মন্তব্য প্রতিবেদন : | শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
করোনার মরণ কামড় এখনও শেষ হয়নি। আক্রান্তদের অনেকে বেড ছাড়েনি হাসপাতালের। বলা চলে এসময়টায় ভাইরাস ব্রেক চলছে। আর এ ফাঁকেই নিউইয়র্ক সিটির অনেক রাস্তা, ফুটপাত চলে গেছে আড্ডাবাজদের দখলে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে জীবনের চেয়ে আড্ডার মূল্যই বেশি। মহামারি করোনার থাবায় নিউইয়র্ক সটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। প্রকৃত হিসেবে এ সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। টানা তিন মাসেরও অধিকাল চলেছে লক ডাউন। সিটির বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকুরি হারিয়ে দিশেহারা। এদের মাঝে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যাও কম নয়। প্রায় ৩’শ এর কাছাকাছি। করোনাকালের বিভীষিকাময় দিনগুলোতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষই ছিলো ভয়ানক আতঙ্কে। অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার নজির ছিলো খুবই কম। মানুষ শুধু গৃহে স্বেচ্ছা বন্দিই ছিলো না। নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে ছিলো শামুকের মতো। বাইরে, বাজারে, দোকানপাটে গিয়ে করোনার সংক্রমণ থেকে নিজেদের জীবন বাঁচানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা ছিলো সবার মাঝে। এমনকি করোনাক্রান্ত ব্যক্তি ও হাসপাতাল মাড়াতে চাননি প্রাণভয়ে। দুর্বিসহ এ সময়টায় বুঝা গেছে মানুষ তার জীবনকে কতোটা ভালোবাসে। করোনাকালীন সময় মানুষ সামাজিক, পারিবারিক এমনকি ব্যক্তিগত সব ধরনের দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। প্রয়োজনে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করেছে। সাবান-পানি দিয়ে দু’হাত ধৌত করতে ভুলেনি কখনো। অর্থাৎ চেষ্টা করেছে সব নিয়মকানুন মেনে চলার। করোনার প্রকোপ কমে গেছে নিউইয়র্কে। এখন এর ঢেউ লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে। সেসব রাজ্যে আক্রান্তের হার এখন ব্যাপক। আর মানুষও মরছে। নিউইয়র্ক, নিউজার্সিতে যখন করোনায় বেশুমার মরছে মানুষ, তখন এইসব রাজ্যের বাসিন্দারা কোন বিধি নিষেধ মানতে চায়নি। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক, এসব নিয়ে অনেকে ঠাট্টা মস্করা করতো। এদেরই একজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারোনা এখন তার পরিবারের দরোজায় কড়া নাড়ছে। এমন সংবাদ চাউর হয়ে গেছে।
এদিকে নিউইয়র্কের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় পুণরায় ধাপে ধাপে খুলেছে নিউইয়র্কের ব্যবসায় বাণিজ্য। ছোটখাটো অফিস। আর লকডাউনে হাফিয়ে ওঠা মানুষ হোররা দিয়ে নামছে রাস্তায়। জন-সমাগমে রাস্তায় দোকানপাটে অনেকেই চলছেন মাস্ক ছাড়া। মানছেন না সামাজিক দূরত্বের বিধি-নিষেধ। বাংলাদেশি অধ্যুষিত অনেক এলাকায় বিশেষ করে জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিনে, ব্রঙ্কসে জমে উঠেছে ফুটপাতের আড্ডা। এসব আড্ডাবাজদের অনেককেই এড়িয়ে যাচ্ছেন মাস্কের ব্যবহার। আড্ডা মারছেন গাঁ-ঘেষাঘেষি করে। রাস্তা-ফুটপাত জুড়ে দাঁড়িয়ে পান করছেন চা। ফুঁকছেন সিগারেট। করোনায় গোটা পৃথিবী বদলে গেলেও বদলাননি এসব মানুষ এবং তাদের স্বভাব। ফুটপাতের আড্ডার কারণে সাধারণ মানুষের চলাচালেও বিঘ্ন ঘটছে। অথচ তারা তোয়াক্কা করছে না। মনে হয় কবে কোন যুগে করোনার প্রার্দুভাব ঘটেছিলো-তা আর এখন মনে পড়ছে না। বিধি-নিষেধ না মানলে টোকা মারতে পারে। নিউইয়র্ক ইতোমধ্যেই আবার বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। করোনা পুনরায় দরজায়। নটখটে এ রোগ ইতোমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগানসহ বিভিন্ন রাজ্যে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ চালিয়েছে। নতুন করে লক ডাউনের কথা ভাবছে এসব রাজ্য। স্থগিত করেছে পুণরায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি। নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে বার বার সতর্ক করছেন সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। এবং গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো। শুধু বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাই নয়, ম্যাহাটানসহ সিটির কম করে হলেও ১৫টি জিপকোড এলাকায় চলছে ফ্রি স্টাইলে চলাফেরা ও আড্ডা। মানুষের জীবন একটাই। একবার চলে গেলে আর ফিরবে না। অসুখ মানেই সুখ নেই। আড্ডায় ক্ষনিকের সুখ থাকলেও অসুখ সব কিছু হারাম করে দেয়। সুতরাং সাবধানতা, সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনের কোন বিকল্প নেই। বেঁেচে থাকলে আড্ডা মারার সময়ের কমতি হবে না। তাই সবার উচিত নিজেকের বাঁচানো এবং অন্যকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করা।
Posted ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh