খসরু পারভেজ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
একটি রাজ্য জয় করে একজন যোগ্য নৃপতি তার অধিকৃত রাজ্যের অধিপতি হন। তেমনি একজন কবিকেও রাজ্য জয় করে তার অধিপতি হতে হয়। ‘মশলারাজ্য’ কাব্যগ্রন্থের সুযোগ্য অধিপতি কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। খাদ্য রান্নার জন্য যেমন উপাদেয় মশলার প্রয়োজন। তেমনি কবিতার জন্যও প্রয়োজন প্রচুর মাল-মশলার। কবিতার সেই সব মশলা হলো শব্দ, ছন্দ, অলংকার এবং কবির বোধ বা চেতনা।
একটি কবিতাকে যোগ্য কবিতা করে তুলতে হলে যে যে উপাদান দরকার, তা কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতায় রয়েছে। বাংলা কবিতায় যে তিনটি ছন্দ – অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত কবিরা ব্যবহার করে থাকেন আলোচ্য কবি সেই তিন ছন্দেই কবিতা লিখে থাকেন এবং তিনি প্রতিটি ছন্দেই পারদর্শী। এই তিনটি ছন্দের সাথে যুক্ত হয়েছে আরও একটি ছন্দ; সেটি হলো, হৃদ-ছন্দ। যে কথাটি আমি বারবার বলি। ভালো কবিতার জন্য শুধু প্রচলিত ছন্দ নয়, অন্তরের যে নিগূঢ় অনুভূতি, যে আন্তরিক অনুরণন, কবিতায় সেটির সংযোগ না ঘটলে প্রকৃত অর্থে ভালো কবিতা হয়ে ওঠে না। শক্তিমান কবি কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা ছন্দ ও অলংকারের যথার্থ প্রয়োগের পাশাপাশি হৃদ-ছন্দে পরিপূর্ণ।
কোনো কবিকে দশক বিভাজনে বিভক্ত করে চিহ্নিত করা যায় না। তবে একজন কবির উত্থানপর্বকে জানান দেয়ার জন্য কখনও প্রয়োজন হয় দশকের চিহ্নায়ন। সেই অর্থে কাজী জহিরুল ইসলাম আশির দশকের কবি। শুরু থেকেই বর্তমান সময় পযর্ন্ত কবিতায় সমানভাবে নিবেদিত। ক্রিয়াপদহীন কবিতা লিখে অনেক আগেই তিনি পাঠকের দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয়েছেন। মধ্যযুগে চণ্ডিদাসের ‘চৈতন্যরূপপ্রাপ্তি’ গ্রন্থে ক্রিয়াপদ বর্জিত গদ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু আমার জানা মতে ক্রিয়াপদ বর্জিত কবিতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম।
কবিতার সঙ্গে জীবনের নিগূঢ় সম্পর্ক বেশি, না মননের সম্পর্ক বেশি; এ নিয়ে মতানৈক্য থাকতে পারে। আমি বরাবরই মনে করি, মননকে ধারণ করে জীবন নয়; জীবনকে ধারণ করেই গড়ে ওঠে মননভূমি। জীবন থেকেই কবিতার উপাদান ও রসদ যোগাড় করতে হয়। এ-কারণে কবিতা নির্মাণ নয়, কবিতা সৃষ্টি। উৎকৃষ্ট কবিতার জন্য প্রয়োজন কবির গভীর জীবনবোধ, সেই সঙ্গে প্রয়োজন কুশলী শব্দের যথার্থ প্রয়োগ। কবির এই বোধ কখনও ইতিবাচক, কখনও নেতিবাচক; কখনও এই দুইকে অস্বীকার করে বৈপরীত্যে ভরা, বৈচিত্র্যময়। কবি কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা পাঠ করে আমার ভেতরে এই প্রতীতি জন্মেছে যে, কবিতা জীবনের অন্তর্গূঢ় অভিজ্ঞতার ফসল।
কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতায় জীবনের জটিলতা আছে, কিন্তু বোধের জটিলতা নেই। তিনি অনায়াসে কবিতা লিখতে পারেন। প্রতিটি কবিতাই যেন এক বৈঠকে লিখে শেষ করা। কবিতার এই স্বতঃস্ফূর্ত চলন, এই যে অনায়াসলব্ধতা, তা পাঠকের অন্তরে কবিতাকে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। খুব কম লিখে খ্যাতি অর্জন করা ইংরেজি সাহিত্যরে গুরুত্বপূর্ণ কবি আলফ্রেড হাইজম্যান যাকে বলেছেন স্বতোঃৎসারণ। কবিতা যে স্বাভাবিক নিঃসরণ, জহিরুলের কবিতা পাঠ করে তা দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
কাজী জহিরুল ইসলামের শিল্পবোধ প্রখর। ‘মশলারাজ্য’-গ্রন্থে তার শিল্পচেতনা তিনি এভাবেই তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। ১.রোজ রাতে একটি কলম ঠোঁট ঘষে তোমার খাতায়/ চুমুর চিহ্নেরা আঁধারে সাঁতার কেটে কেটে ঘুম ভাঙ্গায় শিল্পের; ২. কী-বোর্ডের বুতামে চাপ দিলেই একটি/অদৃশ্য পাখি ঠোকর দেয় স্ত্রিনে/ঠোকরাতে ঠোকরাতে স্ক্রিন রক্তাক্ত করে ফেলে সে/আঙুল বড়ো নির্মম শিল্পী।
শিল্প: জীবন তো একটি খসড়া খাতা। যেখানে ঘুমিয়ে থাকে জীবনের শিল্প। কবির স্পর্শে সেই শিল্প জেগে ওঠে, আঁধারের পর্দা ছিঁড়ে আলোর সামনে দাঁড়ায়; কখনও মূর্ত কখনো বিমূর্ত। আর যে অদৃশ্য পাখি জীবন নামের মনিটরের স্ক্রিনে ঠোকরাতে ঠোকরাতে রক্তাক্ত করে তোলে, সেই অদৃশ্য পাখি তো আমাদের নিয়তি! আর আঙুল তো আঙুল নয়, কবির মননশীলতা। যা নির্মম শিল্পী হয়ে কবির ভেতরটাকে মেলে ধরে পাঠকের সামনে।
জীবন ও সময়ের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত হয় কোনো কোনো কবিতা। কিন্তু কবি কি নিজেই লেখেন, না কেউ কবিকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেয়! নাকি কবিতা নিজেই কবিকে লেখে! কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতায় নিরীক্ষা আছে। তিনি বাস করেন বর্তমান বিশ্বের আলোচিত ল্যাঙ্গুয়েজ পোয়েট্রির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বিশ্বকবিতার পাঠক হয়েও বাংলা কবিতার যে আবহমান ধারা, সেটিকে বিসর্জন না দিয়ে, কবিতাকে শুধুমাত্র শব্দের চিত্ররূপ না ভেবে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যে কবিতাকে গেঁথেছেন নিবিড় ভাবে। আধুনিকতার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে, উত্তরাধুনিক কবিতার দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিহার না করে কবিতার গীতলতাকে উপস্থাপন করেছেন কুশলী কলমে। আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলা কবিতার অন্তর্নিহিত প্রাণস্পন্দন লুকিয়ে রয়েছে এই গীতিধর্মীতার মধ্যে। কবিতার যে অবাধ গদ্যধর্মীতা, সেটিকেও লালন করে চলেছেন খুব স্বার্থকতার সঙ্গে। কবিতায় লিরিকের স্মার্ট প্রেজেনটেশানের পাশাপাশি, গদ্যের কব্যিক উচ্চারণ, তাঁর চিত্রকল্পময় কাব্যভাষা, নান্দনিক বোধ আমাদের সময়ের কবিদের কবিতা থেকে তাঁর কবিতাকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে।
কাজী জহিরুল ইসলাম সময় সচেতন কবি। তার কবিতায় সমকাল প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত। প্রকৃতঅর্থে কবির মতো একজন অনুভূতিপ্রবণ মানুষের পক্ষে সমকালকে পরিহার করে শুধু কল্পনার জগতে বসবাস করা অসম্ভব। বিশেষ করে পুঁজিবাদী বিশ্বের এই উন্মাতাল সময়ে। আমরা জানি, এক বিপন্ন বিস্ময়ের ভেতর দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। করোনার মতো সামান্য একটি ভাইরাসের কাছে পরাজিত হয়েছে কত দম্ভ, কত আত্মঘোষিত পরাশক্তির। করোনা পৃথিবীর প্রতিটি দেশে, প্রতিটি মানুষের ভেতরে এনে দিয়েছে এক সীমাহীন অস্থিরতা। অন্ধকার যেন জাপটে ধরেছে আমাদের আগামীকে। করোনাকালে নব্য পুঁজিবাদের উত্থান ঘটেছে। মানুষের ভেতরে মৃত্যুভয়ের পাশাপাশি বেড়েছে অবিশ্বাস, অভাব, অবৈধ সম্পদ আহরণের প্রবণতা। তবুও মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে, একদিন কেটে যাবে এই দুঃসহ অন্ধকার। ‘মশলারাজ্য’-র প্রায় সব কবিতাই করোনাকালে রচিত। তাই এই দুর্বিনীত সময়ের ছাপ জটিল গ্রন্থির মতো কবির বিভিন্ন কবিতায় সুস্পষ্ট। যেমন : “এ এক অদ্ভুত জনসভা/আমারই অঙ্গপ্রত্যঙ্গরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা/ করছে নানান ভঙ্গিমায়/ একমাত্র এবং বেশ গুরুত্বপূর্ণ দর্শক আমি/বসে আছি হেমন্তের শূন্য গ্যালারিতে।”
কাজী জহিরুল ইসলাম প্রবাসী। কবি কেন প্রবাসী? কেন তিনি মায়াবী স্বদেশ ছেড়ে দূরদেশে? কবি ‘গল্পের ক্ষুধা’ কবিতায় তুলে ধরেছেন সেই রহস্য। শৈশবে পিতার মুখে গল্প শুনেছেন, কিন্তু সেই গল্পে কোনো প্লট ছিল না। পিতামহ গল্পের প্লট রেখে গেলে সেখানে আবাদ হতে পারতো সুস্বাদু গল্পের বাগান। গল্পের ক্ষুধায় কেটেছে কবির শৈশব- কৈশোর। কবি তার অনাগত সন্তানদের জন্য গল্পের প্লট রেখে যেতে চান।
এই কাব্যগ্রন্থের অনেক কবিতাই এমনি করে তার ফেলে আসা দিনগুলোর কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতিতে অনুরণিত, যেটা আগেই বলেছি। কাজী জহিরুল ইসলাম শুধু একা নন। আমরা দেখব, যারা স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করছেন, তাদের সবারই কবিতায় স্বদেশের মুখ মূর্তিমান। এই কাব্যের অধিকাংশ কবিতায় উঠে এসেছে গ্রাম বাংলা, বাংলার প্রকৃতি। বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম খাঁটি দেশপ্রেমিক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে বসে লিখেছিলেন বাংলার প্রকৃতি তথা জন্মভূমির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসাময় সব অনন্য চতুর্দশপদী কবিতা। বাংলার ভাষা, জন্মভূমির নদী, বৃক্ষ, পাখি, ফুল, ঋতুবৈচিত্র্য, পার্বন কত নিবিড়ভাবে মূর্ত হয়ে আছে তাঁর কবিতায়। জহিরুল মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো স্বদেশকে বুকের ভেতর করে নিয়ে বিদেশে গেছেন। প্রবাসে বসে তাই তিনি তার দেশ, গ্রামকে ভালোবাসার কথা এত নিবিড়ভাবে বলতে পেরেছেন। তিনি যখন ‘জন্মগ্রাম’ কবিতায় বলেন: “কুয়াশার জল কাদা দুই পায়ে মেখে/কালের কুটুম যায় পদছাপ রেখে।”তখন সহজেই বুঝতে পারি – এই পদচিহ্ন কবির বুকের ভেতর, রক্তের ভেতর রেখে যাওয়া স্বজনের পদচিহ্ন।
কাজী জহিরুলের কবিতায় উঠে এসেছে পল্লী জননীর রূপশ্রী। কবিতায় বুনে দেওয়া গ্রামীণ শব্দ, শব্দবন্ধ সবই আমাদের চিরচেনা। কি নেই তার কবিতায়! প্রকৃতি-বৃক্ষকে অনুষঙ্গ করে এই কাব্যে আছে কবির অনেক শব্দ-শব্দবন্ধ, শব্দচিত্র, চিত্রকল্পময় পঙক্তি। যেমন: বনসাই, হলুদ পাতা, আম, জাম, লিচু, ঔষধি গাছ, ভোরের টবে সোনালী ফুল, পত্র, পুষ্প, পাখির গান, চির হরিৎ গৃহে পাখিদের ছড়াতে থাকা সুমাত্রা দ্বীপের ঘ্রাণ, স্থির-মজবুত-অনড় বৃক্ষের মতো বহুদিনের চেনা ব্যক্তিটি, রোদের সুবর্ণ ডাল, বৃক্ষদের ডাণ্ডা বেড়ি, বাতাসে দুলে দুলে আদরে শীতকে ডাকা শূন্য ডালপালা, হাওয়ার কানে কানে নিবিড় বনভূমির কথা বলা, বৃক্ষের শাখায় বেঁচে থাকা স্বপ্ন, ঝরাপাতার গান, টিনের চালে পাতা পড়ার শব্দ, জলজ উদ্ভিদ, ভোরের আদুরে নরম রোদের খিলখিল হাসি, বৃক্ষের বিশাল কাণ্ডে কান পেতে রাখা, বুকের অরণ্যে চুম্বন, বৃক্ষ শাখা থেকে হ্যাচকা টানে টেবিল ফোনের রিসিভার তুলে নেওয়া, আলবার্টার অরণ্যে হাত পাতা, বনপোড়া শ্বাপদ, পাতার নিচে ছুটে চলা ভালোবাসার বিরতিবিহীন ছোট্ট গাড়ি, বয়সের বৃক্ষরা, বৃক্ষের দৃষ্টি বিভ্রাট, বৃক্ষের ক্ষুধা, কষ্টের হলুদ পাতা প্রভৃতি।
কাজী জহিরুল ইসলামের ‘মশলারাজ্য’ আমাদের জাতিসত্তা ছুঁয়ে যাওয়া, আমাদের মৃত্তিকা-ঘনিষ্ট একটি উজ্জ্বল সৃষ্টি। এই গ্রন্থে কবি অন্যায়, অবিচার, নৈরাজ্য, ধর্ষণের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। এখানে যেমন আছে তার অসুস্থ স্ত্রীকে উইনথর্প হাসপাতালে ভর্তি করার পর উদ্বিগ্ন চিত্তের আকুতি, ভালোবাসার হৃদয়স্পর্শী কবিতা ‘মধ্যরাতের অ্যাম্বুলেন্স’, তেমনি আছে ‘চেয়ার’ এর মতো রাজনৈতিক চিন্তার কবিতা, প্রতিবাদী কবিতা। আছে ‘সিঁড়ির গল্প’ কবিতার মতো মনস্তাত্ত্বিক কবিতা, ‘আফ্রিকা’র মতো সংহতির কবিতা। আছে প্রতিবাদী গান, হাইকু। প্রতিটি কবিতা এক ভিন্ন দ্যােতনা নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়। কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা চিত্রকল্পে সমৃদ্ধ। এর আগে বৃক্ষের প্রসঙ্গে তার চিত্রকল্পময়তার কথা উল্লেখ করেছি। তিনি হয়তো এজরা পাউন্ড-লাওয়েলদের মতো মনে করেন ‘চিত্রকল্পই কবিতা’। এজন্য তার কবিতায় চিত্রকল্পের এত বিস্তৃতি।
যখন তিনি বলেন, ‘ডানার পেন্সিলে গল্প লিখে রাখে হেমন্তের তাবিজ’, তখন চিত্রকল্পের ছোঁয়ায় পাঠকমন উদ্বেলিত হয়। তেমনি ‘লেবু পাতায় ভোরের এক কোয়া আদুরে নরোম রোদ হাসছিল খিলখিল করে’; ‘নিষিদ্ধ অন্ধকারের গল্পগুলো মার্বেলের মতো’; ‘অন্ধকার তুলে দেবো ঘাটে বাঁধা দূরের জাহাজে’; ‘অস্ত্রের গর্জন এখনও বুকের অরণ্য চুম্বন’; ‘দ্রাক্ষারসের বোতল জিভ উল্টে ধুলোয় গড়ায়’ – কী চমৎকার সব চিত্রকল্প। আরও আছে, যেমন ‘চোখের কোটরে অন্ধকূপ’; চশমাটা পড়েই চুমুক দেয় আমার চোখের রোদে’; ‘বনপোড়া শ্বাপদ ফুটুক প্রকাশ্যে তোমার দেহের বাগানে’; ‘গ্রন্থের গভীরে ঝড়’; ‘জীবন্ত সত্যের মতো ভাসে সিন্ধুকে লুকানো পাপ’; ‘চোখ বুঁজে দেখি কামজ্বরে কাঁপে চঞ্চলা হরিণী’; ‘ভার্চুয়াল বেহেশত যদিও অধরা, তবুও স্পর্শের নাগালে ওদের হাসে কী এক মোহের অজগর’; ‘আমিষ নারীর মুখে ফুটছে বিজ্ঞাপনের পপকর্ন’; ‘নুনের ভালোবাসায় ঝাঁপসা হয়ে যায় তোমার লেখাগুলো’; ‘অন্ধকারের ভেতরে কেউ কী ছিটিয়ে দিয়েছে আলোর উজ্জ্বল থুতু’; ‘অভিবাসী চুলোয় গল্পের স্যুপ রান্না করেছি শীতের রাতে’। এমনি করে উপমা, উৎপ্রেক্ষাসহ কবির কবিতা থেকে অনেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা সম্ভব। কাজী জহিরুল ইসলাম কবিতা লেখার পাশাপাশি চমৎকার ছবিও আঁকেন। এ-কারণেই জীবনের রঙ আর বোধের তুলিতে এমনি করে আঁকতে পেরেছেন অসাধারণ সব কাব্যচিত্র।
‘মশলারাজ্য’ কাজী জহিরুল ইসলামের ছাব্বিশতম কাব্যগ্রন্থ। এ যেন তার পরিণত জীবনের একটি সার্থক এন্থোলজি। কবির এই এন্থোলজি পাঠের যে আনন্দ তা বহুদিন আমি উপভোগ করবো, এটা বলতে পারি।
[মশলারাজ্য ।। কাজী জহিরুল ইসলাম ।। প্রকাশক: মিসিশিপির মেঘ, কলকাতা ।। প্রকাশকাল: জুলাই ২০২১ ।। প্রচ্ছদশিল্পীঃ রাগীব আহসান]
খসরু পারভেজ : কবি, প্রাবন্ধিক
Posted ৭:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh