বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান পরিচালনায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের খোলামেলা সমর্থন আমেরিকান প্রশাসনের অভ্যন্তরে বেড়ে উঠা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে ৪০টির বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী ৫ শতাধিক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে।
আমেরিকান সরকারে রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত ও সংস্থাগুলোর কর্মকতারা গত মঙ্গলবার তাদের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে গাজা ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেনের সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তারা এ চিঠি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সেক্রেটারি অফ স্টেটের কাছে পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং বিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরাইলকে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি না করার জন্য চাপ দিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানান হয়। এটি বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদী চিঠির মধ্যে সর্বশেষ, যার মধ্যে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কয়েক ডজন কর্মচারিও রয়েছেন। এছাড়া স্টেট অফ স্টেট অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে তিনটি অভ্যন্তরীণ মেমো এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এর সহস্রাধিক কর্মচারীর স্বাক্ষরিত একটি খোলা চিঠিও রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ও ব্লিঙ্কেনকে গত মঙ্গলবারই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে এবং একই চিঠি ইউএসএআইডি’র কর্মচারিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ইউএসএআইডি’র চিঠিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং আমরা আমাদের চাকুরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চিঠিতে স্বাক্ষরদানকারী স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের অবশ্যই নাম প্রকাশ করতে হবে, তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে মঙ্গলবার চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো স্বাক্ষর সংগ্রহ অব্যাহত আছে। অনেক স্বাক্ষরকারী বাইডেনকে ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিনিধি আছেন, যারা গাজা পরিস্থিতিতে বাইডেনের নীতিকে প্রথম থেকেই আপত্তিকর বলে মনে করছে। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, এফবিআই এবং জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তারা বলেন, গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলকে আমেরিকান প্রশাসনের সমর্থন ডেমোক্রেটিক ভোটারদের চেতনার পরিপন্থী। গত অক্টোবরের এক জরিপে দেখা যায় যে ৬৬ শতাংশ আমেরিকান যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং তাদের ৮০ শতাংশই ডেমোক্রেট।
বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ নিয়ে নতুন করে চাপ বাড়ল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে নিউইয়র্কের সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস (সিসিআর)। বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাজায় হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষ এবং গণহত্যা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ও মার্কিন আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষ থামাতে মার্কিন প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ অভিযোগে ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালতে মামলাটি হয়েছে। সিসিআরের মতে, গাজায় ইসরায়েল যেভাবে বেসরকারি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তা গণহত্যার সামিল।
১৯৪৮ সালে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে হত্যা বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো শক্তি এবং প্রভাব ব্যবহার করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষ থামাতে মার্কিন প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারই প্রতিবাদে এ মামলা। সংস্থার তরফে আরও বলা হয়েছে যে, বর্তমানে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র হচ্ছে আমেরিকা। সেই সঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে সামরিক সাহায্য। আন্তজার্তিক আইন অনুযায়ী এটা নীতিবিরুদ্ধে বলে মনে করছে সিসিআর।
আর মদত পাওয়ার পরেই গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিন জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকা চালানো হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালতে দায়ের করা এ মামলায় ইসরায়েলকে যাতে জো বাইডেন প্রশাসন অস্ত্র, অর্থ এবং কূটনৈতিক সহায়তা না দেয়, তার আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজায় ফিলিস্তিন নাগরিকদের গণহত্যা বন্ধে জন্য প্রেসিডেন্ট যাতে আশ্বাস দেন, তা-ও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে দায়ের করা পিটিশনে।
Posted ১২:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh