বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
গত এক দশক ধরেই নিউইয়র্ক সিটির ইয়েলো ট্যাক্সি ক্যাবগুলো যাত্রী সঙ্কটে ভুগছে। মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ এর মতো আসছে বাস ও সাবওয়েসহ গণপরিবহনে যাত্রীদের আকৃষ্ট স্টেট সরকারের নেয়া উদ্যোগ ট্যাক্সি চালকদের অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের নাম “কনজেসশন প্রাইসিং” বা ‘যানজটের মাশুল।” নিউইয়র্ক সিটির গণপরিবহন পরিচালনায় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান অর্থঘাটতিতে ধুঁকে ধুঁকে চলা মেট্টোপলিটান ট্রানজিট অথরিটির (এমটিএ) তহবিল স্ফীত করার উদ্দেশে এ ধরনের মাশুল আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মিডটাউন ও লোয়ার ম্যানহাটানে প্রবেশ করতে চাইলে ট্যাক্সিগুলোর চালকদের গুনতে হবে অতিরিক্ত টোল। সিটিকে যানজট মুক্ত রাখার জন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো আশা করছে যে এই নতুন টোল ব্যবস্থা কার্যকর হলে ওইসব এলাকায় অন্তত ১০ শতাংশ যানবাহন কম প্রবেশ করবে। এর ফলে শুধু যে গাড়ির ভিড় কমবে তাই নয়, সিটির বায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।
মিডটাউন ও লোয়ার ম্যানহাটানে যেতে হলে ২০২৪ সালের মধ্যে মোটরগাড়ি চালকদের ২৩ ডলার টোল পরিশোধ করতে হবে। টোল জোনের আওতা হবে ৬০ স্ট্রিট থেকে ব্যাটারি পার্ক পর্যন্ত। তবে ফ্রা্কংলিন রুজভেল্ট ড্রাইভ বা ওয়েস্টসাইড হাইওয়ে ব্যবহার করার জন্য কোনো টোল দিতে হবে না। কর্তৃপক্ষ এখনো স্থির করতে পারেনি যে ড্রাইভারদের জন্য কী পরিমাণ টোল ধার্য্য করা যেতে পারে। পিক আওয়াওে প্রতিবাদ ওই এলাকায় প্রবেশ করতে ১৯ ডলার হারে টোল আদায়ের একটি প্রস্তাব আছে^।
বিকল্প প্রস্তাটি হচ্ছে পিক আওয়ারে ২৩ ডলার টোল ধার্য করা। ইয়েলো ক্যাবচালকরা নতুন উদ্যোগকে তাদের জীবিকার ওপর বড় ধরনের হুমকি বলে বিবেচনা করছে। কারণ তারা গত দশ বছর যাবত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গাড়ির বিপরীতে নেয়া তাদের ঋণ গলার ফাঁস হয়ে আছে, রাইট শেযার অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ তাদের ব্যবসার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে যাত্রী সংখ্যা ব্যাপক হ্রাসের ঘটনা তো এখনো আছে। এ অবস্থায় মিডটাউন ও লোয়ার ম্যানহাটানে প্রবেশের ওপর মাশুল ধার্য করার উদ্যোগ তাদের জন্য রীতিমতো ভীতি সঞ্চারক উদ্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অনেক নগর-পরিকল্পনাকারী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে ম্যানহাটানের সবচেয়ে ভিড়পূর্ণ রাস্তাগুলোকে যানজট মুক্ত রাখার এ ধরনের পরিকল্পনা আরো অনেক আগে নেয়া উচিত ছিল। এতে একদিকে সিটির রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত, অন্যদিকে বায়ুদূষণ থেকে সিটি আরো বেশি মুক্ত থাকতো। তাদের যুক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবার হয়তো কারণ নেই, কিন্তু “যানজটের মাশুল” ম্যানহাটান থেকে ইয়েলো ট্যাক্সিকে বের করে দেবে, যা একসময় নিউইয়র্ক সিটিতে ‘ইয়াংকি’ ও ‘ব্রডওয়ের’ নামের সমতূল্য ছিল। শেয়ার রাইডিং এর জন্য উবার, লিফটের মতো যানবাহন সহজলভ্য হওয়ায় এমনিতেই সিটি থেকে ইয়েলো ট্যাক্সি সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপের কারণে ইয়োলো ট্যাক্সি সিটি থেকে পুরোপুরি অপসারিত হয়ে গেলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।
যেসব ট্যাক্সিকে মিডটাইন ও লোয়ার ম্যানহাটান এলাকায় যাত্রী নিয়ে যেতে হবে তারা অনিবার্যভাবে তাদের টোলের অর্থ যাত্রীদের নিকট থেকেই আদায় করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এই ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ট্যাক্সিও চাহিদা ১৭ শতাংশ কমে যাবে বলে “যানজট মাশুল” কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কাস অ্যালায়েন্সের প্রধান ভৈরবী দেশাই বলেন, “যানজট মাশুল যদি ইয়েলো ট্যাক্সি ক্যাবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তাহলে তা যে শুধু বিপর্যয়কর হবে তা নয়, তাহলে এই ট্যাক্সিশিল্পকে ধ্বংস করার নামান্তর হবে।
নিউইয়র্ক সিটিতে “যানজট মাশুল” পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কর আদায় পরিকল্পনার প্রথম উদ্যোগ এবং এমটিএ’র এ উদ্যোগকে দেশজুড়ে বড় বড় সিটিগুলোতে প্রয়োগ করা যায় কিনা এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে তা চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছেন।
ইয়েলো ক্যাবের চালকদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, ম্যানহাটানের যানজটে ইয়েলো ট্যাক্সিক্যাবের ভূমিকা সামান্য। ট্যাক্সি এন্ড লিমোজিন কমিশনের গত জুলাই মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫,৭০০টি ইয়েলো ট্যাক্সি চলাচল করে। অন্যদিকে রাইড শেয়ার অ্যাপে দৈনিক চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা জুলাই মাসে ৪৬,৮০০ ছিল। কর্তৃপক্ষে পরিবেশ মূল্যায় রিপোর্ট অনুসারে ম্যানহাটানের যে এলাকাকে টোলের আওতায় আনা হয়েছে সেখানে প্রতিদিন চলাচলকারী সবধরনের যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। যদিও টোল আদায় করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে, কিন্তু ইয়েলো ক্যাবিরা তাদের উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠতে পারছে না। টোল আদায়ে কি পরিমাণ ব্যয় হতে পারে কর্তৃপক্ষ তা যাচাই বাছাই করার পর্যায়ে রয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে।
Posted ৩:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh