মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বুধবার অভিযোগকারী পক্ষ গত ৬ জানুয়ারী ক্যাপিহল হিলে নাশকতামূলক হামলার ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্টকে ‘বিপজ্জনক বিদ্রোহে প্রধান উস্কানিদানকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। বুধবার রাতে নৈশভোজের বিরতির আগে হাউজ ইমপিচমেন্ট ম্যানেজাররা দাঙ্গা ও বিভিন্ন হামলার ঘটনার ভীতিকর ভিডিও প্রদর্শন করেন। তারা বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধুমাত্র ঘটনার নির্দোষ দর্শক ছিলেন না।
দাঙ্গা শুরুর আগে ট্রাম্পের কার্যকলাপেই প্রমাণিত যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমাণ্ডার-ইন-চিফ’ এর দায়িত্ব পরিত্যাগ করে তিনি ‘দ্য ইনসাইটার-ইন-চিফ’ এর ভূমিকা পালন করেছেন। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে, সরকার ও রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে তিনি কোন ভূমিকাই পালন করেননি। শপথ ভঙ্গ করার কারণে আমরা তাকে ইমপিচ করে শাস্তির দিতে পারি, কোন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাকে চিরদিনের মত অযোগ্য ঘোষণা করতে পারি। তারা আরো বলেন, ক্যাপিটল হিলের উপর হামলার পরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়েছে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মিথ্যাচার করে তার সমর্থকদের হামলায় প্ররোচিত করেছেন। তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে মিথ্যাচার করার পাশাপাশি তার সমর্থকদের উত্তেজিত করে আসছিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাংবিধানিকভাবে ট্রায়াল শুরু করার জন্য প্রথমে চার ঘন্টা ধরে তুমুল বিতর্ক হয়েছে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্যে। তবে বেশির ভাগ সিনেটর শান্ত ও ভদ্র ছিলেন। ট্রাম্প সমর্থক কেউ কেউ ছিলেন ক্ষুব্ধ। শুরুতেই ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলার চেষ্টা করেছেন যে, সিনেট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট শুরু করতে পারে না। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন একজন সাধারণ নাগরিক। সিনেট যা করতে যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ গত ৬ জানুয়ারী ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাধানোর দায়ে অভিযুক্ত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইমপিচ করে। হাউজ ইমপিচ করার পর ট্রাম্প হলেন প্রথম কোন প্রেসিডেন্ট যাকে দুবার ইমপিচ করা হলো। হাউজ তাকে ইমপিচ করার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে সিনেটে এই ইমপিচমেন্ট হালে পানি পাবে কিনা। ইমপিচমেন্ট সংক্রান্ত বিতর্কের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস লিডারদের সাথে নির্ধারিত একটি সভায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছিলেন। এ সময় সিএনএন এর সাংবাদিক ক্যালেট কলিন্স প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন করেন যে তিনি ইমপিচমেন্ট সম্পর্কে কিছু বলবেন কিনা। উত্তরে প্রেসডেন্ট বাইডেন বলেন, না, আমি তো আগেও বলেছি, আমার কাজ আছে। আমরা ইতোমধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোককে হারিয়েছি। সেদিকে মনোযোগ না দেই এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেই তাহলে আমরা আরো লোককে হারাতে পারি বলে আশংকা রয়েছে। অনেকে লোককে না খেয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে, অনেক পরিবারের খাবার নেই। সেদিকে মনোযোগ দেয়াই আমার কাজ। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, সিনেট তাদের কাজ করবে। সিনেটররা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করবে। ইমপিচমেন্ট নিয়ে আমি এটুকুই বলতে পারি।
মঙ্গলবার সকালে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল শুরুর আগে ডেমোক্রেট হাউজ ইমপিচমেন্টে ম্যানেজারররা বলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমপিচ করার মতো অপরাধ করেছেন। এ সময় হাউজ ইমপিচমেন্ট ম্যানেজাররা ৩৩ পৃষ্ঠা লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন কিছু ভিডিও ফুটেজসহ।
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সিনেটরদেরকে দুই ঘন্টা করে মোট চার ঘন্টা সময় দেয়া হয়। এ সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীরা ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দু’জন সাংাবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করেছেন তার ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালকে অসাংবিধানিক দাবী করে যুক্তিতর্ক উত্থাপনের জন্য। ট্রাম্পের আইনজীবী ব্রুস ক্যাস্টও জুনিয়র ও ডেভিড স্কলোন তাদের যুক্তিতর্ক উত্থাপন করে সিনেট ফ্লোরে বলেন, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই ইমপিচ করা যাবে, তবে তাকে হতে হবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। কারণ সাবেক কোন প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করা যায় না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং তিনি এখন একজন সাধারণ নাগরিক। সুতরাং সাধারণ কোন নাগরিককে ইমপিচ করা যায় না।
দীর্ঘ চার ঘন্টা বিতর্কের পর সকাল দুপুর পার হয়ে বিকেল পর্যন্ত গড়ায় সিনেট ফ্লোরে ভোটাবূটির জন্য। বিকেলে সিনেট ফ্লোরে ভোট শুরু হয় ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল সাংবিধানিক অথবা অসাংবিধানিক তার পক্ষে ও বিপক্ষে। ডেমোক্রেটদের ৫০ জন সিনেটর ছাড়াও ৬ জন রিপাবলিকান সিনেটর দলীয় সীমানা অতিক্রম করে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেন।
প্রস্তাবটি পাস হয় ৫৬-৫৪ ভোটে। ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালের ওপর ভোট চলাকালে গত মঙ্গলবার পুরো বিষয়টি ট্রাম্প ফ্লোরিডায় তার নিজস্ব রিসোর্ট মার-এ-লাগো’তে বসে দেখেছেন। পলিটেকো তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, সারাদিন ধরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিলিভিশনের সামনে থেকে সরেননি। ট্রাম্প তার লিগ্যাল টিমের ওপর হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন সেভাবে হয়নি। ট্রাম্পের লিগ্যাল টিমের একজন পলিটিকোর পক্ষ থেকে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
এদিকে গতকাল বুধবার থেকে সিনেটে আবার ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। চূড়ান্তভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইমপিচ করার জন্য দুই তৃতীয়াংশ বা ৬৭ ভোটের প্রয়োজন হবে। চূড়ান্ত ভোটের দিতন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস সভাপতিত্ব করবেন।
Posted ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh