সেতারা কবির সেতু | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
আইসবার্গ থিওরী হল মার্কিন সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উদ্ভাবিত লেখার কৌশল। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ২১ জুলাই,১৮৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। যেহেতু তিনি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন লেখতেন তাই কোন ঘটনা ঘটার পর পরই তাকে লেখতে হতো। যেখানে অল্প কথার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুলে ধরা হতো। তাই হেমিংওয়ে কোন বিষয়ের বিশদ ব্যাখ্যায় না গিয়ে অল্প কথার মাধ্যমে বিষয়টির গভীরতা তুলে ধরতেন। এক্ষেত্রে তিনি আইসবার্গ তত্ত্বটি ব্যবহার করতেন। হেমিংওয়ে ১৯৫৩ সালে কথা সাহিত্যে পুলিৎজার পুরুস্কার পান। ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গল্পটির লেখক তিনি। গল্পটি ছিল এমনঃ
`For sale. baby shoes. Never worn.’
গল্পটির বাংলা অনুবাদঃ
‘বিক্রির জন্য। শিশুর জুতা। ব্যবহৃত নয়।’
গল্পটির মধ্যে কিন্তু একটি অর্থ লুকিয়ে আছে। তা আমাদের বুঝে নিতে হবে।
বাচ্চার জন্য জুতা কেনা হয়েছিল কিন্তু সেই বাচ্চা পৃথিবীতেই আসেনি। মাত্র ৬ টি শব্দ ব্যবহার করে একজন লেখক কতো আবেগ দিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
একজন মা যখন তার গর্ভে সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করে তখনই সেই অনাগত সন্তানকে নিয়ে মায়ের কতো ভালোবাসা,আবেগ,কল্পনা রচিত হয়। কিন্তু সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই যদি চলে যায় তাহলে সেই মায়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এখানে লেখক মাত্র ৬ টি শব্দ ব্যবহার করে সেই গভীর অনুভূতি তুলে ধরেছেন। লেখক পাঠককে বুঝিয়ে দিয়েছেন কোন বিষয়ের গভীরতা উপলব্ধি করার জন্য বিশাল লেখার প্রয়োজন নেয়। অল্প কথার মাধ্যমেও গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। লেখক এখানে আইসবার্গ তত্ত্বটির সাহায্য নিয়ে গল্পটির গভীরতা প্রকাশ করেছেন।
সাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অনেক রচনায় আইসবার্গ তত্ত্বটি ব্যবহার করেছেন। লেখকের ‘সাদা বাড়ি ‘বইটি পড়লে আমরা সহজেই তা বুঝতে পারি।
আইসবার্গ থিওরী আসলে কি?
সাধারণত কোন জিনিস বা বিষয়ের গভীরে না গিয়ে ভাসাভাসা তথ্যের উপর ভিত্তি করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিংবা বলা যেতে পারে যথেষ্ট তথ্য ছাড়াই যে থিওরি ডেভেলপ করা হয় সেটাই আইসবার্গ থিওরি।
একটি বরফ খন্ডের ১০০ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ সমুদ্র পৃষ্ঠের ওপরে থাকে। বাকি ৯৫ ভাগ সমুদ্র পৃষ্ঠের নিচে থাকে। অধিকাংশ মানুষই সমুদ্র পৃষ্ঠের ওপরের এই ৫ ভাগকেই সমগ্র বরফখন্ড হিসেবে ভেবে নেন। এবং ভুলে যান যে এর বেশিরভাগ অংশই অদৃশ্য। একেই বলা হয় আইসবার্গ তত্ত্ব।
উদাহরণঃ
বিশ্বে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানান ঘটনা। অধিকাংশ ঘটনা সম্পর্কেই মানুষ তেমন কোন জ্ঞান রাখে না। তারপরও সেসকল বিষয় নিয়ে মানুষ বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করে থাকে। বর্তমানে এই প্রবনতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষ কোন বিষয় নিয়ে ভালোভাবে না জেনেই সেটা ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। এভাবে বিভিন্ন মিথ্যা বা আংশিক সত্য ঘটনাগুলো মানুষ জোড়ালো ভাবে বিশ্বাস করছে।
কিছুদিন আগেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশ দাবি করেছিল উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন মারা গেছে। এই বিষয়টি নিয়ে সকলের কতো লেখালেখি, কতো মন্তব্য। কিন্তু কেও সঠিক তথ্যটি জানতো না। কিছুদিন পরই মানুষ জানতে পারে তাদের ধারনা ভুল। এ রকম অনেক ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
বিশ্বের কথা বাদ দেন। আমাদের দেশের দিকে তাকালেই দেখা যায়,বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভালোভাবে না জেনে, না শুনে কতো চুলছেড়া বিশ্লেষণ আমরা করি। কিছুদিন আগে একটি কথা ছড়িয়েছিল যে,পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে। তাই বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মানুষ সঠিকভাবে বা সম্পূর্ণ বিষয়টি না জেনে কিভাবে বিষয়টি প্রচার এবং বিশ্বাস করেছিল তা আমরা সকলেই জানি।
বিশ্ব রাজনীতিতে দেখা যায়, কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যখন জাতিসংঘ বা বিশ্ব নেতারা মতামত দেন। অথবা কঠোর কোন সিদ্ধান্ত নেন। তখন ভুক্তভোগী দেশের নেতাদের আমরা বলতে শুনি আইসবার্গ তত্ত্বের ভিত্তিতে বিশ্ব নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইসবার্গ তত্ত্বটি সাহিত্য ছাড়াও বর্তমানে রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
Posted ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh