মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
এখন সবার দৃষ্টি আগামী সোমবারের দিকে। কারণ আগামী ১৪ ডিসেম্বর সোমবার ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা ওয়াশিংটন ডিসিতে একত্রিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট প্রদান করবেন জো বাইডেনকে। এই মাঝে জো বাইডেন ৩০৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছে ২৩২ টি ইলেক্টোরাল ভোট। আগামী সোমবার ইলেক্টোরাল কলেজের ডেলিগেটরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সাধারণত যে স্টেটে যে দলীয় প্রার্থী জয়ী হন সেই স্টেটের ইলেক্টোরাল কলেজের ডেলিগেটদের ভোট বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে যায়। কিন্তু এই নিয়মের ব্যতিক্রমও আছে। অর্থ্যাৎ এখানে ইলেক্টোরাল কলেজের ডেলিগেটরা এত বেশি স্বাধীন যে, তারা ইচ্ছা করলে যে কোন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। গত সোমবার রিপাবলিকান দলীয় কিছু রক্ষণশীল কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এই মর্মে অভয়বাণী শুনিয়েছেন, ‘আপনি নতি স্বীকার করবেন না। নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। আমরা সেটা উদঘাটন করবো এবং আপনার পক্ষে হাউজ ফ্লোরে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ প্রায় ২৬ জন রক্ষণশীল কংগ্রেসম্যানের সাথে ২ জন সিনেটরও একই কথা বলেছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত গোপনে ও নাটকীয়ভাবে হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছেন। জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানেও যে ট্রাম্প উপস্থিত থাকছেন না তা প্রায় নিশ্চিত। গত মাসে ট্রাম্প প্রথমে বলেছিলেন যে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন যদি ইলেক্টোরাল কলেজের ডেলিগেটরা তার বিপক্ষে ভোট দেন। এজন্য ট্রাম্প তাকিয়ে আছেন আগামী সোমবারের দিকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো আশা পোষণ করছেন যে ইলেক্টোরাল কলেজের ডেলিগেটরা হয়ত তাদের মতামত পরিবর্তন করে তাকেই সমর্থন করবেন। এজন্য তিনি চেষ্টা ও তদবির দুটোই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে যতগুলো স্টেটে মামলা দায়ের করা হয়েছিল তার সবগুলোতেই তিনি হেরেছেন। পেনসিলভেনিয়ায় মোট তিনবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী মামলা আদালত খারিজ করে দিয়ে বলেছে বাদীপক্ষ নির্বাচনে অনিয়মের কোন ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তা সত্বেও ট্রাম্পের টিম থেমে নেই।
বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোটে আপিল করার হুমকি দিয়েছে। গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গিয়েছিলেন জিির্জয়ায় সিনেট রানঅফ নির্বাচনে নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য। সেখানে তিনি টেলিফোন করে জর্জিয়ার রিপাবলিকান দলীয় গভর্নর ব্রায়ান কেম্পকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করেন জর্জিয়ার নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত করে তার অনুকূলে কাজ করার জন্য। গভর্নর কেম্প ট্রাম্পের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, রাজ্য আইন প্রনেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে ভোটের ফলাফল পাল্টে ফেলা বা নির্বাচনী ফলাফলের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা স্টেট অফ জর্জিয়ার আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। এরপর ট্রাম্প জর্জিয়ার ব্যালটের উপর অডিট করার অনুরোধ জানালে গভর্নর কেম্প বলেন, নির্বাচনী পদ্ধতিতে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। প্রথম জর্জিয়ার নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুরোধ করেছিলেন জর্জিয়া যাতে সার্টিফাই করে জো বাইডেনকে ভোট প্রদান না করে। তখন গভর্নর কেম্প তাকে বলেছিলেন, ‘আমরা যা করতে পারি তা হচ্ছে জর্জিয়ানদের ইচ্ছার প্রতিফলন। এখানে আমাদের অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। রিপাবলিকান হাউজ রক্ষণশীলদের এক ক্ষুদ্র অংশ বলেছেন যে আগামী সোমবার ইলেক্টোরাল কলেজের ডেলিগেটরা যদি জো বাইডেনকে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন তার পরও আমাদের চেষ্টা থেমে থাকবে না। ওহাইয়োর রিপাবলিকান দলীয় রক্ষণশীল কংগ্রেসম্যান জিম জর্দানের নিকট থেকে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল যে আগামী সোমবার ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে হেরে যাওয়ার পরও কি আপনারা নতি স্বীকার করবেন না? উত্তরে জিম জর্দান বলেন, ‘না কোনভাবেই না, কোনভাবেই না, কোনভাবেই না! তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি যে সত্যিকার অর্থে নির্বাচনে কি ঘটেছিল।’
ওয়াশিংটন পোস্ট গত সোমবার এক রিপোর্টে প্রকাশ করেছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে ও গোপনে হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করতে যাচ্ছেন এবং তিনি নতি স্বীকার করবেন না। তবে কি ধরনের নাটকীয়তা বা গোপনীয়তা সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে তার আগে এয়ারফোর্স ওয়ানে করে ফ্লোরিডা যাবেন। যেদিন জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন সেদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেন বিরোধী এক সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন এবং সেই সমাবেশ থেকে ট্রাম্প আগামী ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পুনরায় তার প্রার্থিতার কথা ঘোষণা করবেন।
Posted ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh