নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
বাংলাদেশি-আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন নিউইয়র্ক স্টেট কর্মকর্তা।
বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক শহরের স্কুলগুলোতে হালাল খাবার নিশ্চিত করা, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবে স্কুল ছুটি ঘোষণাসহ বাঙালি মুসলিম কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে সরাসরি আলোচনা করা হয়েছে। পৃথক পৃথক গ্রুপ তৈরি করে ষাটটি সফল আলোচনায় দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের পক্ষ থেকে শতাধিক সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিউইয়র্কের আলবেনিতে গত ২৩ মে মঙ্গলবার স্টেট অ্যাসেমব্লি ও সিনেট হলে দিনব্যাপী ব্যস্ততম কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন।
এই আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব, ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক ও মানব সেবার যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত আবু জাফর মাহমুদ। দিনব্যাপী সফল কার্যক্রম শেষে উচ্ছ্বসিত অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
বলেন, গভীর ভালোবাসার ঢেউ যখন সকল সীমানা ছাড়িয়ে যায় তখনই তা চিরন্তন এক অর্থময়তা তৈরি করে, সেখানেই জন্ম নেয় অসাধারণ শক্তি। আজ অসাধারণ এক সাফল্য অর্জনের দিনে আমি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছি। মনে হয়েছে আমাদের বাংলাদেশি সমাজে এক শিক্ষিত মানুষ, অনেক তরুণ গড়ে উঠেছে কিন্তু দেশের জন্য এতবড় কাজটি কেউ করেনি। এই একটিমাত্র টিম আমি দেখলাম, সত্যিকার অর্থে আমার জাতির জন্য কাজ করছে। এই আয়োজনে প্রধানত যে বিষয়গুলো সিনেট ও অ্যাসেমব্লিতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মুসলিমসহ দক্ষিণ এশিয়ার সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠির প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে স্কুল ছুটি ঘোষণা, পাবলিক স্কুলগুলোতে হালাল খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ট্যাক্সি চালকদের নিরাপত্তা বিধান করা, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মজুরি বাড়ানো, মুসলিম আমেরিকান অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন, বিভিন্ন পেশার কর্মীদের ন্যুনতম মজুরি বাড়ানো, নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন গোটা স্টেটে ছুটি ঘোষণা।
এই আয়োজনে গভর্নরের প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর দপ্তরের লেজিসলেটিভ প্রধান, সিনেট অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের প্রতিনিধি ও স্পিকারের লেজিসলেটিভ প্রধান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রতিটি বিল অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং সহমত পোষণ করেছেন। স্টেট অ্যাসেমব্লি হাউজের প্রধান ফ্লোরের অ্যাডভোকেসি গ্রুপের জন্য নির্ধারিত ১০৪-এ নং কক্ষে হালাল খাবার পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন সময় গভর্নর, স্পিকার ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধিসহ সিনেটর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশি কমিউনিটির উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দিনব্যাপী কর্মসূচির বিভিন্ন অংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অ্যাডভোকেসি গ্রুপের জেনারেল সেক্রেটারি সাহানা মাসুম, পার্লামেন্টারিয়ান দিলরুবা চৌধুরী, এসিসস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার, ট্রেজারার এমডি রহিম, মেম্বর সাবুলউদ্দিন, সেলিনা খাতুন, মাহাতাব খান, মিসবাহ মাহমুদ, সামিয়া নাজনীন, চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই সেক্রেটারি অ্যাসোসিয়েশনের আশিক মাহমুদ, কো স্পন্সর কেয়ার নিউইয়র্কের সিস্টার আফাফ। এনওইম্যানের মীর মাসুম আলী। উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন জুয়েল ভুইয়া। লেজিসলেটিভ টিমে ছিলেন মাহতাব খান, আতিয়া কাজী, মোহাম্মদ নূর দেওয়ান প্রমুখ। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার পরিবার থেকে ছিলেন সৈয়দ আলম, সৈয়দ আজিজুর রহমান তারিফ, আদিত্য শাহীন, মাঈনউদ্দিন ও নোমান আহমেদ।
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের পক্ষ থেকে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। সম্মাননা পেয়েছেন আমেরিকা বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীনসহ কেয়ার নিউইয়র্ক ও এনওয়াই ম্যান।
জনাব আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আল্লাহ আমাকে ছোটোবেলা থেকে নেতৃত্বের এক শক্তি দান করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান সময়ে স্কুল জীবন থেকে নেতৃত্ব আমার ভালোবাসা। আজ যে নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি সেটি আমাদের গোটো জাতির নেতৃত্ব করছে। জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির জন্য এই কল্যাণমুখি কাজগুলোর সঙ্গে সবসময়ই আমার একাত্মতা রয়েছে।
জনাব মাহমুদ বলেন, গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে একটিই আহ্বান জানিয়েছি। একই জয়গান গেয়েছি। সেটি হচ্ছে ভালেবাসা। আমাদের ভেতরে এই ভালোবাসাটিই কমে যাচ্ছে। এদেশে যারা ভালোবাসাহীন জীবন যাপন করে, আমরা তাদের দিকে চলে যাচ্ছি। আমরা পরিবার রক্ষা করতে পারছি না। বিষয়টি আমাকে খুব স্পর্শ করে। তাই আমি আমার হোম কেয়ার থেকেই ভালোবাসার এক অভিযান শুরু করেছি। আমরা আমাদের পারিবারিক জীবনে ভালোবাসাসহই যত্ন শিখেছি। ভালোবাসা আর যত্ন নিয়েই বড় হয়েছি এই সত্যটিই সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি মাত্র।
তিনি বলেন, আজ এখানে সিনেট ও অ্যাসেমব্লি আমাকে নতুন করে শিখিয়েছে, সভ্যতা কাকে বলে। আজ আমরা সবাই নিউইয়র্ক স্টেট পরিচালনার এই কেন্দ্রীয় ভবনে এসে নিশ্চিত হয়েছি, এখানে ইসলাম নিয়ে কোনো বৈষম্য নেই। বাছবিচার নেই। এখানে ইসলামের সুমহান আদর্শের প্রতি যথাযথ মর্যাদা আছে। সবাই আমাদেরকে ভালোবেসেছেন। আমরা সিনেট অ্যাসেমব্লিতে গিয়ে অভিভুত হয়েছি, সেখানে দায়িত্বশীলরা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছেন নামাজের কথা। তারা জায়গা করে দিয়েছেন, নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এটি অনেক বড় দৃষ্টান্ত।
উল্লেখ্য, সিনেট অ্যাসেমব্লিতে অধিবেশ অধিবেশন চলাকালীন বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের উপস্থিত সকলকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। স্পিকারের উপস্থিতিতে অ্যাসেম্বলি ফ্লোরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিনেটর সবার উদ্দেশ্যে সম্মান জ্ঞাপন করেন।
Posted ৬:৩২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh