বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
চতুর্থ ধাপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে নিউইয়র্ক সিটির ২৫হাজার রেস্টুরেন্ট পুনরায় খুলে দেয়ার উৎসবে মেতে উঠার কথা ছিলো। কিন্তু তা হয়নি সিটির রাস্তা এবং ফুটপাত আটকে দিয়ে অনেকে বাইরে সার্ভিস চালিয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার গভর্নর এন্ড্রু কুম্যোও মেয়র বিল ডি ব্লাজিও চতুর্থ ধাপে সিটির কার্যক্রম পুনরায় খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন। নিউইয়র্ক স্টেটের অন্যান্য এলাকায় সীমিতাকারে মিউজিয়াম ও র্সেটুরেন্টের ইনডোর সার্ভিস খুলে দেয়া হলেও সিটিতে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় নিউইয়র্ক সিটিতে ধাপে ধাপে পুনরায় খুলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত। এই প্রক্রিয়ায় এখন চলছে চতুর্থ ধাপ। গত ২০ জুলাই সোমবার থেকে শুরু হয়েছে চতুর্থ ধাপের কার্যক্রম। এর আগে ৮জুন প্রথম, ২২ জুন দ্বিতীয় এবং ৬ জুলাই তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার অনুমতি দেয় সিটি কর্তৃপক্ষ। এতে নাগরিক জীবনে খানিকটা প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিলেও জীবন যাত্রা এখনও স্বাভাবিকতা ফিরে পায়নি। তৃতীয় ধাপ গত ৬ জুলাই শুরু হলে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী রেস্টুরেন্টগুলোতে শুরু হয়নি ইনডোর সার্ভিস। করোনা ভাইরাসের পুন: আক্রমনের সম্ভাবনা থাকায় এবং রেস্টুরেন্ট এজন্য ঝুকির কারণ হিসেবে সনাক্ত হওয়ায় শেষ মুহূর্তে রেস্টুরেন্টের ইনডোর সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন মেয়র। তবে অনেক রেস্টুরেন্ট বাইরে সার্ভিস চালু রেখেছে সামাজিক দূরত্ব মেনে। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত ইনডোর সার্ভিস বন্ধই থাকবে। চতুর্থ ধাপে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আর্টস, এন্টারটেইনমেন্ট, রিক্রেয়েশন, স্কুল খোলা যাবে- এমন ইঙ্গিত দিয়েছে প্রশাসন। মার্চের শুরুতে নিউইয়র্ক রাজ্যে ছোবল হানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিউইয়র্কে লকডাউন শুরু হয় ২০ মার্চ ।
জরুরি কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট এমন প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট-বার। এ অবস্থা চলে টানা প্রায় তিন মাস। এ সময়ে নিউইয়র্কে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ সহস্রাধিক। তারমধ্যে শুধু নিউইয়র্ক সিটিতে মারা গেছে ২০ সহস্রাধিক মানুষ। আড়াই শতাধিক বাংলাদেশীও করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন নিউইয়র্কে। সব কিছু মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নিউইয়র্কের জনজীবন। তিন মাসের মাথায় করোনার প্রকোপ কমে আসলে ক্রমান্বয়ে চারধাপে পুণরায় নিউইয়র্ক খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো। প্রথম ধাপে প্রয়োজনীয় যেসব ব্যবসা খুলে দেয়া হয়, তার মধ্যে ছিল সব ধরনের নির্মাণ কাজ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান। জরুরি নয়, এমন খুচরা স্টোর খুলে দেয়া হয় ডেলিভারি, সাইড এবং স্টোর পিকআপের জন্য। হোলসেল ব্যবসার পাশাপাশি খুলে যায় ড্রাইভ ইন মুভিজ, ল্যান্ড স্ক্যাপিং ও গার্ডেনিং । ২২ জুন শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে অনুমতি দেয়া হয় কতিপয় ইনডোর ব্যবসা পুণরায় খুলে দেয়ার। তবে তা করা হয়েছে সীমিত জনসমাগম, পরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক দূরত্বের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম মেনে চলার শর্তে। এই ধাপে খুলে দেয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রেস্টুরেন্টের আউটডোর ডাইনিং, ওয়েটিং এরিয়া বন্ধ রাখার শর্তে হেয়ার কার্টিং সেলুন বা বারবার শপ। বিভিন্ন অফিস, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও ইন্সপেকশন, রিটেইল স্টোর, গাড়ি বেচা-কেনা, লিজ ও কার রেন্টাল, রিটেইল রেন্টাল, রিপিয়ারিং ও ক্লিনিং সার্ভিসেস, কমার্শিয়াল বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট।
তৃতীয় ধাপ চলছে যে সকল স্থানে ইতোপূর্বে ১০ জন মানুষের সমাগম সীমিত ছিলো, সেখানে ২৫ জন সমবেত হতে পারছে। নেইল সেলুন, ম্যাসেজ পার্লার এবং ট্যানিং সেলুন খোলা হচ্ছে।
এদিকে নিউইয়র্কের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় পুণরায় ধাপে ধাপে খুলেছে নিউইয়র্কের ব্যবসায় বাণিজ্য। ছোটখাটো অফিস। আর লকডাউনে হাফিয়ে ওঠা মানুষ হোররা দিয়ে নামছে রাস্তায়। জন-সমাগমে রাস্তায় দোকানপাটে অনেকেই চলছেন মাস্ক ছাড়া। মানছেন না সামাজিক দূরত্বের বিধি-নিষেধ। বাংলাদেশি অধ্যুষিত অনেক এলাকায় বিশেষ করে জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিনে, ব্রঙ্কসে জমে উঠেছে ফুটপাতের আড্ডা। এসব আড্ডাবাজদের অনেককেই এড়িয়ে যাচ্ছেন মাস্কের ব্যবহার। আড্ডা মারছেন গাঁ-ঘেষাঘেষি করে। রাস্তা-ফুটপাত জুড়ে দাঁড়িয়ে পান করছেন চা। ফুঁকছেন সিগারেট। করোনায় গোটা পৃথিবী বদলে গেলেও বদলাননি এসব মানুষ এবং তাদের স্বভাব। ফুটপাতের আড্ডার কারণে সাধারণ মানুষের চলাচালেও বিঘ্ন ঘটছে। অথচ তারা তোয়াক্কা করছে না। মনে হয় কবে কোন যুগে করোনার প্রার্দুভাব ঘটেছিলো-তা আর এখন মনে পড়ছে না। বিধি-নিষেধ না মানলে টোকা মারতে পারে। নিউইয়র্ক ইতোমধ্যেই আবার বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। করোনা পুনরায় দরজায়। নটখটে এ রোগ ইতোমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগানসহ বিভিন্ন রাজ্যে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ চালিয়েছে। নতুন করে লক ডাউনের কথা ভাবছে এসব রাজ্য। স্থগিত করেছে পুণরায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি।
নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে বার বার সতর্ক করছেন সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। এবং গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো। শুধু বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাই নয়, ম্যাহাটানসহ সিটির কম করে হলেও ১৫টি জিপকোড এলাকায় চলছে ফ্রি স্টাইলে চলাফেরা ও আড্ডা। মানুষের জীবন একটাই। একবার চলে গেলে আর ফিরবে না। অসুখ মানেই সুখ নেই। আড্ডায় ক্ষনিকের সুখ থাকলেও অসুখ সব কিছু হারাম করে দেয়। সুতরাং সাবধানতা, সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনের কোন বিকল্প নেই। বেঁেচে থাকলে আড্ডা মারার সময়ের কমতি হবে না। তাই সবার উচিত নিজেকের বাঁচানো এবং অন্যকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করা।
Posted ৯:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh