বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার হ্যারিকেন ‘আইডা’র প্রভাবে নিউইয়র্ক সিটির সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কুইন্স এলাকা পরিদর্শন করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোরালো আহবান জানিয়েছেন। তিনি ইস্ট এলমহার্ষ্টের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার আবাসিক ভবনগুলো পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে শুভেচ্ছা জানায়। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্ব চরম দুর্দশা ও মহা বিপর্যয়ের হুমকির মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল বর্ষণে সিটির নিচু এলাকার বাসভবনগুলোর অধিকাংশ বেসমেন্ট এবং সিটির বহু রাস্তা ও হাইওয়ের বিভিন্ন অংশ পানিতে ডুবে যায়, গাছপালা ভেঙে পড়ে ও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সাবওয়ে লাইন ও টানেল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আবহাওয়া দফতরের মতে বুধবার রাতে নিউইয়র্ক সিটিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেদিন এক ঘন্টায় সেন্ট্রাল পার্কে ৩ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ইতিপূর্বে সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি ছিল। মৃত্যু ছাড়াও ক্ষয়ক্ষতি সীমাহীন।
পরিদর্শনকালেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিউইয়র্কের দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলোর জন্য পরিকল্পনা অনুমোদন করেন এবং ফেডারেল ইমারর্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিকে হ্যারিকেনের শিকার ব্যক্তিদের সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন। সিটি মেয়র বিল ব্লাজিও বাইডেনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ ও প্রেসিডেন্টকে প্রশংসা করেন। চাক শ্যুমারও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৩৬,০০০ ডলার অনুদান প্রদানের ব্যবস্থাসহ সরকারি সহায়তার জন্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হ্যারিকেন ‘আইডা’য় মোট ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ২৭ জনই নিউ জার্সি স্টেটে। ক্ষতিগ্রস্থ কুইন্স এলাকা পরিদর্শনে আসার আগে জো বাইডেন নিউ জার্সির ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। আইডা’য় নিউইয়র্ক সিটিতে ১৩ জন মারা গেছে, যার মধ্যে ১১ জনই কুইন্সে বাস করতো। বিশেষ করে কুইন্স ও ওজোন পার্ক এলাকার বেসমেন্টগুলো বসবাসকারীদের মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়। পরিদর্শনের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান বিপর্যয় হ্রাসে উপায় উদ্ভাবন করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই বিজ্ঞানীদের কথা শুনতে হবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ক্ষয়ক্ষতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন যে, এমনকি যারা জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতেন, এখন তারাও রূঢ় বাস্তবতা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। বাইডেন ইস্ট এলমহার্স্টের ৮৭ ষ্ট্রিট ও ৮৮ ষ্টিট্রের মধ্যবর্তী স্থানের বাড়িগুলোতে যান ও বাসিন্দাদের সঙ্গে করমর্দন ও আলিঙ্গন করেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর হকুল, সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও, সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শ্যুমার, সিনেটর ক্রিস্টেন গিলিব্র্যান্ড, হাউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজসহ নিউইয়র্কের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদরা ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবন ও আমাদের অর্থনীতির জন্য অস্তিত্বের হুমকি নিয়ে এসেছে। আমরা সর্বত্র এ হুমকি অনুভব করছি। বাইডেন যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন বেশ কিছু লোক “বাইডেন: ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি নাউ,” লেখা প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রেসিডেন্ট তার ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় বলেন, আমি জানি, এই বিপর্যয়গুলোকে বন্ধ করা যাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় ঘন ঘন হবে এবং ভয়াবহতাও বাড়বে। চরম আবহাওয়া দেশের প্রতিটি অংশে আঘাত হানবে। তিনি বলেন, স্বচ্ছ জ্বালানির ব্যবস্থা করাসহ উত্তম পুনর্বাসন পরিকল্পনার জন্য এক ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যয়বরাদ্দ সম্বলিত বাইপার্টিজান বিল উত্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য তিনি নতুন ‘গ্রীন প্রজেক্ট’ গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।
ঘুর্ণিঝড় আইডার দাপটে ৬১ জনের মৃত্যু
আমেরিকার পূর্ব উপকূলে হারিকেন আইডার তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৬১ । অবিরাম বৃষ্টি এবং তুমুল ঝড়ে লন্ডভন্ড জনজীবন। রাস্তাঘাটে যাতায়াত বন্ধ। তার ফলে বাড়িতে বা গাড়ির মধ্যেই ডুবে কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে গত ৩ সেপ্টেম্বর জানা গিয়েছে, মেরিল্যান্ড থেকে কানেক্টিকাটের মধ্যে আইডার জেরে কমপক্ষে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্টেশনগুলিতেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। কোথাও হাটু পর্যন্ত পানি তো, কোথাও কোমর সমান পানি।ফিলাডেলফিয়ায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিউ ইয়র্কের পাশাপাশি নিউ জার্সির ২১টি কাউন্টিতেও জরুরি অবস্থা জারি করলেন রাজ্যের গভর্নর ফিল মার্ফি।
গভর্নর ফিল মার্ফি জানান, নিউ জার্সিতে কমপক্ষে ২৩ জন এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে ১১ জন বিলাসবহুল আবাসনের বাসিন্দা। সেই আবাসনের বেসমেন্টে পানি ঢুকেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও নানা জায়গা থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, নিউ ইয়র্ক শহরের সাবওয়েতে অন্তত ১৭টি ট্রেন আটকে পড়েছে। বাধ্য হয়ে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি নিউইয়র্ক শহরে সাবওয়ে পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। জোর গতিতে চলছে উদ্ধারকার্য। নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও শহরে যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে এবং রাস্তায় যেরকম বিপদজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাকে এক ‘ঐতিহাসিক আবহাওয়া দুর্যোগ’ বলে বর্ণনা করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বিশ্বজুড়ে নানা সময়ে হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারণা আবহাওয়াবিদদের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই দুর্গতদের জন্য সবরকমের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুর্গতদের উদ্দেশে আমার একটাই বার্তা। তারা একা নন। আমরা সকলেই এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। আমাদের সকলকে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।’
Posted ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh