ঘুম ভাঙানিয়া

ভোরের দিকে জোছনার স্নিগ্ধ নীরবতা
ফিস ফিস করে ডাকে, “জাগো”
রহস্যময় সবুজের ওপর
কালো সরীসৃপের মতো পিচঢালা পাথ ধরে ধরে
ছুটতে ছুটতে ঝেড়ে ফেলো
ব্যবহার অযোগ্য দেহ থেকে মেদ, জরা
শিশিরে ধুয়ে ফেলো পঙ্কিলময় হাতের কালিমা
আলোর ঝরনায় শেকড়ের মতো পায়ের স্থবিরতা।
সময় শুধু যখন তখন ক্ষতির ঘন্টা বাজিয়ে শোনায়
যখন ঘুম এবং জাগরণ উভয়েই প্রতারণা করে,
তখন নগরীর সদর দরজা বন্ধ হওয়া প্রত্যক্ষ করি।
নিবিড় ঘন ছায়ার ভেতর জেগে ওঠে
একটি ম্যানর হাউজ,
আর এক কোণে জ্বলে একটি শাদা পর্দাঘেরা জানালা।
আমি জানি

এই নগরী এবং এই ম্যানর হাউজের সকলেই
শিকরের নেশায় গভীর বনে হারিয়ে গেছে।
এই শূণ্য নগরীর বিশিষ্ট গৃহে
বিষাদের পতাকার মতো পতপত করে ওঠা পর্দার আড়ালে
না ফেরা শিকারিদের বিধবা রমনীদের শীতল অপেক্ষা
ভোরের নিসর্গে ফিস ফিস করে।
আমি সেই ফিস ফিস শুনে জাগি
আর ভেতরকার বিলাপ আবিষ্কার করি।
তারপর পিচঢালা পথ ধরে প্রাণপণে ছুটে
অন্যবশ্যক মেদ ঝেড়ে ফেলি।
বিধায়ক হবার চেষ্টায় ছুটি
আর ভেঙ্গে পড়ি।
যদি বাতাস এবং ছায়ার রজ্জু
অসীমতার সদর দরজায় আমাকে ধরে রাখে
আমার ছুটে চলার গতি রোধ করে যাত্রা বিলম্বিত করে
তবে সমস্ত অস্থি-মজ্জা, রক্ত-মাংস নিয়ে
সেই বিলাপ অতিক্রম করে একটি নগরীর জেগে ওঠা এবং
সেই ফিস ফিস থেকে একটি কোলাহল নির্মাণের
নিয়ামক হয়ে উঠবে।

তোমার মানবিক হৃদয়

তোমার মানবিক হৃদয়
একটি নির্লিপ্ত চাঁদের মতন।
যার আলোকিত দিকটি জনতার দিকে
আর অন্ধকার দিকটি আমার দিকে।
যার আয়নার আনন্দ-বেদনার কবিতা
খুঁজে পায় সকলেই
আমি শুধু শুধু মরুভূমির ভেতর বেহাগের সানাই শুনি।

তোমার মানবীয় মুখমন্ডলের
একটি ইর্ষাপরায়ণ অংশ আছে,
যে পাগলের মতো সকলকে
ছায়াতরুর নিচে সঙ্কলিত করতে চায়।
তোমার মানবীয় পোশাকের একটি
গোপন ভাঁজে আছে,
যা মেকি লোহার নির্মিত আড়াল করে,
যান্ত্রিক জোড়াতালি লুকিয়ে রাখে।

আমি ভালো করে জানি
তোমার মানবতা
মুখবন্ধ কারখানার ফার্নেসের হৃদয়।
হাততালির নেশায় ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো
বিপন্ন মানবতার তালাশ করে।
বিপন্ন মানবতার তালাশ করে।
বটের মতো স্নেহের ছায়া নির্মাণ করতে চায়,
আর লাউয়ের ডগার মতো ভেঙ্গে পড়ে।

যমদূত

যমদূত যখন নিকষ কালো
রাতের মতো উদ্ধত শিংঅলা
মহিষ হয়ে ওঠে।
তখন আমার ভেতরে এক
ভীত শিশু ক্যাকটাস আরোহণ
করতে বাধ্য হয়।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে যখন
একটি ফুল নিবেদন করি
তখন গভীর বনের মন্দিরে
যমদূত নিজেই মুর্ছা যায়।

সেই মৃত মহিষের করোটি
আমার প্রাসাদ শীর্ষে ঝুলিয়ে রাখি।
ভালোবাসার স্পর্শে সাভানার
প্রজাপতি হয়ে উড়তে থাকে,
বসন্তের ফুলে ফুলে।
মেঘের গর্জনের ভেতর
সেই মৃত মহিষের আত্মার
রোদন শুনি।

বেবুন

পাঁচ তারা শাখায় বসে
পশমি ওভারকোটের গড়িমায়
বেবুন ভাবে,
শিকারির স্ত্রীকে কবজা করতে সফল হবে।
তার মদির চোখে নেশা,
সোনালি নখ নিশপিশ করে,
সুন্দর মুখ থেকে লালা ঝরে,
সকাল থেকে সন্ধ্যা,
সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত
সে পথের আড়ালে বসে থাকে।
বেডরুমে বসে ক্রিকেট ফাইনাল দেখে।
সে জানে না শিকারির স্ত্রী আগেই
খুন হয়ে আছে,
নিজস্ব সময় খুন হওয়ার বেদনায়।
পাঁচ তারা তরু শীর্ষে বসে সে কুকুরদের ড্রাইভিং শেখায়,
আর কম্পিউটার শেখায়।
শেয়ার হোল্ডারদের মুড়ে দেয়
নিজেরা ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট।
কনের মোহরানার জন্য
স্বর্ণলতা জমাতে থাকে।

উদ্বাস্তু প্রেম

মনে আছে কবে প্রথম নিহত হয়েছিল
বিষন্ন বিকেলে নির্জন চেম্বারে
করুণ চাহনির তীরে।

এনে পড়ে কবে প্রথম বৃষ্টির ভেতর
চলন্ত বাহনের মধ্যে উন্মুল হয়েছিলে।
মেঘের ক্যাসেলে নিজস্ব এপার্টমেন্ট
আশ্লেষের কম্পনে উদ্বাস্তু হয়েছিলে।
যেখানে উড়েছিল রক্তলাল প্রজাপতি এবং
হিমশীতল মেঝের ভেতর ফুটে উঠেছিল
ই্যাপকিনের রজনীগন্ধা।
ডাইনিং স্পেসে জ্বলে উঠেছিল
আনমনে প্রথম ছোঁয়ার মহাকাব্য।
বুকের খাঁচায় গুঞ্জন করে উঠেছিল
সেই চাউনির তীরে নিহত পাখির বিলাপ।
মনে আছে কবে প্রথম ফেরারি হয়েছিলে।
সমুদ্র তীরবর্তী নির্জন মোটেলের করিডোরে।
লোডশেডিং এর সুযোগে
এক পশলা আঁচলের পরাশে।
মেরিন ড্রাইভে সবার চোখ এড়িয়ে
হাতের ছোঁয়ায়
সুুইমিংপুলে প্রগাঢ় ঠোঁটের গুঞ্জনে।