মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রথম নির্বাহী আদেশে একশ দিনের জন্য সব ধরনের ডিপোর্টেশন স্থগিত করেছিলেন। তার নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে টেক্সাস সেখানকার ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করতে সক্ষম হয়। এরই মাঝে গত সপ্তাহে লুইজিয়ানা ও টেক্সাস আবারও নতুন করে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। লুইজিয়ানার এটর্নি জেনারেল ও টেক্সাসের এটর্নি জেনারেল যৌথভাবে টেক্সাসের সাউদার্ন ডিষ্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি দায়ের করেন। দুই এটর্নি জেনারেল তাদের আর্জিতে বলেছেন যে বেশ কিছু দাগী আসামী, যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করতে হবে, কিন্তু ইমিগ্রেশন এন্ড কাষ্টমস এনফোর্সমেন্ট তাদেরকে ডিপোর্ট করার জন্য নিজস্ব হেফাজতে না নিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে। লুইজিয়ানার এটর্নি জেনারেল তার আর্জিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন েিপার্টেশন আইন কার্যকর করতে অস্বীকার করছেন, যার ফলে সীমান্তে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের কমিউনিটিতে ভয়ঙ্কর হিংস্র এলিয়েনদের স্থান হতে পারে না।
টেক্সাসের সাউদার্ন কোর্টে দায়েরকৃত এই মামলার আর্জিতে আরও বলা হয় যে সাজাপ্রাপ্ত ইমিগ্রান্টরা তাদের সাজার মেয়াদ শেষে ‘আইস’ এর হেফাজতে থাকার কথা এবং প্রচলিত আইনে তাদের ডিপোর্ট করার বিধান রয়েছে। কিন্তু আইস সেই বিধান অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করছে না। এইসব ভয়ঙ্কর অপরাধীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা রয়েছে। এটর্নি জেনারেলদ্বয় বলেন, কিছু অবৈধ ইমিগ্রান্টের এদেশে যৌক্তিকভাবে থাকার সকল ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে বা তাদের আপিল করার অথবা অন্য কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন তাদেরকে ডিপোর্ট করছে না। আর্জিতে আরও বলা হয়, টেক্সাস ও লুইজিয়ানা সাংবিধানিকভাবে ১৮০ দিন হাতে পায় পুরোনো আইনকে কার্যকর করার জন্য। কিন্তু এই ১৮০ দিন বা ৬ মাস সময় এখনও পার হয়নি। এই ১৮০ দিনের মধ্যে ‘আইস’ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। লুইজিয়ানা ও টেক্সাসের আর্জি দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত: প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টকে দেয়া নির্দেশনা এবং দ্বিতীয়ত গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আইস’ এর জারি করা একটি প্রজ্ঞাপন। এই নির্দেশনা ও প্রজ্ঞাপনের কারণেই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সে নির্দেশনা ও প্রজ্ঞাপনে কী আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এদিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংবাদপত্র ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নাল এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করা লোকজনের উপর গ্রেফতারি ও ডিপোর্টেশন হ্রাস পেয়েছে। ইমিগ্রেশন এন্ড কাষ্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইস তাদের সুর নরম করে এখন বলছে যেসব অবৈধ ইমিগ্রান্ট সীমান্ত, জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ, ‘আইস’ শুধু তাদের গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নালের রিাের্ট থেকে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে শুধুমাত্র গত ডিসেম্বর মাসে ‘আইস’ গ্রেফতার করেছিল ৬,৬৭৯ জনকে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত ২ মাস ১০ দিনে ডিপোর্ট করেছে মাত্র ২,২১৪ জন অবৈধ ইমিগ্রান্টকে। এতে আরও বলা হয়, এ বছরের প্রথম দিকে আইস’ স্মার্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেটি ছিল গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশনের ক্ষেত্রে ওবামা প্রশাসনের নীতিতে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে।
গত সপ্তাহে আইস’ কর্মকর্তারা সিএনএনএ’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যাদেরকে সীমান্ত, জাতীয় ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করা হয় আমরা শুধু তাদেরকে আটক ও ডিপোর্ট করছি। আটক ও ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে ‘আইস’ এখন ট্রম্প প্রশাসনের অ্যাগ্রেসিভ পদক্ষেপগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘আইস’ কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেফতারের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে ‘দাদি-নানিদের’ গ্রেফতারের চেয়ে এখন অধিক সংখ্যক অপরাধীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে। তারা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন করতে প্রায় প্রতিদিন নিউজ হেডলাইন হতো। কিন্তু এখন বাইডেন প্রশাসনে অধীনে ‘আইস’ এর ফিল্ড অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশণ ক্ষেত্র বিশেষে আগাম হুশিয়ারি দেয়ার চেষ্টা করে। আইস এর ভারপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর টায়ি জনসন গত সপ্তাহে সিএনএন এর সঙ্গে বলেছেন যে নতুন প্রশাসনে আমাদের সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনে ডিপোর্টেশন আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। জনসন বলেন, গতমাসে এজেন্সি ২,৮৮৬ জনকে ডিপোর্ট করেছে। যেখানে গত ডিসেম্বরে ডিপোর্ট করা হয়েছে ৫,৮৩৮ জনকে। গত অক্টোবরে ১০,৩৫৩ জনকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া আইস এর হেফাজতে এখন ইমিগ্রান্ট সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। এই অর্থবছরে আইসের হাতে আটক রয়েছে ১৫,৯১৪ জন। গতবছর ছিল ৩৩,৭২৪ জন এবং ২০১৯ সালে ছিল ৫০,১৬৫জন। আইস প্রধান বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শপথ গ্রহণের পর যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেনতার ফলে ১০০ দিনের মধ্যে সব ডিপোর্টেশন স্থগিত করার নির্দেশনা ছিল।
Posted ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh