বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
মেক্সিকো সীমান্ত হয়ে এখন অবাধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে হাজার হাজার অভিবাসী। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন। বেশির ভাগ ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র ও দাঙ্গা পীড়িত বা প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং এর মধ্যে এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংঘাত ও মাদক পাচারকারীদের হাতে পড়ে নিগৃহীত পরিবারের মানুষ। তবে বেশির ভাগই উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে ছুটে এসেছে যেকোনো মূল্যে সীমান্ত অতিক্রম করতে। একবার সীমান্ত পেরোতে পারলেই যেন তারা তাদের স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাবে।
মহামারীকালীন সীমান্ত অবরুদ্ধ রাখা সংক্রান্ত একটি বিধি টাইটেল ৪২ এর মেয়াদের অবসান ঘটেছে গত ১১ মে। করোনা মহামারীকালে এ বিধির অধীনে অসংখ্য ইমিগ্রান্ট এতদিন আটকা পড়েছিল মেক্সিকোতে। এখন তারা ছুটে আসতে সীমান্ত অতিক্রম করতে এবং গত এক সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। সীমান্তবর্তী স্টেট টেক্সাসের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিদিন অন্তত দশ হাজার করে ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে, তবে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বলেছে যে, এখন প্রতিদিন ৫ হাজার ইমিগ্রান্ট আসছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মায়োরকাস গত ১১ মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে, ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমণে কোনো সমস্যা ঘটার কারণ নেই। টাইটেল ৪২ এর মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান কর্মী সংকট দূরীভূত হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানাগুলো শ্রমিকের ঘাটতির কারণে কাংখিত সেবা দিতে বা উৎপাদন করতে পারছে না।
অবৈধ ইমিগ্রেশনের কারণে আমেরিকান করদাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং আমেরিকান ও বৈধভাবে বসবাসকারীরা বেকারত্বের শিকার হচ্ছে মর্মে এক প্রশ্নের উত্তরে হোমল্যান্ড সেক্রেটারি বলেন, বিভিন্ন দেশে কর্মীরা নিজ দেশে কাজের সুবিধা না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজে সন্ধানে আসছে, যেখানে তারা বৈধভাবে আয় করতে পারবে এবং তাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে পারবে। এটা যুক্তরাষ্ট্র এবং যেসব দেশ থেকে কর্মীরা আসছে তাদের জন্যও লাভজনক। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের কাছেও আমিও প্রশ্ন করবো যে, আমাদের ভঙ্গুর ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার ব্যয় কত। আমি জানি যে এর ব্যয় বিপুল। কিন্তু ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো না হলে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের অনুপ্রবেশ ও অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টির প্রবণতা কিছুতেই কমবে না।”
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অর্থনীতিবিদ ড. জর্জ বোর্জাস পলিটিকো ম্যাগাজিনে এক লেখায় বলেছেন যে, অবৈধ ইমিগ্রান্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী কর্মীদের কর্মসংস্থান প্রশ্নে যে বিবাদ তা দূর করা কখনোই সম্ভব হবে না। তিনি আরো বলেন, ইমিগ্রেশনের কারণে যে শুধু ইমিগ্রান্টদের আয় বৃদ্ধি পায়, তা নয়, তাদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিলে কর হিসেবে যোগ হয় ৫০ বিলিয়ন ডলার। তবে ইমিগ্রান্টরা যে হারে সরকারি সহযোগিতা লাভ করে, তা আমেরিকান সিটিজেনদের হারের চেয়ে বেশি হওয়ায় এ খাতে সরকারকে তুলনামূলকভাবে অধিক।
উল্লেখ্য,টাইটেল ৪২ এর অবসানের প্রথম দিন গত ১১ মে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার রাতের মধ্যে আনুমানিক ৮ হাজার ইমিগ্রান্ট সীমান্ত অতিক্রম করে। টেক্সাসের এল পাসো সীমান্তে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ইমিগ্রান্টদের সংশ্লিষ্ট ফরম পূরণ ও বায়োমেট্রিক নিয়ে তাদেরকে একটি নোটিশ ধরিয়ে দিচ্ছেন, যাতে তারা তাদের পছন্দের সিটিতে পৌঁছার ৬০ দিনের মধ্যে ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজির হন। ১১ মে’র আগের সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১০ হাজার ইমিগ্রান্টকে বর্ডার পেট্টল এজেন্টরা আটক করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ডিটেনশন সেন্টারে রেখেছে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে এখন আর স্থান সংকুলান না হওয়ায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তাদের ছেড়ে দিচ্ছে তলব করা মাত্র সংশ্লিষ্ট এসাইলাম অফিসে হাজির হওয়ার জন্য।
ভেনেজুয়েলা, গুয়াতেমালা, আলসালভেদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া প্রভৃতি দেশের নারী-পুরুষরা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে বহু শত মাইল পেরিয়ে মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হয়েছেন। মেক্সিকো সীমান্তবর্তী স্টেট ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনার বিভিন্ন সীমান্ত ফটকের চেয়ে টেক্সাসের এল পাসো দিয়েই অধিক সংখ্যক ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে বলে পেট্টল গার্ড কর্মকর্তারা উল্লেখ সাংবাদিকদের জানান। ইমিগ্রান্ট প্রবাহ সামলাতে হাজারো সীমান্ত রক্ষী সতর্কাবস্থায় রয়েছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মেয়রকাস টুইট ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় যারা সীমান্ত অতিক্রম করবে না, তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না-ও পেতে পারেন। অবৈধ প্রবেশ রোধে ২৪ হাজার সীমান্ত প্রহরি মোতায়েন করা হয়েছে। সকলকে অনুধাবন করতে হবে যে, সীমান্ত খুলে দেয়া হয়নি। এর আগেরদিন ১০ মে বর্ডার পেট্রোল চীফ রাউল অরটিজ এক নির্দেশে আগতদের প্রচন্ড ভিড় সামলানোর অভিপ্রায়ে ‘প্যারোল উইথ কন্ডিশন’ নীতি অবলম্বনের কথা জানিয়েছেন সীমান্তে কর্মরতদেরকে। অর্থাৎ এই নোটিশ হাতে নিয়ে পছন্দের সিটিতে পৌঁছার ৬০ দিনের মধ্যে ইমিগ্রেশন অফিস বা ইমিগ্রেশন জজের কাছে হাজির হতে হবে।
Posted ৭:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh