ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
একজন ভাল মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। বাংলাদেশের বুধবার মাঝরাতে (২৭ নভেম্বর ২০২০) হবিগঞ্জ শহরে দুরারোগ্য ক্যান্সার মরণব্যাধির সাথে যুদ্ধ করতে করতে সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্থ অধ্যাপক আব্বাস উদ্দিন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স সহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে তিনি শিক্ষকতায় যোগ দেন। শুরুতে নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাউথ কাশিমনগর হাইস্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন। কলেজটি সরকারি কলেজে উন্নীত হলে এখানেই আত্মীকৃত হন । তার পর থেকে এই কলেজ এবং হবিগঞ্জ শহর তাঁর আত্মার আত্মীয়ে পরিণত হয় । অবসর নেয়ার পর ও এই শহর থেকে নড়েননি । বৈধ ইমিগ্রেশনে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন কিন্তু গ্রীণকার্ড পেয়ে ও এদেশে থাকেননি। বোধকরি কলেজ আর খোয়াই নদীর আকর্ষণে নিরিবিলি পরিবেশে বাকি জীবন কাটানোর জন্যই দেশে ফিরে যান। তবে , নিউ জার্সিতে বসবাসরত তাঁর এক ছোট বোনের মতে মরহুম প্রফেসর আব্বাস উদ্দিন আহমেদে মাতৃভক্তি ছিল অসাধারণ এবং অনুকরণযোগ্য । এদেশে থেকে যাওয়ার কথা বল্লেই নাকি বৃদ্ধা মায়ের সেবা যত্ন বাদ দিয়ে এদেশে আরাম-আয়েসের জীবন করা তাঁর জন্য ধারনার বাইরে । ১৯৯৬ তে এদেশে আসার মাত্র ৪৮ দিন পর তাই এই নির্লোভ নিরহংকারী মায়ের স্নেহের কাঙ্গাল লোকটি অনেকের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা ছেড়ে চিরতরে দেশে চলে যান । দুই ছেলের জনক অধ্যাপক আব্বাস উদ্দিনের পিতা তুলসিপুর গ্রামের (মরহুম) আফসার উদ্দিন চৌমুহনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন । পরিবারটি শিক্ষাদীক্ষায় খুবই অগ্রসরয়ময় ছিল । বর্তমানে পরিবারের বেশীর ভাগ সদস্যই আমেরিকায় অবস্থান করছে । মৃত্যুর সময় ছোট ছেলে এবং বেগম আব্বাস উদ্দিন কাছে ছিলেন । আমার চেয়ে দু বছরের সিনিয়র ছিলেন ছাত্র জীবনে । আমার ধারনায় মৃত্যু কালে তাঁর বয়স ৭৭ বছরের মত হয়েছিল।
মরহুম আব্বাস উদ্দিন আহমেদের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। ১৯৬২ তে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করলে আমাকে সিলেট মুরারি চাঁদ কলেজে আই এস সি ক্লাসে ভরতি করানো হয়। দুষ্টুমিতে খুবই পাকা ছিলাম বিধায় আমাকে রাশভারী অভিভাবক তূল্য আব্বাস চাচার তিন নাম্বার হোস্টেলের (এক্সটেনশন) কক্ষে ভাই (ড.ফরাসউদ্দিন হোস্টেল সুপার অধ্যাপক ফজলুর রহমান স্যারকে অনুরোধ করে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁর এবং (মরহুম) সাদির মিয়ার স্নেহ ও শাষণে এক বছর ছিলাম । পরে মেন হোস্টেলে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম কারণ অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে খেলাধুলা এবং আড্ডায় মেতে থাকতে আর কোন বাধা রইলো না । আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে , হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী মিছিলে ছাত্র ইউনিয়নের পতাকাতলে সামিল হয়ে অধ্যয়ন জগতের বেস বাইরে চলে গেলাম । ফলত, আইসসি পরীক্ষায় টেনেটুনে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হই । ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এবড়ো আব্বাস চাচাকে এস এম হলে পাই । তিনি ইস্ট হাউসে আর আমি ওয়েস্ট হাউসে । ভাই তখন হলের ভিপি কিন্তু আমার স্বাধীনতা খর্ব করার তেমন চেষ্টা করেননি ।
মৃত্যুর মাস চারেক পূর্বে আমার সাথে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন আমার সম্পর্কিত এক নাতির কাছে । আমি তাঁর ছেলেকে ফোন করলে আবেগের আতিশয্যে পুরোনো স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে দুজনেই অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি । আমার বন্ধু হাই মেসেঞ্জারে অধ্যাপক আব্বাস উদ্দিন চাচার মৃত্যু সংবাদ জানালে খুব অবাক হয়নি কারণ কিছুদিন থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে খবর পাচ্ছিলাম । দোয়া করি আল্লাহ এই মহৎ প্রাণ মানুষটিকে বেহেশতে স্থান দিন এবং তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রী ও আত্মীয়স্বজনকে বিয়োগ ব্যথা সইবার ক্ষমতা দিন ।
Posted ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh