি, তেমনি বাংলাদেশীদেরও উচিত দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। উল্লেখ্য উভয় ফার্মেসীর মালিকানা তাদের পারিবারিক। ফ্যামিলি কেয়ার ফার্মেসী পরিচালনায় আছেন তারই সুযোগ্য কন্যা ডঃ তাজরুবা কবির। তিনিও রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট। এ ফার্মেসীর ম্যানেজার মামুন আহমেদ ফার্মেসী ব্যবসায় অত্যন্ত অভিজ্ঞ। এছাড়া বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ সহকারী কাজ করছেন ফার্মেসী দু’টিতে। প্রেসক্রিপশন ঔষধ ছাড়াও ১৬৮-৪৩ হিলসাইড এভিন্যুস্থ জ্যামাইকা ফার্মেসী এবং ১৭০-০৪ হিলসাইড এভিন্যু’র ফ্যামিলি কেয়ার ফার্মেসী ওভার দ্যা কাউন্টার ফার্মেসী সামগ্রী পাওয়া যায়। সিভিএস কেয়ার মার্কের আওতাধীন ফার্মেসী দু’টি প্রায় সব ধরণের হেলথ ইন্সুরেন্স গ্রহণ করে থাকে। কসমেটিক্স, হাউজহোল্ড অনেক সামগ্রী রয়েছে ফার্মেসী দু’টিতে। এছাড়া করোনা কালে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য হিলসাইড এভিন্যু এলাকায় বাংলাদেশী মালিকানাধীন ফার্মেসী দু’টি কম্যুনিটির অন্যান্য সেবায়ও বরাবর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
Posted ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh