বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং গত সপ্তাহে ডেট্টয়েটের এক সিনগগের প্রেসিডেন্টের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর ঘটনার পর আমেরিকান ইহুদিদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় সিটিতে ইহুদি-বিরোধী সমাবেশ যেমন বেড়েছে, ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম বিরোধী কিছু তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি কমিউনিটির মধ্যে ভীতি বৃদ্ধির খবর দিয়েছে ডেইলি ট্রেলিগ্রাফ। একই খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের দোকানগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থের ‘ঈগল গান রেঞ্জ’ পরিচালনাকারী ডেভিড প্রিন্স বলেছেন যে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার ঘটনার পর পর তার দুটি অবস্থানে চাহিদা ৩০০ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, চাহিদার ক্ষেত্রে সত্যিই বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। লোকজন আসছে এবং তারা বলছে যে, জীবনের জন্য তারা ভীত। তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ভীত বলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে। ফ্লোরিডার হলিউডে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রয়ের দোকান মালিক ডেভিড কোওয়ালস্কি একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। তিনি এনবিসিকে বলেন, ‘ধার্মিক ইহুদি লোকজনের মধ্যে আমরা অবশ্যই আমরা সুনিশ্চিতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়ে বিপুল বৃদ্ধি দেখেছি। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে ও দলবদ্ধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীর সংখ্যাও উল্লেকযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’ ডেভিড কোওয়ালস্কি চলতি মাসে বিভিন্ন সিনাগগে আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। তার মতে সিনাগগে আগতরা অধিকাংশ ছিল নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়কারী।
দক্ষিাঞ্চলীয় ফ্লোরিডার অন্যান্য এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র দোকান ও প্রশিক্ষণ রেঞ্জে একই দৃশ্য দেখা গেছে। এন্টি টেনেহাউজ নামে এক নারী বলেন যে, তিনি তার স্থানীয় সিনাগগে নারীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে যাচ্ছেন, যেখানে তার স্বামী একজন রাবাই। তিনি এনবিসিকে বলেন, আমরা বলেছি যে, আমরা নারীরা কি করবো? প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যা আবশ্যক তা আমাদের করা প্রয়োজন। ইশ্বর না করুন, যদি তেমন প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা নিরাপদ থাকতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে সমর্থ হতে চাই।’ অ্যান্টি ডিফেমেশন লীগের তথ্য অনুযায়ী গহত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট জুড়ে ১০৭টি ইহুদি বিরোধী ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সংগঠনটির মধ্যে গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ইহুদিদের উপর হামলার ঘটনা বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।
ট্রাফিক ভায়োলেন্স আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক হওয়ার বাধা নয় : আদালত
একজন ফেডারেল বিচারক তার এক রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, নিউইয়র্ক সিটিতে কেউ যদি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে তাহলে তার নৈতিক চরিত্র কেমন তা দেখা সিটির এখতিয়ারভূক্ত নয়। ব্রুকলিনের এক ব্যক্তির অনেকগুলো ট্রাফিক ভায়োলেন্সের ঘটনার কারণে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স অস্বীকার করায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে ফেডারেল জজ জন ক্রোনান গত মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছেন। তিনি তার রায়ে বলেন যে, কোনো নাগরিকের আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সিটিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র কেমন তা বিবেচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ব্রুকলিনের জোসেফ স্রোর তার নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে রাইফেল, বন্দুক এবং শটগান রাখার জন্য ২০১৮ সালে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আবেদন করার পর দু’বার তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। পুলিশ সিটির প্রশাসনিক কোডের ওপর ভিত্তি করে জোসেফ স্রোর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন বাতিল করেছিল, যে কোডে সিটির সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিং অথরিটি, অর্থ্যাৎ এক্ষেত্রে এনওয়াইপিডি, আবেদনকারীর ‘ভাল নৈতিক চরিত্রের’ ঘাটতির কারণে অথবা ‘অন্য কোনো উপযুক্ত’ কারণে আগ্নেয়াস্ত্রের পারমিট দিতে অস্বীকার করতে পারে। তার ট্রাফিক ভায়োলেন্স দেখিয়ে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হলে তিনি পুলিশের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেন। জজ ক্রোনান রায়ে লিখেছেন যে, বাদী জোসেফ স্রোর আবেদন বিবেচনার সময় এনওয়াইপিডি প্রশাসনিক কোডের ‘বিস্তৃত ও অবাধ’ স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োগ করেছে। কোনো লাইসেন্সিং কর্মকর্তা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার স্বেচ্ছাধীন এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন তিনি তা প্রয়োগ করেন অসাংবিধানিকভাবে। পুলিশের উদ্ধৃত ‘ভাল নৈতিক চরিত্র’ অনুরূপ ভ্রান্ত প্রয়োগ।
‘নিউইয়র্ক স্টেট রাইফেল এন্ড পিস্তল অ্যাসোসিয়েশন বনাম ব্রুয়েন’ নামে খ্যাত ২০২২ সালে দেওয়া মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত শতাব্দী প্রাচীন নিয়মগুলিকে পাল্টে দেয়। যে আইনে নাগরিকদের গোপন অস্ত্র বহন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিউইয়র্ক এবং স্টেটে আগ্নেয়াস্ত্র বহন সীমিত করার জন্য নতুন উপায় খুঁজতে বিধিনিষেধ নিয়ে আসে। নিউইয়র্ক আইনসভা একটি আইন পাস করেছে, যে আইনে কলেজ, হাসপাতাল, সাবওয়ে, পার্ক, স্টেডিয়াম এবং টাইমস স্কোয়ারের মতো জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাওয়াই রাজ্যে সমুদ্র সৈকতে আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করে আইন পাস করা হলেও মাউই দ্বীপের তিন নাগরিক এটি চ্যালেঞ্জ করেছে।
বিচারক ক্রোনানের রায় যদিও সার্কিট আদালতে যেতে পারে, কিন্তু এ রায়ের ফলে জোসেফ সারুরের চেয়ে গুরুতর আইন লংঘনের রেকর্ড আছে, এমন লোকজনও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স লাভের অনুমতি পাবেন। যদি তা হয় তাহলে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে গিফোর্ডস ল সেন্টার টু প্রিভেন্ট গান ভায়োলেন্স এর লিগ্যাল ডাইরেক্টর ডেভিড পুচিনো আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, এ ধরণের সিদ্ধান্ত আইন প্রয়োগকারী এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের বিধিবদ্ধ আইন প্রয়োগ করার এখতিয়ারকে পঙ্গু করে দিতে পারে। এ রায় কোনো প্রশাসনিক কাঠামোর বিধিবদ্ধ আইনের ওপর হামলার মতো।
এনওয়াইপিডি’ সিটির আইনের উল্লেখ করে মন্তব্য করেছে যে, স্টেট ও সিটির তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সিং বিধিসমূহ আইনানুগ, ব্রুয়েনের মামলার রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জনসাধারণকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।
জোসেফ স্রোর এর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড নেই বা ফৌজদারি দণ্ড লাভ করেননি। কিন্তু তিনি দু’বার গ্রেফতার হয়েছেন এবং তিনি ২৮ বার ট্রাফিক ভায়োলেশন করেছেন ও ২৪ বার তার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেনশন হয়েছে এবং ছয় বার তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। ২০২২ সালে বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি আদালতের সমন ছিল। সারুর এর গ্রেফতারের কারণ আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি এবং তার ড্রাইভিং রেকর্ড ভালো না থাকা ‘ভাল নৈতিক চরিত্রের’ ঘাটতি এবং আইনের প্রতি অবজ্ঞার চিত্র ফুটে উঠেছে বলে তার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন বাতিল করার কথা তাকে জানান হয়েছে।
Posted ১২:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh