মোহাম্মদ আজাদ: | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেট ব্র্যাড রাফেনস্পারগার এর মধ্যে এক ফোনালাপ ফাঁস হয়ে গেছে গত রোববার । এখন এই ফোনকল নিয়ে সর্বত্র হৈচৈ চলছে ও ট্ক অফ দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সর্বত্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেচে। রিপাবলিকান নীতি নির্ধারকরা নিরব ও অনেকটা বাকরুদ্ধ। অনেকেই মুখ খুলছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আইনজ্ঞরা বলছেন এটা একটি ক্রিমিনাল অপরাধ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটা নিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে এফবিআই। রাজনৈতিক সমালোচকরা বলছেন যে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারীর সাথে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পে টেলিফোন খেলেঙ্কারী ফাঁস করলো একই ওয়াশিংটন পোষ্ট। ১৯৭৪ সালের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারী ফাঁস করেছিলেন ওই সময়ে ওয়াশিংটন পোষ্টের অনুসন্ধানী রিপোর্টার কার্ল ব্রার্ণষ্টিন ও বব উডওয়ার্ড। ২০২১ সালে ট্রাম্পের টেলিফোন কেলেঙ্কারী ফাঁস করেছে ওয়াশিংটন পোষ্টের এমি গার্ডনার।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর কমপক্ষে ২৮বার হোয়াইট হাউজ থেকে জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেটকে ফোন করেছেন, যার উদ্দেশ্য ছিল জর্জিয়ার আইন প্রনেতাদের ব্যবহার করে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করে নিজের অনুকূলে আনা। গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেট ব্র্যাড রাফেনস্পারগারের সাথে কথা বলেন। তাদের কথোপকথন স্থায়ী ছিল এক ঘন্টা দুই মিনিট সাত সেকেন্ড। এই কথোপকথনে শোনা যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেকে অনুরোধ, চাপ সৃষ্টি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ভোটের ফলাফল নিজের অনুকূলে আদায় করার চেষ্টা করছেন। গত রোববার ওয়াশিংটন পোষ্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রাফেনস্পারগারের ফোনালাপ ফাঁস করেছে। এ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর পুরো দেশে এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। রাজনৈতিক সমালোচক ও ক্রিমিনাল আইনবিদরা এই অবৈধ ফোনকলকে গর্হিত, অন্যায়, অসাংবিধানিক ও ক্রিমিনাল অ্যাক্ট বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন।
অনেকেই এখনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদত্যাগ দাবী করছেন। তারা বলছেন, ২০ জানুয়ারী প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার আর কোন অধিকার নেই। তাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। ওয়াটারগেট খ্যাত বিখ্যাত সাংবাদিক কার্ল ব্রানস্টিন গত সোমবার এ প্রসঙ্গে সিএনএনকে বলেছেন, এটি ওয়াটারগেটের চেয়ে নোংরা ও ভয়াবহ। তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রেসিডেন্ট একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট চুরি করার কথা বলেছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট এখনই পদত্যাগ করতে হবে। ২০ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই।
পেলিফোন কলে ট্রাম্পকে জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেট রাফেনস্পাগারকে বলতে শোনা গেছে, ‘জর্জিয়ার জনগণ ক্ষুব্ধ, এদেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। এখানে দোষের কিছু নেই যদি আপনি ভোটগুলো পুন:নির্ধারণ করেন।’ উত্তরে রাফেনস্পারগার বলেন, ভাল কথা মিষ্টার প্রেসিডেন্ট, আপনার যে চ্যালেঞ্জ ও ডাটা রয়েছে তা ভুল।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার বলেন, ‘তাহলে আমি যেটা চাই আপনি তা করুন। আমাকে ১১,৭৮০ ভোট পেতে সাহায্য করুন।
তাহলে আমরা যা পেয়েছি তার চেয়ে একটি ভোট বেশি হবে। কারণ আমরা জয়ী হয়েছি।’ উল্লেখ্য, জো বাইডেন জর্জিয়ায় ১১,৭৭৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েচেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাপ সৃষ্টি করে জর্জিয়ার ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করে তার অনুকূলে ১১,৭৮০টি ভোটের ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ জানান। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝতে পারেন যে তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, তখন ট্রাম্প বলেন, আমার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে আপনাকে একজন ক্রিমিনাল হিসেবে ধরা হতে পারে। এক পর্যায়ে ট্রাম্প ভীতি প্রদর্শন করে বলেন, আপনি বড় ধরনের একটি ঝুঁকি গ্রহণ করছেন।’ পরে প্রেসিডেন্টকে আরো বলতে শোনা যায়, তাহলে এখানে আমরা কি করতে যাচ্ছি? আমার শুধু প্রয়োজন ১১,০০০ ভোট। দেখুন আমার শুধু প্রয়োজন ১১,০০০ ভোট। আমাকে একটু শান্তি দিন।’ এরপর প্রেসিডেন্ট আবারও বলেন, ‘আমি কোনভাবেই জর্জিয়ায় হারতে পারি না- কোনভাবেই না। আমরা একশ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছি।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনকলের পর রাফেনস্পারগার তার ও অফিস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে জানান হয় যে প্রেসিন্টে একটি ষড়যন্ত্র করছেন। জর্জিয়ায় জো বাইডেন ১১,৭৭৯ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বাইডেনের জয় সুন্দর ও সঠিক। গত রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটারে বলেন, ‘আমি জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেট ব্র্যাড রাফেনস্পারগারের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে অনিচ্ছুক বা অসমর্থ ছিলেন। যা ছিল ব্যালটে অনিয়ম, ব্যালট নষ্ট করা, মৃত ব্যক্তির ভোট দানসহ আরো অনেক কিছু। তিনি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন।’ পরক্ষণে জর্জিয়ার সেক্রেটারী অফ ষ্টেট পাল্টা টুইটার বার্তায় বলেন, ‘শ্রদ্ধার সাথে বলছি মিষ্টার প্রেসিডেন্ট, আপনি যা বলেছেন তা সত্য নয়।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অবৈধ ফোনকল নিয়ে শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে যে এই ফোনকলের একটি ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন হওয়া প্রয়োজন। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বলেন, এটি ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার। জো বাইডেনের ক্যাম্পেইনের প্রধান আইনজীবী বর বিউয়ার বলেছেন, এটি একটি অবর্ণনীয় কাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতি চরম আঘাত।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টেলিফোন কেলেঙ্কারী নিয়ে রিপাবলিকান শিবির অনেকটা নিরব। টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজকে এ নিয়ে মন্তব্য করার জন্য বলা হলে তিনি প্রসঙ্গটি নিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিষ্টি বলেন, ‘দেখুন আমি ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলাম। ২০২০ সালের নির্বাচনেও তাকে সমর্থন করেছি। আমি মনে করি নির্বাচন শেষ। জো বাইডেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। টেলিফোন কেলেঙ্কারী নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাবেক গভর্নর বলেন, পুরো ব্যাপারটি হয়তো ক্রিমিনাল পর্যায়ে যাবে না, কিন্তু প্রেসিডেন্ট যা করেছেন তা সঠিক ছিল না। ক্রিমিনাল আইনজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট যা করেছেন তা ফেডারেল ও স্টেট আইনের পরিপন্থী। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের প্রফেসর রিচার্ড পিল্ডস বলেন, টেলিফোনে এ ধরনের কথোপকথনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পর্বতসম ফেডারেল আইন ভঙ্গ করেছেনসাবেক ডিফেন্স সেক্রেটারী উইলিয়াম কোয়েন বলেন, এটি নতুন কিছু নয়, প্রেসিডেন্ট প্রাম্প প্রতিনিয়ত নিয়ম ভঙ্গ করে চলেছেন। পুরো ব্যাপারটি একটি অপরাধমূলক কাজ।
Posted ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh