বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশিদের প্রায় বাধাহীন ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার পরিণতিতে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের আমেরিকানরা আরো বেশি দারিদ্রের মধ্যে পড়ে। ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত স্টেটগুলোতে যে কারো আবাসনের অধিকার আইন অনুযায়ী স্টেটগুলোতে যেখানে কারো আবাসনের প্রয়োজন রয়েছে, তিনি হোমলেস হন অথবা অবৈধ ইমিগ্রান্ট হন, তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ার অধিকারী। সাম্প্রতিককালে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ইমিগ্রান্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত স্টেটগুলো তাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় নবাগত ইমিগ্রান্টরা ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিখ্যাত’ ডেমোক্রেট প্রভাবিত সিটিতে আশ্রয় গ্রহণ করছে। হোমলেসদের জন্য বিভিন্ন সিটি কর্তৃপক্ষের যেসব আশ্রয়কেন্দ্র হোমলেসদের জন্য নির্ধারিত, সেসব স্থান এখন ইমিগ্রান্টদের বসবাসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ইমিগ্রান্ট সংখ্যা এতা বেশি যে, তাদেরকে করদাতাদের করের অর্থে অধিক ব্যয়ে হোটেল মোটেলে রাখা হচ্ছে, যা দুঃখজনকভাবে এটি দরিদ্র আমেরিকানদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
শুধু নিউইয়র্ক সিটি নয়, যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিগুলোতে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ম্যাসাচুসেটস সিটি প্রশাসন যখন ইমিগ্রান্টদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোটেলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। মোটেলগুলো তাদের স্বাভাবিক রেটের চেয়ে অধিক রেট হাঁকে। কারণ তারা জানতো যে রেট বেশি হলেও তারা তা আদায় করতে পারবে। হয়েছেও তাই। সেখানে একটি মোটেলে রুম ভাড়া প্রতিরাতের জন্য সচরাচর গড়ে ৭৯ ডলার, একটু উন্নত হলে প্রতিরাতের জন্য ৮৯ ডলার এবং কিছুক্ষেত্রে মোটেলের অবস্থানগত ও অন্যান্য সুবিধার কারণে প্রতিরাতের ভাড়া ১৯৯ ডলার পর্যন্ত। একটি ভিন্ন মোটেল তার সাপ্তাহিক হার $৬০০ থেকে $১,০০০ পর্যন্ত বাড়িয়েছে, রিপোর্টে বলা হয়েছে। বোস্টনের পাবলিক রেডিও স্টেশন ডইটজ তাদের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, তারা ম্যাসাচুসেটস এলাকার মোটেলগুলো, বিশেষ করে সিটি প্রশাসন যেসব মোটেল ইমিগ্রান্টদের রাখার জন্য ভাড়া করেছে, প্রতিটি মোটেলই তাদের রেট বাড়িয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে।
অথচ সিটি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় হোমলেস, যারা আমেরিকান নাগরিক, তাদের জন্য আবাসনের জন্য উচ্চমূল্য পরিশোধ না করা তারা আরো দরিদ্র হচ্ছে। সিটি ও স্টেট তাদেরকে আবাসন খুঁজে নেওয়ার সুযোগ দেয় এবং সেজন্য একক হোমলেসের ক্ষেত্রে মাথাপিছু এবং পরিবারসহ হোমলেদের পরিবার পিছু যে অর্থ প্রদান করে, সেই অর্থে তারা মোটেল রুম ভাড়া করতে পারে না। ব্রেন্ডা ব্যানভিল ও তার প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র ম্যাকডোনাল্ডের পার্কিং লটে বাস করছেন, কারণ তারা প্রায় এক বছর যে মোটেলে ছিলেন, তারা তাদের রুমভাড়া বৃদ্ধি করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে হোমলেস হয়ে পড়া লোক মাত্র এই দুজনই নন। ম্যাসাচুসেটস স্টেট গভর্নর মাউরা হেলি অবশ্য বলেছেন যে, ইমিগ্রান্টদের অধিক আগমণ হারের কারণে স্টেটের পক্ষে আগামী মাস থেকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়তো সম্ভব হবে না। ডেমোক্রেট স্টেট ও সিটিগুলো নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য শুধু আবাসনের ব্যবস্থা করছে তা নয়, তাদের চিকিৎসা, শিশুদের শিক্ষা, এমনকি তাদের এসাইলাম আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতাও প্রদান করছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে বিধি লংঘন করে আবাসন
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস ঘোষণা করেছেন যে, তার প্রশাসন শীঘ্রই ব্রুকলিনে একটি নবাগত ইমিগ্রান্ট, যাদের পরিবারে শিশু রয়েছে তাদেরকে আবাসন সুবিধা প্রদান করবে, যদিও তা সিটি ও নিউইয়র্ক স্টেটের ‘রাইট টু শেল্টার’ বা আশ্রয়ের অধিকার বিষয়ক বিধির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। তিনি বলেছেন, সিটির কয়েক দশক পুরনো ‘রাইট টু শেল্টার’ আইনে শিশুদের সমবেতভাবে ব্যারাক-ধরনের আবাসন ব্যবস্থায় রাখা উচিত নয় এবং স্টেটের বিধি অনুযায়ী আবাসিক সুবিধাহীন শিশুদের পারিবারিক পরিবেশ রয়েছে এমন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা উচিত, কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাদের জন্য পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করে আবাসিক সংস্থান করা সম্ভব নয়। কিন্তু আবাসন বিষয়ক প্রবক্তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন যে, মেয়র নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য ব্যারাক ধরনের যে আবাসনের ব্যবস্থা করছেন, সেখানে গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব নয় এবং অপ্রাপ্ত বয়স্করা সহজে যৌন নির্যাতনের শিকার হবে এবং অন্যান্য বিপদও আসবে।
তা সত্ত্বেও, মেয়র অ্যাডামসের অফিস গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সিটি প্রশাসন ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলোকে শিশুদের সঙ্গে দক্ষিণ ব্রুকলিনে ফ্লয়েড বেনেট ফিল্ডে একটি পরিত্যক্ত সামরিক এয়ারফিল্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা শুরু করবে। সিটি হলের বিবৃতি অনুসারে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে প্রায় ৫০০ শিশুসহ আশ্রয়প্রার্থী পরিবারের স্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিবৃতিতে অবশ্য বলা হয়েছে যে, পরিবারগুলোকে একটি সঙ্গে আরেকটিকে পৃথক রাখতে তালাসহ গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। অ্যাডামস বলেছেন তার প্রশাসন শিশুসহ ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলোর সিটির আবাসন সুবিধা ৬০ দিনে সীমিত করা হবে। এ সময়ের মধ্যে তাদেরকে সিটির দায়িত্বের বাইরে নিজস্ব আবাসন খুঁজে পেতে সহায়তা করবে সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। তবে ৬০ দিনের আবাসন সুবিধা, যা গত সোমবার কার্যকর হয়েছে, তা কেবল শিশুসহ পরিবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বয়স্ক ইমিগ্রান্ট সিটির আবাসনে থাকতে পারবে মাত্র ৩০ দিন। যদি কোনও একক প্রাপ্তবয়স্ক ইমিগ্রান্ট ৩০ দিনের মধ্যে তাদের নিজস্ব আবাসন ঠিক করতে না পারেন, তাহলে তারা সিটির আশ্রয়ে থাকার জন্য পুনরায় আবেদন করতে পারেন। পুনঃআবেদন প্রক্রিয়া শিশুসহ পরিবারগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে জানান হয়েছে। সিটি জানিয়েছে যে, সিটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যে ৬৪,১০০ জনের বেশি ইমিগ্রান্টকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সিটির আইনজীবীরা প্রশাসনকে যুক্তি দিয়েছেন যে, এভাবে আশ্রয় দান অব্যাহত রাখতে হলে সিটিকে নিউইয়র্ক স্টেটের কাছে ‘রাইট টু শেল্টার’ বিধি স্থগিত রাখার অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
‘লিগ্যাল এইড সোসাইটি’ এবং ‘কোয়ালিশন ফর দ্য হোমলেস’ আবাসনের অধিকারের জন্য সিটি প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আদালতে লড়ছে এবং তারা ফ্লয়েড বেনেট ফিল্ড এ আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনকে আইনের পরিপন্থী বর্ণনা করে এটি বন্ধ করার জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। আবাসন অধিকার গ্রুপগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এমন স্থানে আশ্রয় শিশু নিরাপত্তার লংঘন। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে থাকার আইনগত অধিকারের গ্যারান্টি রয়েছে। বেনেট ফিল্ড আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ না করা হলে তারা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার হুমকি দিয়েছে।
Posted ৯:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh